শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন

আজ থেকে শুরু চৌগাছার বলুহ মেলা, চলবে ১০ দিন

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) ।
  • Update Time : সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ২০৮ Time View

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : আজ মঙ্গলবার ১২ সেপ্টম্বর থেকে শুরু হচ্ছে যশোরের চৌগাছায় ঐতিহ্যবাহী বলুহ মেলা। চলবে ১০ দিন আগামী ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যশোর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে সোমবার রাতে এই অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। মেলার অনুমতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির সভাপতি শাহিনুর রহমান।

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জানান, ঐতিহ্যবাহী বলুহ মেলা কেবল মাত্র এ জনপদের মানুষের মেলা নয়। দেশ ও দেশের বাইরে এ মেলার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। প্রতিবছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার এ মেলা শুরু হয়। মেলা শুরুর মাস খানিক আগে থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যাবসায়ীরা আসতে শুরু করেন। কোন রকম প্রচার বা মাইকিং ছাড়াই ৭/৮ দিন আগে থেকে শুরু হয়ে যায় মেলা। চলে ১৫/২০ দিন।

এবছর জাকজমক পূর্ণভাবে মেলা বসবে বলে এলাকাবাসির প্রত্যাশা। উপজেলার বুকচিরে বয়ে চলা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের তীরে নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামে এ এলাকার বিখ্যাত পীর বলু দেওয়ানের মাজারশরীফকে ঘিরে বসে এ মেলা। হাজরাখানা গ্রামে নদের পশ্চিম তীরে উঁচু ঢিবিতে অবস্থিত এ অঞ্চলের বিখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (র.) এই পীরের রওজা শরীফ। এ রওজা শরীফকে ঘিরে প্রতি বছর বাংলা সনের ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার শুরু হয় ওরশ ও মেলা। মেলাতে ঢল নামে দেশের বিভিন্ন জেলার সাধারণ ব্যবসায়ীদের।

ফরিদপুর জেলা থেকে পীরের রওজা শরীফে আসা লুৎফর রহমান জানান, কোন প্রচার প্রচারণা ছাড়াই ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার এলেই আমরা ভক্তরা বলুর রওজা শরিফে চলে আসি চলে ওরশ। যুগযুগ ধরে এই ওরশের পাশাপাশি চলে আসছে বলুর মেলা। ভাদ্র মাসের ১৫ দিন থাকতে এলাকার মেয়ে জামাইরা বাপের বাড়ীতে আসতে শুরু করে। বয়ে চলে আনন্দের ফুয়ারা। উপজেলা জুড়ে শুরু হয় মেলার আনন্দ। মেলায় বসে হরেক রকমের দোকান পাশারী, এরমধ্যে কাঠের তৈরি ফার্নিচার, অটোবি, স্টীল ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা চোখে পড়ার মত।

হাজরাখানা গ্রামের ইউপি সদস্য ও মেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক মনিরজ্জামান মিলন বলেন, পীর বলুহ কেবল মাত্র আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য নয় তিনি আমাদের দেশের গৌরব। বংশপরস্পরায় যুগযুগ ধরে এই পীরের রওজা শরীফকে ঘিরে ওরশ ও মেলা চলে আসছে। নিদিষ্ট কোন জায়গা না থাকায় রওজা থেকে শুরু করে গ্রামের মধ্যে পড়ে থাকা মালিকানা জমি ও রাস্তার দু ধারে বসে মেলার দোকান পাশারি।

একই গ্রামের গোলাম হোসেন বলেন, মুলত পীরের রওজাকে ঘিরে ওরশ ও মেলা বসে। এই মেলার পরিচিতি দেশের গন্ডিপেরিয়ে বিদেশেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। স্থানীয় কিছু মানুষের কারণে এ মেলাতে গেল কবছর বিভিন্ন ধরনের অশ্লীলতা হয়েছে। গ্রামের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ গুলো হয়েছে। তবে এবছর কোন ধরনের অশ্লীলতা আমরা হতে দেব না। এ বছর নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন ও হাজরাখানা গ্রামের সমাজসেবক আবুল হোসেন ও ইউপি সদস্য মনিরজ্জামান মিলনসহ গ্রামের সবাই মেলার অশ্লীলতা প্রতিহত করতে একাট্রা হয়েছেন। ফলে এবার মেলার পরিবেশ নষ্ট হতে দেওয়া হবে না।

যাকে ঘিরে এতো কিছু সেই পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ) স¤পর্কে এলাকায় ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। বয়ষ্করা জানান, পীর বলুহ দেওয়ান (র.) এর জন্ম সাল বা তারিখ কারো জানা নেই। তবে তার জন্ম ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বড় ধোপাদি গ্রামে, তার পিতার নাম ছুটি বিশ্বাস। চরম দারিদ্রতার সংসারে জন্ম নেয়া বলুহ খুব ছোট বেলায় হাজরাখানা গ্রামে মামার বাড়িতে চলে আসেন। বলুহর মামারাও গরীব ছিলেন। তাই বলুহ মামার বাড়ীতে থেকে অন্যের বাড়িতে ও ক্ষেত খামারে কাজ করতেন। একদিন বাড়ি ওয়ালা বলুহকে বেদন বিলের মাঠে গরু চরাতে বলেন, বলুহ গরু মাঠে নিয়ে অন্যের ফসলের ক্ষেতে ছেড়ে গাছের নিচে বিশ্রাম করছিলো।

ক্ষেত মালিক এসে গরুগুলো খোয়াড়ে নেয়ার জন্য রওনা হয়। বলুহ তখন গরু গুলো বক বানিয়ে গাছের উপর বসিয়ে রাখেন। একদিন খেজুরের গুড় জ্বালাতে বললে তিনি জলন্ত চুলায় খড়ি না দিয়ে নিজের একটি পা ঢুকিয়ে দেন, এক দিন তাকে শরীষা মাড়ায় করতে বললে শরীষার গাদায় আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে ছায় করে দেন। পরে তাকে বকা-ঝকা করলে তিনি ছায় বাতাসে উড়িয়ে শরীষা বের করে দেন। এ ধরনের অসংখ্য অলৌকিক কিংবদন্তি রয়েছে তাকে ঘিরে। যে কারণে তিনি পীর উপাধি পান। তার মৃত্যুর পর হাজরাখানা গ্রামে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে যুগযুগ ধরে বলুহর রওজাকেঘিরে বসে মেলা, যার নামকরণ করা হয় বলুহ মেলা। এ ছাড়া তার জন্মস্থান ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জউপজেলার বড় ধোপাদি গ্রামে রয়েছে তার একটি মাজার ও চৌগাছা পৌর এলাকার বেলেমাঠ গ্রামেও তার আরএকটি মাজার রয়েছে। প্রতি বছর এই দুই মাজারেও মেলা বসে হয় ওরশ।

এ বিষয়ে বলুহ মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাজরাখানা গ্রামের বাসিন্দা ইউপি চেয়াম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, বেশকটি শর্ত সাপেক্ষে প্রশাসনের পক্ষ হতে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চলবে ১০দিন। এ বছর মেলায় কোন ধরনের অশ্লীলতা আমরা হতে দেব না। গ্রামসহ এলাকার সবাই মেলার অশ্লীলতা প্রতিহত করতে একাট্রা হয়েছি। ফলে এবার মেলার পরিবেশ নষ্ট হতে দেওয়া হবে না। মেলায় আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/রাত ৯:২৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2023
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit