ডেস্ক নিউজ : রঞ্জু-রুপা দম্পতির পাঁচ মাস বয়সী ছেলে রিদওয়ান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ১৭ দিন আগে। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই অপহরণের শিকার হয় তাদের বড় মেয়ে সামিয়া (৯)। দুর্বৃত্তরা ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অডিও বার্তা পাঠায়। দুদিন পর বাড়ির পাশেই মাটি খুঁড়ে পাওয়া যায় সামিয়ার গলাকাটা লাশ।
১৭ দিনের ব্যবধানে দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় এই দম্পতি। শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকাজুড়ে।
রঞ্জু মিয়া ও রুপা আক্তারের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামে। গত শুক্রবার দুপুরে দাড়িয়াপুর গ্রামের বনের ভেতর একটি ড্রেন থেকে সামিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে দাড়িয়াপুর উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে সামিয়ার লাশ বাড়িতে আনা হয়। রাতেই তার দাফন সম্পন্ন হয়।
এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত হয়ে সামিয়ার মা-বাবাকে সান্ত্বনা দেন। তিনি সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করার সময় বেঁধে দেন।
এর আগে দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলম ওই বাড়িতে গিয়ে রঞ্জু-রুপা দম্পতিকে সমবেদনা জানান।
রঞ্জু মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সবাই আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু আমি তো সান্ত্বনা নিতে পারছি না। আমি তো শান্ত হতে পারছি না।’
কারা সামিয়াকে অপহরণ করে হত্যা করতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এলাকায় মাদকসেবী বেড়ে গেছে। আমার ধারণা, মাদকসেবীরা আমার মেয়েকে বনের ভেতর ধরে নিয়ে খুন করেছে। যারা আমার মেয়েকে খুন করেছে, আমি তাদের শাস্তি চাই’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের এক শিক্ষক বলেন, সখীপুরের প্রতিটি গ্রামগঞ্জ মাদকে ছেয়ে গেছে। চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ এসব অপরাধের পেছনে রয়েছে মাদক। মাদক নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল না করতে পারলে সমাজে এসব অপরাধ চলতেই থাকবে। সবার একই কথা এলাকার মাদকসেবীরাই এমন ন্যক্কারজনক ও লোমহর্ষক ঘটনা ঘটিয়েছে।
পুলিশ ও সামিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ৭টায় ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সরকারের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। প্রাইভেট পড়া শেষ হলে সহপাঠীদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার উদ্দেশে বের হয়।
পথে একটি দোকানে সহপাঠীরা কেনাকাটা করতে দাঁড়ালে সে একাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়।
এদিকে, বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় মা রুপা বেগম শিক্ষককে ফোন দিয়ে জানতে পারেন তার মেয়ে অনেক আগেই চলে গেছে। পরে মা মেয়েকে খুঁজতে বের হলে বাড়ির কাছাকাছি একটি স্থানে মেয়ের ব্যবহৃত জুতা পড়ে থাকতে দেখেন। এর কিছুক্ষণ পর তার মোবাইল ফোনে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি অডিও বার্তা আসে। ওই অডিও বার্তা পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর পুলিশ বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বনের ভেতর একটি ড্রেন থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।
দাড়িয়াপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সোহেল রানা বলেন, এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা পুলিশকে আগেই দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পরও পুলিশকে ১০ থেকে ১২ জন মাদকসেবীর নাম দেওয়া হয়েছে।
সখীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সালাউদ্দিন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা মেয়েটিকে হত্যা করার পর বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একটি অডিও বার্তা দেয়। এত অল্প সময়ে লাশ এমনভাবে পচে যাওয়ার কথা নয়। উদ্ধার হওয়া গলাকাটা, এক চোখ উপড়ে ফেলা লাশের ধরন দেখে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবছে। মাদকসেবীদের নজরে রেখে তদন্ত চলছে। অপরাধীরা শিগগিরই ধরা পড়বে।
কিউএনবি/অনিমা/১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/রাত ১০:৩৭