ডেস্ক নিউজ : আল্লাহতায়ালা মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষা ও নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণে বৈধ মিলনের জন্য বিয়ের বিধান দিয়েছেন। তাদের একসঙ্গে জীবনযাপন ও বংশীয় ধারা জারির জন্য চাই শরিয়ত সমর্থিত বিয়ে। ইসলামে বিয়ে এক পবিত্র বন্ধন। নারী-পুরুষ মিলনের হালাল পদ্ধতি। বিয়ে-বহির্ভূত নারী-পুরুষ একসঙ্গে জীবনযাপন করা হারাম। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর তোমার প্রতিপালক হলো প্রভূত ক্ষমতাবান।’ সুরা ফুরকান : ৫৪
ইসলামে মানুষের কাছে বিয়ের বার্তা পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। বিয়ের বার্তা আশপাশের মানুষকে জানানো আবশ্যকীয় কর্তব্য। মানুষ যেন তাদের সম্পর্কে স্বচ্ছ সুন্দর ধারণা রাখে। তাদের জন্য বরকতের দোয়া করে। বিয়েতে সমর্থ তরুণরা যেন উদ্বুদ্ধ হয়। বিয়ের জন্য মন আগ্রহী হয়। অভিভাবক সচেতন হয়ে সন্তানের নির্মল ভবিষ্যতে সজাগ হয়।
বিয়ের ঘোষণা
নবী মুহাম্মদ (সা.) বিয়ের ঘোষণা দেওয়ার ব্যাপারে খুবই গুরুত্বারোপ করেছেন। বিয়ের প্রচার করতে আদেশ করেছেন। বর-কনের অভিভাবক তাদের নাম ধরে বিয়ের ঘোষণা করবে। মসজিদে সমবেত মুসল্লি ও স্থানীয় মানুষের জটলার সামনে বর-কনের বিয়ের বার্তা পৌঁছাবে। মুক্তকণ্ঠে ঘোষণা করবে। শরিয়তসমর্থিত বাদ্য বাজাবে। হাদিসে ‘দফে’র কথা এসেছে। দফ হচ্ছে যার ওপরের অংশ চালুনির মতো, যাতে ঘণ্টির মতো আওয়াজ নেই, আর তার একাংশে থাকে চামড়ার পর্দা। যারা সরাসরি আরবে দফ দেখেছেন, তাদের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, দফের একপাশ খোলা। সেটি বাজালে ‘ঢ্যাব ঢ্যাব’ আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হয়। কিন্তু কোনো ধরনের অশ্লীল গান-বাদ্য বাজানো যাবে না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা বিয়ে প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে মসজিদে সম্পাদন করো এবং তাতে দফ বাজাও।’ মিশকাতুল মাসাবিহ : ৩০১৭
আরেক হাদিসে আছে, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘(বিয়েতে) দফ বাজানো ও ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে হালাল ও হারামের পার্থক্য।’ সুনানে তিরমিজি : ১০৮৮
ইসলামী সংগীত পরিবেশন
ইসলামে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অশ্লীল গান পরিবেশন ও শ্রবণ হারাম। অন্তরকে কুমন্ত্রণায় আকৃষ্ট করে এমন কোনো কিছু ইসলাম সমর্থন করে না। বিয়ে যেহেতু আনন্দ ও শুভকামনার আশিস, সেহেতু বিয়েতে আমোদ-ফুর্তির জন্য ইসলামি সংগীত পরিবেশন করা যেতে পারে। তবে এর মধ্যে কোনো অশ্লীলতা থাকা যাবে না। আল্লাহর সৃষ্টির সৌন্দর্য, তার মহিমা, বড়ত্ব, গুণ-কীর্তন, প্রশংসা ও মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা, তার গুণগান এবং ইসলামের শৌর্য-বীর্যসংবলিত গান, কবিতা পরিবেশন ও পাঠ হতে হবে। ইসলামি সংগীত পরিবেশনের লক্ষ্য হতে হবে মানুষকে বিয়ের পয়গাম জানানো। বিয়ের মাধ্যমে আনন্দের বার্তা পৌঁছানো। বিয়ের সুফল ও কল্যাণ বোঝানো। পর্দা ফরজ নয় এমন বাচ্চা মেয়েদের কণ্ঠেও ইসলামি সংগীত সুর ছড়াতে পারে। হাদিসে এসেছে, মুয়াওব্বিজ কন্যা রুবাই (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি সকালে আমার ঘরে এলেন। আমার কাছে তুমি (খালিদ ইবনে জাকওয়ান) যেভাবে বসে আছ, তিনি আমার বিছানায় ঠিক সেভাবে বসলেন। আমাদের বালিকারা এমন সময় দফ বাজিয়ে বদরের যুদ্ধে শহীদ হওয়া আমার বাপ-দাদার শোকগাথা গাইছিল। তাদের কোনো একজন গাইতে গাইতে বলল, আমাদের মধ্যে একজন নবী আছেন, যিনি আগামীকালের খবর জানেন। রাসুল (সা.) তাকে বলেন, এমন বলা হতে বিরত থাকো; বরং তা-ই বলো, যা এতক্ষণ বলছিলে।’ সুনানে তিরমিজি : ১০৯০
বিয়েতে রং মাখা
রঙের ব্যবহার নানা কিছুর বার্তা নিয়ে হাজির হয়। রং দেখলেই মানুষের মনে সুসংবাদ ও আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। যুবকের গায়ে লেগে থাকা রং জীবনঘনিষ্ঠ কিছুর বার্তা দেয়। এক সাহাবির গায়ে হলুদ রং দেখে রাসুল (সা.) তার বিয়ের কথা বুঝতে পেরেছিলেন। সুতরাং ইসলামি শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে হলুদ বা এ জাতীয় রং সৃষ্টিকারী বৈধ উপাদান ব্যবহার করার অনুমতি আছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)-এর দেহে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কী অবস্থা? তিনি বলেন, আমি এক আনসারি রমণীকে বিয়ে করেছি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, একটি বকরি দ্বারা হলেও ওলিমা কোরো।’ সুনানে নাসায়ি : ৩৩৭৭
বিয়ে-পরবর্তী খাবারের আয়োজন
আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও মানুষকে বিয়ের সংবাদ দিতে বিয়ে পরবর্তী অলিমার (বৌভাত) আয়োজন করা যেতে পারে। উপস্থিত সবাই যেন দুজনের বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে। বিয়ে উপযুক্ত ছেলেমেয়ে ও তার অভিভাবক যেন সচেতন হয়। রাসুল (সা.) তার স্ত্রীদের অলিমা করেছেন। সাহাবিদের অলিমা করতে আদেশ করেছেন। মানুষকে অলিমার দাওয়াত গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) জয়নব বিনতে জাহশ (রা.)-এর বিয়েতে যত বড় আয়োজনে অলিমা করেন, আর অন্য কোনো স্ত্রীর বিয়েতে তা করেননি। এতে তিনি একটি বকরি দ্বারা অলিমা করেন।’ সহিহ বোখারি : ৫১৬৮
নব্য বিবাহিত এক সাহাবিকে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি বকরি দ্বারা হলেও অলিমা করো।’ সুনানে নাসায়ি : ৩৩৭৭
বিয়ের ব্যাপারটি বৈধ পন্থায় জানানোর যত পদ্ধতি আছে, তা অবলম্বন করবে। যেন মানুষ বিয়ের কথা চিন্তা করে, বিয়ের বার্তা পায়, উপযুক্ত তরুণ-তরুণী ও অভিভাবক উৎসাহিত হয়।
কিউএনবি/অনিমা/১৪ অগাস্ট ২০২৩,/দুপুর ১:২৪