বিনোদন ডেস্ক : নায়ক-নায়িকার কথা বলা শেষে সংবাদকর্মীরা যেন নড়েচড়ে বসলেন। একটু অবাক করাই বটে! কোনো সিনেমা ঘিরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নায়ক-নায়িকা তাদের কথা বলে ফেললে আর কি বাকি থাকে? থাকে, যদি ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর মতো কেউ সেই সিনেমায় গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে থাকেন।
বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে ‘স্পর্শ’ সিনেমা। যেখানে রয়েছে নায়ক নিরব, বিপরীতে আরিয়ানা। থাকছেন ‘টালিকুইন’ খ্যাত দুই বাংলার জনপ্রিয় নায়িকা ঋতুপর্ণা। যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই সিনেমার বাংলাদেশ অংশের নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছেন অনন্য মামুন এবং ভারত অংশের দায়িত্বে অভিনন্দন দত্ত। বাংলাদেশ অংশের শুটিং শুরুর আগে ডাকা হয় সংবাদ সম্মেলন।
গতকাল রাজধানীর ফিল্ম ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিরব-আরিয়ানার ব্রিফিং শেষে দেখা মিলল ঋতুপর্ণার। সিনেমার কাহিনী গড়ে উঠেছে অসম বয়সের এক ত্রিভুজ প্রেমের গল্প ঘিরে। সেখানে নিরব-আরিয়ানার প্রেমের মাঝেই কি ঢুকে যাবেন ঋতুপর্ণা? নাকি নিরব-ঋতুপর্ণার অসম প্রেমের মাঝে আরিয়ানা হাজির হবেন? সিনেমার গল্পের সঙ্গে মিলে গেল কি-না কে জানে! তবে জনাকীর্ণ কক্ষে সংবাদকর্মীদের ভিড় ঠেলে ঋতুপর্ণা নির্ধারিত আসনে বসতেই পরিবেশটাই কেমন বদলে গেল। সত্যিকারের সুপারস্টারের প্রভাব আর কি!
ত্রিশ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ার। ভারতের বাংলা সিনেমায় এখনো রাজত্ব করে চলেছেন। বাংলাদেশেও উপহার দিয়েছেন ব্যবসা সফল ছবি। বাংলাদেশকে যিনি অন্য দেশ ভাবতে চাননা কখনো। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সে কথাই বললেন, ‘বাংলাদেশে যখনই আসি, এতো ভালো লাগে! মন ভালো হয়ে যায়। আজকে যখন এয়ারপোর্ট থেকে বের হলাম, আবার মনে হলো এটা আমার কত চেনা দেশ, চেনা শহর, চেনা পরিস্থিতি। ভেতর থেকেই ভালো লাগাটা তৈরি হয়।’
পরে অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘বাংলাদেশ তো আমারই দেশ। আমি তো আলাদা করে দেখি না। তার জন্য বোধ হয় (এখানকার) মানুষ আমাকে এতো ভালোবাসে। আমার মায়ের দেশ মানিকগঞ্জ আর বাবার দেশ বিক্রমপুর। ফলে আমাদের একটা ভিত আছে এখানে।’
‘অনেক বছর আগে এখানে ছবি করতে এসে মায়ের গ্রামে গিয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয় এটা (ভারত ও বাংলাদেশ) একই জায়গা। আর এখানকার মানুষ আমাকে এতো ভালোবেসেছে, আমার ছবিগুলো এতো জনপ্রিয় হয়েছে। আশা করি এই (স্পর্শ) ছবিটাও দারুণ জনপ্রিয় হবে’।
ঋতুপর্ণা যখন কথা বলছিলেন, তার দুই পাশে তখন নিরব ও আরিয়ানা। হঠাৎই ঋতুপর্ণার কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন, ‘দিদি, ৫২ বছর বয়সে আপনি এখনো নায়িকা…।’
প্রশ্নকর্তা শেষ করতে পারলেন না। ঋতুপর্ণা যেন ফুসে উঠলেন, ‘এটা বলার কি আপনার খুব দরকার এখানে? আর ওই বয়সটা এখনো হয়নি আমার, আপনি যেটা (৫২ বছর) বলছেন…।’
অন্য একজন প্রশ্নটা ঘুরিয়ে করার চেষ্টা করলেন, ‘আপনাকে তো সেই একই রকম দেখছি…।’ এবার নায়িকার উত্তর, ‘হ্যাঁ, সেটাই থাক না। আমি হচ্ছি এভারগ্রিন।’ সঙ্গে বলে দেন, ‘নায়িকার বয়স কখনো বলতে নেই, পুরুষদের স্যালারি কখনো বলতে নেই। জানেন তো?’
বয়স নিয়ে প্রশ্নে ঋতুপর্ণার বিরক্তি ধরে পড়ল পরে আরও এক প্রশ্নে। ছেলের বয়স উল্লেখ করে একটা প্রশ্ন করতেই হেসে বললেন, ‘এরা বাড়িয়ে বলে কেন এতো’। তবে নিজের তারুণ্যের রহস্য কথা এভাবে প্রকাশ করলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসা। আপনারা আমাকে এতো চান, তাই জন্য আমি নিজেকে সুন্দর রাখতে চেষ্টা করি।’
ঋতুপর্ণার জীবন দর্শনও উঠে এলো তার পরের কথাগুলোতে, ‘আমি মনে করি পজিটিভিটি যদি ভেতরে থাকে তাহলে সবকিছুকে আমরা ক্রস করতে পারবো। যদি আমরা নেগেটিভ মানুষ হই, যদি ভাবি যে এটা হয়ে গেছে, এরপর আর এটা হবে না…। কিন্তু আমি সবসময় ভাবি যে এটার পর এটা হবে এবং আমি খুবই পজিটিভ মানুষ। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখি এবং চাই সারাজীবন এমন কিছু কাজ করে যেতে, যেটা অসাধারণ ছাপ ফেলে যাবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে।’
সেটা চান বলেই তো ঋতুপর্ণা মানে এখানো এতো আবেদন। সম্প্রতি শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের গল্পে তার অভিনীত ‘দত্তা’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। বেশ সাড়া ফেলেছে সিনেমাটি। ঋতুপর্ণা জানান, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তার। বরং মনের কোণে অনেক ইচ্ছা জমা পড়ে আছে, ‘আরও আরও ইন্টারেস্টিং চরিত্র করবো, যাতে আমি নিজেকে এক্সপ্লোর করতে পারি।’
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেকের সঙ্গেই অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা। সবচেয়ে বেশি সফল ছবি তার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেধে। তবে এই জুটির প্রেমের গুজব নিয়েও অনেক আলোচনা আছে। সহঅভিনেতা-অভিনেত্রীরাও তাদের প্রেমের গুজবের দিকে বিভিন্ন সময় আঙুল তুলেছেন। এদিনও ঋতুপর্ণাকে এ নিয়ে প্রশ্ন শুনতে হলো।
এই নায়িকা এবার কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘যোদ্ধারা সব সময় যুদ্ধ করেই জিতেছে। আমি নিজেকে একজন যোদ্ধা মনে করি। আমি একজন চলচ্চিত্র কর্মী এবং আমি একজন যোদ্ধা। আমাকে সবাই যুদ্ধে আহ্বান করেছে, আমি যুদ্ধ করেই জিতেছি। ফলে আমার কোনো আশঙ্কা নেই সেই ব্যাপারে। আমার সম্পর্কে কে কি বললো, আই ডোন্ট কেয়ার। আমার কাজে আমার আইডেন্টিটি। আমার কাজ দিয়ে আমি আমার পরিচয় দিয়ে দিয়েছি।’
ঋতুপর্ণা বলে যান, ‘আমরা যদি লক্ষ্যে স্থির থাকি, আমরা ভালো কাজ করবো…. এতো বছর তো ভালো কাজ ছাড়া এমনি এমনি থাকা যায় না ইন্ডাস্ট্রিতে। ইন্ডাস্ট্রি খুবই রুথলেস জায়গা, যেটা শাহরুখ খান আমাকে বলেছিল। এখানে নিজের জায়গা তৈরি করা মানে নিজের যুদ্ধে জিতে জায়গা তৈরি করা। আমি মনে করি সেই যুদ্ধটা আমি করি।’
ঋতুপর্ণা যখন কথাগুলো বলছিলেন, সত্যিই তাকে যোদ্ধাই মনে হচ্ছিল। এভারগ্রিন তো বটেই।
কিউএনবি/আয়শা/১৩ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ১১:২৫