এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় আগাম শিম চাষ করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার চাষীরা। আগাম শিম চাষ করে ভালো ফলন আর দাম বেশি পাওয়া যায় এমনটা বলছেন চাষীরা। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া শিম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সে জন্য উচু সমতল জমিতে এবং নিচু ধানের জমিতেও মাঝে মাঝে নালা কেটে মাটি উঁচু করে এখন শিম চাষ করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, এ বছরে শিম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাহয়েছে ৩৫৫ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূল ও ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হচ্ছে। এই অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া বিবেচনায় রূপভান ও ইফশা নামের দুটি জাতের শিম বেশি চাষ হচ্ছে। সাধারণত বীজ রোপণের ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে শিমের গাছে ফুল আসতে শুরু করে। বর্ষা না হলে প্রায় ৫ মাস শিম হয় এক মাচায়।
সোমবার বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে গেলে চোখে পড়ে মাঠের মাঝে মাচায় শিমের ফুলে ফুলে শোভাপাচ্ছে। নীল-বেগুনি রঙের শিম ক্ষেতগুলো শরতের আকাশের সঙ্গে মিতালীর নয়ানাভিরাম দৃশ্য বেশ মনকাড়ে। শিমের রুগ্ন ফুল ছিড়ে ফেলা, ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করা এবং পোকা-মাকড় প্রতিরোধসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার শিম চাষিরা।
শিমের ক্ষেতে কথা হয় হায়াতপুর গ্রামের শিম চাষি জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় ৪-৫ বছর ধরে আগাম শিম চাষ করে আসছেন। কম বেশি প্রতি বছরই লাভবান হচ্ছেন তিনি। এ বছরও বাজারে শিমের দাম ভালো। বাজারে নতুন শিম উঠছে। তবে সামনে সপ্তাহে পুরোদমে নতুন শিম বাজারে আসবে। দু একজন চাষী বাজারে শিম নিয়ে আসতে দেখা গেছে। পাতিবিলা গ্রামের শিম চাষি আজাদ হোসেন বলেন আজ প্রথম নতুন শিম বাজারে এনেছি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছি।
বর্ণি গ্রামের চাষী আমিনুর রহমান বলেন, এ বছরে ১ বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫-২০ হাজার টাকা। আর অল্প কয়েক দিনের মধ্যে শিম বাজারে নিয়ে যেতে পারবো। অতি বর্ষা না হলে ৭০-৮০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন তিনি। উপজেলায় সব থেকে বেশি শিম চাষ হয় পাতিবিলা, জগদিশপুর, নারায়নপুর, স্বরুপদাহ ও ধুলিয়ানী ইউনিয়নে। জগদিশপুর ইউনিয়নের মাড়–য়া গ্রামের শুকুর আলী জানান, মাচায় অল্প পরিমানে শিম আসতে শুরু করেছে। ১০/১২ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন তিনি। এ বছরে অন্য বছরের তুলনায় বেশি লাভ হবে বলে তিনি আশা করেছেন ।
সিংহঝুলীর সাবের আলী, ফজের আলী, লিটনসহ আরও কয়েক চাষির কথা বললে তারা বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় শিম চাষে আমরা বেশ লাভবান হবো। এ বিষয়ে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, এ উপজেলার মাটি শিম চাষের জন্য উপযোগী। শিম চাষের প্রধান বাধা অতিরিক্ত বর্ষা। বর্ষার পানি ক্ষেতে জমে থাকলে স্যাঁতসেতে মাটিতে শিম গাছের গোড়ায় নেমাটট (কৃমি জাতীয় পোকা) আক্রমণ করে। নেমাটটের আক্রমণ গাছের শিকড় নষ্ট করে দেয়। যে কারণে গাছ মারা যেতে পারে। তা ছাড়া অতিরিক্ত বর্ষা হলে শিমের ফুল পচে কুশি গজানোর ক্ষমতা হারায়। তাই শিমগাছের গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে ছত্রাক নাশক বা পানিতে পরিমিতভাবে বোরিক এসিড মিশিয়ে ¯েপ্র করলে উপকার পাওয়া যায়।
কিউএনবি/আয়শা/৩১ জুলাই ২০২৩,/রাত ১০:১৪