মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১১:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
রাতের ভোটের দায় স্বীকার করে নূরুল হুদার জবানবন্দি ইন্টার মিলানকে বিদায় করে কোয়ার্টারে ব্রাজিলের ক্লাব নোয়াখালীতে ভরা মৌসুমে চালের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ নারী দলের জন্য নারী নির্বাচক, দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন কে? রিয়ালের দুর্বলতা খুঁজে জয়ের কৌশল আঁটছে জুভেন্টাস হাতিয়াতে যৌথবাহিনীর অভিযানে নারীসহ আটক-৪, আগ্নেয়াস্ত্র-স্বর্ণ উদ্ধার চাকুরি প্রলোভনে শিক্ষার্থীকে কু প্রস্তাব ! রাঙামাটিতে কসমস হোটেল মালিক গ্রেফতার বিএনপির সাবেক এমপি বাবুর ৬৪তম জন্মদিন পালিত বাহরাইনকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে দুর্দান্ত শুরু বাংলাদেশের আম্পায়ারদের প্রশিক্ষণে সাইমন টফেলকে চায় বিসিবি

বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩
  • ৪৬৭ Time View

বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে

——————————————

প্রায়ই বিচারপতিদের আক্ষেপ শুনতে পাই যে মামলার জট কেন খুলতেছে না। সম্প্রতি ইংরেজি দৈনিক New Age পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে যে ৫ লক্ষ ১৬ হাজার মামলা হাইকোর্টে ঝুলে আছে। এ দেশে বৃটিশ শাসন আগমণের পরই বৈজ্ঞানিক পন্থায় শিক্ষা, আইন-আদালতসহ বিভিন্ন ধরণের উন্নয়নের কাজ যৌক্তিকভাবে শুরু হয়। একতরফা কোনোকিছু করার উপায় থাকে না। কথায় বলে, শিক্ষার আগমণের পরেই যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে আইন-আদালত চালু হয়। ইংল্যান্ডে ম্যাগনাকার্টা আইন (১২১৫ সাল) প্রায় হাজার বছর আগে চালু হয়। সেই আইন আমাদের দেশে বর্তমানে কতটুকু কার্যকর আছে তা আইনজ্ঞরা ভাল বলতে পারবেন । ভালভাবে আইন চালাতে হলে দেশের তিনটি খুঁটি স্বাধীনভাবে চালু রাখতে হবে। এক বিন্দুতে বসে তিনটি খুঁটির উপর খবরদারি করা যাবে না। তাহলেই সমস্যার সৃষ্টি হবে।

খুঁটি তিনটি হলো প্রশাসন, সংসদ ও বিচার বিভাগকে আলাদাভাবে চলতে দিতে হবে। নিকট অতীতে বিচার বিভাগকে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ থেকে দূরে রাখা হয়। আইন বিভাগের কর্তৃত্ব দেশের প্রধান বিচারপতির উপর ন্যস্ত আছে। শুনা যায় বাংলাদেশের হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট, জেলা জজ ও মেট্টোপলিটন আদালতসমূহে লক্ষ লক্ষ মামলা বিচারাধীন আছে। যার সঠিক সংখ্যা হয়তো প্রধান বিচারপতির দফতর বলতে পারবে। বিলেতি আইনে বলা হয় Justice delayed is Justice denied. আমাদের দেশে দেখা যায় যে বিভিন্ন কোর্টসমূহে লক্ষ লক্ষ মামলা যা ৫০ বছর বা তার অধিক সময় ধরে বিচারাধীন আছে।

বিগত ১০/১২ বছর যাবৎমামলার পরিমাণ বহু গুন বেড়েছে। একজন বিজ্ঞ আইনজ্ঞ বলেছেন, মামলার বিচার দ্রুত না হওয়াতে মামলার সংখ্যা হুরহুর করে দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। একশ্রেণীর লুটেরা আছে যারা বিগত ৭/৮ বছরে জাল বা ভুয়া দলিল বানিয়ে লক্ষ লক্ষ জমি,বাড়িঘর দখল করছে অথচ তার বিচার হচ্ছেনা না। বিচার না হওয়ার কারণে সেই সব লুটেরাদের দৌরাত্ব বেড়ে চলেছে। মামলাগুলো বিচার না হওয়ার কারণ হল তারিখের পর তারিখ, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে দীর্ঘ সূত্রিতার বেড়াজালে আটকে আছে। একটা মামলা কতবার তারিখ পড়তে পারবে তার কোন নির্দিষ্ট সীমা নেই। উন্মুক্ত কোর্টে শুনানী হলেও পরবর্তী তারিখগুলো বহুদিন ধরে ঝুলে থাকে। বহু মামলার ফাইলপত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। তার পরে হুট করে দেখা গেল মামলাটি একতরফা ভাবে বিচার হয়ে গেছে। আবার পুণঃ বিচারের আবেদন করলে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।

Justice hurried is justice buried. এ রকমও দেখা গেছে সুপ্রীম কোর্টের রিভিউয়ের পর পুনরায় প্রধান বিচারপতির আদালতে পেশ করা হয়েছে। তখন প্রধান বিচারপতির পূর্ণ বেঞ্চ তিন মাসের মধ্যে হাইকোটের্র মামলাটি সম্পূর্ণ করার জন্য হুকুম দিয়েছেন। অথচ তা ৪/৫ বছরেও নিস্পত্তি হচ্ছেনা। তারিখ পড়লেও শুনানিও হয়না। বিচারের সুবিধার জন্য সময় দেওয়া হয়। অনেক মামলা দেখা যায় যে, সময় দেয়া হয়েছে অথচ মামলা চালু হচ্ছেনা। আমাদের বিচার ব্যবস্থা কত উন্নতমানের তা পাশ্ববর্তী দেশের সাথে তুলনা করলে অবস্থা বুঝতে সুবিধা হবে।

এ পৃথিবীতে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। কিন্তু অনেকে বিচারক আসনে বা ক্ষমতায় বসে তা কতটুকু উপলব্ধি করতে পারেন তা বুঝা বড় দায়। এই সব ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের কি পরিমাণ অবৈধ সম্পত্তি আছে তা এই দেশের সাধারণ জনগণ দেখতে পাচ্ছেনা, কিন্তু বিভিন্ন সরকারী সংস্থা অবগত আছেন। এ বিষয়ে কারও কোনো প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ নেই। যার ফলে মামলার জট দিন দিন বেড়ে চলছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মহামান্য প্রধান বিচারপতির নিকট আমার নিম্নলিখিত পরামর্শগুলো সবিনয়ে উপস্থাপন করতে চাই।

১। কোন মামলা তিন বারের বেশি অতিরিক্ত শুনানীর জন্য সময় দেয়া যাবে না। যদি হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্টে সময় নিতে হয় তাহলেই উক্ত কোর্টের জজ সাহেবকে প্রধান বিচারপতির নিকট থেকে কারণ দর্শানোর পর সময় নিতে হবে। প্রধান বিচারপতি ইচ্ছা করলে বাদী বা বিবাদীকে অতিরিক্ত সময় মঞ্জুর করতে পারবেন। তবে যে পক্ষ সময় চাইবে তার বিপক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তেমনি মেট্টোপলিটন ও জেলা জজ সমূহে সময় নিতে হলে চীফ মেট্টোপলিটন জজ বা জেলা জজের নিকট থেকে অনুরূপভ কারণ দর্শায়ে বিচারক বা জজ সাহেব সময় নিবেন এবং আবদনকারীকে শুনানীর জন্য অতিরিক্ত সময়ের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

২। মামলার আদেশ বা পূনঃ সময় দেয়ার জন্য জজ/ বিচারক সাহেবকে উন্মুক্ত আদালতে ঘোষণা দিতে হবে।

৩। তদন্তকারী সংস্থাগুলোকেও অতিরিক্ত সময় গ্রহণ করলে তার কৈফিয়ত/ খরচা দিতে হবে। মামলার জট কমাতে হলে শুনানীর জন্য বছরের পর বছর সময় দেয়া চলবে না। দ্রুত বিচার হলে মামলাবাজরা ছলেবলে নূতন মামলা দিয়ে মূল্যবান অসংখ্য সম্পত্তি দখল করে অথবা আটকে রাখতে পারবে না।

৪। সরকারী বিভিন্ন সংস্থা সরাসরি বা থানার মাধ্যমে মামলা দাখিল করতেছে। থানা কতৃপক্ষও প্রচুর মামলা গ্রহণ করে কোর্টে চালান দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত বহু মানুষ মিল, কল কারখানায় কাজ শেষে বাড়ী ফিরে বিভিন্ন ভাবে। অনেকে বাস,ট্রেন বা লঞ্চ, জাহাজ থেকে নেমে রাতে বাড়ী ফিরে। রাত বেশি হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিভিন্ন সংস্থার লোক গ্রেফতার করে রাতে থানায় রেখে পরের দিন কোর্টে চালান করে দেয়। এর ফলে দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার অহেতুক মামলার জন্ম হচ্ছে। কিছুদিন হাজত বাস করার পর এই সকল মানুষ খালাস পায়। এই অবস্থায় যদি সরকার চায় তাহলে এক বা একাধিক থানার জন্য একজন অবসর প্রাপ্ত জজ/ম্যাজিষ্ট্রেটকে থানায় Honorary জজ/ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারেন। জজ/ Honorary Magistrate সাহেব ঠিক করবেন বিগত ২৪ ঘন্টায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে কাদের কোর্টে চালান দেয়া হবে কি হবে না তা নির্ধারণ করবেন। এর ফলে অহেতুক মামলার সংখ্যা দ্রুত কমে যাবে।

মিডিয়াকে দেশের দর্পন হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রিন্ট মিডিয়াতে আদালতের বহু ধরণের আইন বা বিধি বহির্ভূত কর্মকান্ডের তথ্য সংবাদ দেখতে পাওয়া যায়। তেমনি এরকম সংবাদ সমূহ ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতেও প্রচার করার ব্যবস্থা করতে হবে। মিডিয়া বহু কিছু লিখছে। তবে সাগর-রুনির বিচারের তারিখ ৮০/৮৫ বারের মত ধার্য করা হয়েছে যা বহু বার প্রকাশ পেয়েছে। এ ধরণের হাজার হাজার ঘটনা নিভৃতে নীরবে কাঁদছে যা মিডিয়াকে প্রকাশ করতে হবে। তেমনি ভাবে সাধারণ জনগণের বহু ধরণের ভোগান্তির উপর আলোকেপাত করার বহু সুযোগ আছে যা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।

বিভিন্ন প্রকার মোসাহেবীপণা দূর করতে হলে মিডিয়াকে শক্ত হাতে গ্রহণ করতে হবে যাতে বিচার বিভাগ ও সরকারের পক্ষে সুবিধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে বিচার বিভাগ শক্ত ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে। মিডিয়া ইচ্ছা করলে আদালতের কার্যক্রমের উপর জনমত যাচাইয়ে দেশব্যাপী অভিমত তৈরি করে প্রচার করতে পারে। এতে বিচার বিভাগেরও সুবিধা হবে।

লেখক : এস এম হুসাইন 

প্রাক্তন চেয়ারম্যান, সম্পাদক মন্ডলী, সাপ্তাহিক সুগন্ধা, ঢাকা, এবং
দৈনিক আজকের বার্তা,বরিশাল।

 

কিউএনবি /আয়েশা/১৮.০৬.২০২৩/রাত ১১.২৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit