এম এ রহিম চৌগাছা (যেশার) : সাগরের নীল জলরাশির মত স্বচ্ছ টলটেল পানির এক জলাভূমি হলো যশোরের চৌগাছা উপজেলার বেড়গোবিন্দপুর বাওড়। মৎস্য উৎপাদন ও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বাওড়। বেড়গোবিন্দপুর বাওড়ের মোট আয়তন ২১৭ হেক্টর। বেড়গোবিন্দপুর গ্রামের চারপাশে বেড় দেওয়া তাই এ বাওড়কে বেড়গোবিন্দপুর বাওড় নামে নাম করণ করা হয়।
ধূলিয়ানী, সিংহঝুলী ও চৌগাছা সদর ইউনিয়েনর সীমান্তে এ বাওড়ের অবস্থান। চৌগাছা ইউনিয়নের বেড়গোবিন্দ পুর গ্রামের চারিদকে বেড়িদিয়ে দক্ষিন পশ্চিম কোণ দিয়ে বের হয়ে কপোতাক্ষ নদের সাথে মিশেছে। এ বাওড়টি একদিকে যেমন মৎস্য উৎপাদন করে দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করছে তেমনই সৌন্দর্যের স্বপ্ননীল সম্ভাষনে নিজেই সেজে থাকে এক অপরূপ জলপরী রুপে।
প্রতি বছর প্রায় দেড়শো মেট্রিক টন হিসেবে সেই আশির দশক থেকে এ বাওড় থেকে কয়েক হাজার মেট্রক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রজাতির রাণিমাছ এ হিসেবের বাইরে থেকে গেছে। তবে মাছের উৎপাদন যায়হোক না কেন প্রাকৃতিক সোন্দর্যের কারেণ বাওড়টি মানুষের কাছে বেশ প্রিয়। তাইতো অবসর সময় পেলেই এলাকার মানুষেরা ছুটে যায় বাওড়ের সাণ্যির্ধে।
সিংহঝুলি ইউনিয়েনর চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মিল্লক বলেন, এ বাওড়ের সৌন্দর্য আমাকে এতটা আর্কষণ করে যে, সময় পেলেই আমি বাওড়ের পাড়ে বেড়াতে যায়। তিনি আরো বলেন চৌগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বাওড়টিকে পর্যটন কেন্দ্র তৈরী করার জন্য চেষ্টা করছেন। ধুলিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মমিনুর রহমান বলেন, এ বাওড়ের এক পাড়ে আমার ইউনিয়নের অবস্থান সত্যিই বাওড়টি এত সুন্দর যা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। বাওড়টিতে একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে পারলে আর্কষণীয় ইকোপার্কে পরিণত করা যায়।
চৌগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, আমি একজন মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ী এ বাওড়ে পরিকল্পিত ভাবে মাছ চাষ করলে বছরে লাখ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন করা সম্ভব। তাছাড়া প্রাকৃতিক সোন্দর্যের ব্যাপারটা তো আছেই। তিনি আরো বলেন, এখানে তো এমনিতেই চমৎকার পরিবেশ আছে। কেবলমাত্র নিরাপত্তা, যাতায়াত ও লাইটিংয়ের ব্যবস্তা সম্পন্ন করতে পারলেই এক ধাপ এগিয়ে যেতো।
তিনি পর্যটন বিভাগ থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণের জোর দাবী জানান। শনিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে বাওড়ে বেড়াতে আসা সিংহঝুলি গ্রামের নাকিব খান বলেন বাওড় পাড়ে সোলার লাইট স্থাপন, উন্নত মানের কিছু কফিসপ এবং শেড দেওয়া বসার জায়গা, পিকনিক ¯পট ও নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থা এবং বাওড়কে আরো পিরচ্ছন্ন করতে পারলে এটা একটা চমৎকার পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হবে। একই গ্রামের টনিরাজ খান, লাবিব হোসেন, তুশার, সাগর খানসহ আরো অনেকে বলেন আমরা সময় পেলেই বাওড়ে বেড়াতে আসি। কিন্তু আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরী হয়ে যায়। তারা আরো বলেন বাওড়টি প্রাকৃতিক ভাবেই অনেক সুন্দর সামান্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করলেই এটি হতে পারে আর্কষণীয় পর্যটন ¯পট।
চৌগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন, এ বাওড়ের সাথেই সংযুক্ত ডায়নের বিলেরপাড়ে আমার বাড়ি সত্যিই বিল বাওড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করেবই। সেই শিশুকাল থেকেই এবাওড়ের পানিতে গোছল করে আর বাওড় পাড়ে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি কিন্তু আর্কষণের সামান্যতম কমতিহয়নি। তিনি আরো বলেন ডাইনের বিলের জমির পরিমান ৪০ হেক্টর। বাওড়ের পাশে এ বিলের প্রাকৃতিকসৌন্দর্যও অপরুপ ।
এ বিল বাওড়ে বিচিত্র পাখিদের আগমন আর বিচিত্র সব জলজ উদ্ভীদ লালশাপলা নীলশাপলা সাদা শাপলা মনে করিয়ে দেয় দেশের যে কোন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের স্থান থেকে কম নয়।শীতকালে নানারকম পাখিদের কলকাকলীতে ভরে ওঠে ডায়নার আয়নার মত ঝকঝকে বিল। অতিথি পাখিদের মধ্যে চখা, জল পায়রা, জলপিপি, দমকুল, মানিকজোড়, হাসপাখি, ভীলভীলে, পানকৌড়ি, বক, ধলেশ্বর, কাদা খোঁচা, মাছরাঙা উল্লেখ যোগ্য।
স্থানীয় সাংবাদিক রহিদুল ইসলাম খান, বাবুল আক্তার ও আসাদুজ্জামান মুক্ত বলেন, বাওড়ে নৌভ্রমণের ব্যবস্থা করেত পারেল চমৎকার একটা পরিবেশ তৈরী হবে যা ভ্রমণপিয়াসী মানুষেক আর্কষণ করবে। চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, বেড়গোবিন্দপুর বাওড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও নয়ণাভিরাম দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর । আমি নিজে বেশ কয়েকবার বেড়াতে গিয়েছি। বাওড় পাড়ে দাঁড়িয় সূর্যাস্ত দেখেত খুব ভাল লাগে পশ্চিম আকাশে যখন সূর্য অস্ত যায় তখন মনে হয় কোন এক সাগরের বেলাভূমিতে সূর্যাস্ত যাচ্ছে। তিনি বলেন বাওড়কে একটা পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত করার একটি প্রস্তাব আমরা উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কিউএনবি/আয়শা/০১ এপ্রিল ২০২৩,/সন্ধ্যা ৭:৩৫