বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধিম : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় তিনশ’ বছরের পুরোনো শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দিরে রবিবার থেকে পাঁচ দিনব্যাপী সপ্তশতী বার্ষিক মহাযজ্ঞ মহোৎসব শুরু হয়েছে। সকালে বৈদিক পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে চারদিনব্যাপী মহাযজ্ঞ উৎসব শুরু হয়। উৎসব উপলক্ষে বসেছে মেলা। মন্দির কমিটির সভাপতি পলাশ ভট্টাচার্য উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ সময় বাংলাদেশর বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকে আগত পুরোহিত ও পন্ডিতগন সহস্থানীয় ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে জীব জগতের কল্যাণ কামনায় সপ্তশতী চন্ডী মহাযজ্ঞ শুরু হয়। এ সময় ভক্তরা যজ্ঞের আহুতি হিসেবে ফল, ফুল, দুর্বা, বেলপাতাসহ অন্যান্য পূজার সামগ্রী যজ্ঞে দেন।
যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত মধুসূদন চক্রবর্তী বলেন, ‘কালভৈরব মন্দির প্রাঙ্গনে এবার ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে। এবার চন্ডী মায়ের অপর রূপ বগলামুখী মায়েরও পূজা অনুষ্ঠিত হয়। জীব ও জগতের শান্তি কামনায় শ্রী সপ্তশতী চন্ডী মায়ের কাছে প্রার্থণা করা হচ্ছে।’যজ্ঞের অতিথি পুরোহিত ভারতের ত্রিপুরা থেকে আগত অনুপম ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘২০২৩ সালটি জাতি ও জীবের জন্য ভয়ঙ্কর সন্ধিক্ষণ। শনি মহারাজ এবার কুম্ভের ঘরে। আমরা যজ্ঞ করি কারণ এই যজ্ঞের ধ্বনি মহাকাশে গিয়ে প্রতিধ্বনির সৃষ্টির করে। মহাকালকে তুষ্ট করার জন্যই এই যজ্ঞ করা হয়।
এদিকে কালভৈরব মন্দিরের প্রধান পুরোহিত নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, চন্ডি শব্দ এসেছে চন্ড শব্দ থেকে। চন্ড মানে উগ্র। এই চন্ডকে স্ত্রীলিঙ্গ করে চন্ডী করা হয়েছে। উগ্রচন্ড সব সময় রাগান্বিত থাকেন। তাকে তুষ্ট করার জন্যেই মূলত প্রার্থণার আয়োজন।’এদিকে পাঁচদিনব্যাপী যজ্ঞ উৎসবকে কেন্দ্র করে কালভৈরব মন্দিরের আশেপাশে তিতাস নদীর তীরে বসেছে লোকজ মেলা। মেলায় নাগরদোলাসহ খেলনা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এতে ক্রেতাদেরও বেশ উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
যজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজকসহ পুরোহিতেরা জানান, প্রায় তিনশ’ আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফুলবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা দূর্গাচরণ আচার্য্য স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে পৌর এলাকার মেড্ডার তিতাস নদীর তীরে শ্রী শ্রী কালভৈরব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে জীব জগতের কল্যাণ কামনায় প্রতিবছর এ যজ্ঞ হয়। পরে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহীনি ডিনামাইটের মাধ্যমে ২৪ ফুট উঁচু কালভৈরব মুর্তির ক্ষতিসাধন করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েক বছর পূজা-উৎসব বন্ধ থাকে। পরে ড. মহানামব্রত ব্রহ্মচারী মহারাজ স্থানীয় ভক্তদের সহযোগিতায় কালভৈরব মন্দিরটির পুন:প্রতিষ্ঠা করেন।
মন্দিরে আসা ভক্ত খোকন পাল জানান, ‘প্রত্যেক বছর উৎসবে আসি পরিবার নিয়ে।’ করবী চক্রবর্তী বলেন, ‘এবার মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি যেন সবাই আমরা শান্তিতে থাকতে পারি। দেশের ও জাতির জন্য মঙ্গল কামনা করেছি।’