আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : দূর্গম পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে পাহাড়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে অনন্য অবদান রেখে চলেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দিয়ে পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে বিগত ১৯৭৬ সাল থেকে শিক্ষা বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে পাহাড়ে বসবাসরত সকল সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড ১৯৭৬ সাল হতে শিক্ষাবৃত্তি কার্যক্রম শুরু করে।
এই কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে প্রতিবছর তিন পার্বত্য জেলার দূর্গম পাহাড়ি অঞ্চলসহ জেলা সদরের দুই হাজারেরও অধিক মেধাবী শিক্ষার্থী পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শিক্ষাবৃত্তির আওতায় আসছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ৭ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করে এ বৃত্তি পেয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে এই শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে বিভিন্ন ভাবে আলোচনা-সমালোচনার তথ্য চাউর হলে বিষয়টি জনসম্মুখে উঠে আসে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা জানিয়েছেন, উন্নয়ন বোর্ডের উন্নয়ন সহায়তা স্কিম থেকে “পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান” শীর্ষক স্কিমটি বাস্তবায়ন করা হয়। তিনি বলেন, ১৯৭৬-৭৭ সালের বোর্ডের প্রথম বৃত্তি প্রদানের বরাদ্দ ছিল ৮১ হাজার টাকা। এ বরাদ্দ পর্যায়ক্রমে ২৫ লক্ষ হতে ৫০ লক্ষ বর্তমানে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ রেখে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের এ বৃত্তির প্রদান প্রক্রিয়া সহজিকরণের লক্ষ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছর হতে একটি শিক্ষাবৃত্তি সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়। বর্তমানে এ সফটওয়্যার মাধ্যমে যেকোন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়নবোর্ড ২০১৭-১৮ অর্থ বছর হতে দুই কোটি বরাদ্দ রেখে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান করে যাচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছর হতে দুই হাজার উর্ধেব শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সৃষ্টিলগ্ন থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ১৬,৪৩৪ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১৯৩ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।
উন্নয়ন বোর্ডের অফিসিয়াল সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে আবেদন জমা পড়েছে, চাকমা-৩৩ শতাংশ, বাঙ্গালী-২৯ শতাংশ, মারমা-১৮ শতাংশ, ত্রিপুরা-১১ শতাংশ, তংচঙ্গ্যা-৩ শতাংশ, পাংখোয়া-১ শতাংশ, বম-২ শতাংশ, ¤্রাে এক শতাংশ, খিয়াং- এক শতাংশ, খুমি-০০%, চাক-০০%, লুসাই-০০ শতাংশ মিলে সর্বমোট ১০০ শতাংশ আবেদন জমা পড়েছে। উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন কলেজ/ ইনস্টিটিউট/ বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক/ সমমান, স্নাতক(সম্মান)/ স্নাতক/ সমমান ও স্নাতকোত্তর/সমমান পর্যায়ে অধ্যয়নরত রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের “পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান” এর নিমিত্তে এই বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান বলেন, বৃত্তি ফলাফল মেধা ভিত্তিক সফটওয়্যারের প্রক্রিয়া করণের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়। বোর্ডের শিক্ষা বৃত্তি প্রদানে সফটওয়্যারটি মেধাবী, অনগ্রসর, অসচ্ছল ইত্যাদি বিষয় চিন্তা করে প্রস্তুত করা একটি সফটওয়্যার। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড পার্বত্যবাসী কল্যাণের কথা চিন্তা করে এই উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে থাকে। যে সম্প্রদায়ের আবেদন সংখ্যা কম সে সম্প্রদায়ের নির্বাচিত সংখ্যাও কম হয়ে থাকে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব নুরুল আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, উপজেলা ভিত্তিক বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রাপ্ত আবেদন সমূহের স্ব-স্ব সম্প্রদায় ভিত্তিক মেধা অনুসারে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে শিক্ষাবৃত্তির নির্বাচিতদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়। তারই আলোকে এবার চাকমা সম্প্রদায়ের ২৯ শতাংশ, বাঙ্গালীদের ২৮ শতাংশ, মারমা-১৯, ত্রিপুরা-৯, তংচঙ্গ্যা-৪, লুসাই-০০, পাংখোয়া-১, বম-৩, ¤্রাে-৩, খিয়াং-২, খুমি-১, চাক সম্প্রদায়ের এক শতাংশ শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৬:৫৫