শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:০৫ পূর্বাহ্ন

বগুড়ার শেরপুরে টিসিবির পণ্য কালোবাজারে ফ্যামিলি কার্ডেও মিলছেনা পণ্য!

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ২৬৭ Time View

আবু জাহের, শেরপুর বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে নিম্ন আয়ের (গরিব) মানুষের জন্য ফ্যামিলি কার্ডের ভর্তুকি মূল্যের টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে কালোবাজারে। তাই তাদের ফ্যামিলি কার্ড থাকলেও পাননি কোনো পণ্যসামগ্রী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পর খালি হাতেই বাড়ি ফিরে গেছেন তাঁরা। আবার অনেকেই পণ্য না পেয়ে ডিলারের বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে কার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। সেইসঙ্গে গরিবের জন্য বরাদ্দের সরকারি ভর্তুকির টিসিবির পণ্য নয়ছয়ের ঘটনায় তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের টিসিবির ডিলার তোতা মিয়ার খন্দকারটোলা মাজারগেট ও আব্দুল আউয়ালের হামছায়াপুর ঢাকা বয়লার গেটের সামনের বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে এই বিক্ষোভ প্রর্দশন করেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে ফ্যামিলি কার্ড থাকার পরও ভর্তুকি মূল্যের পণ্যসামগ্রী না পাওয়ায় ভুক্তভোগীদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ একাধিক ইউপি সদস্য (মেম্বার) অভিযোগ করে বলেন, বিগত কয়েকমাস ধরেই টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রত্যেক বরাদ্দেই ডিলার নয়ছয় করেন। গরিব কার্ডধারীদের পণ্যসামগ্রী তাদের না দিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রবিবার থেকে শুরু হওয়া টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন ওই দুই ডিলার। মাষ্টাররোলে ভুয়া স্বাক্ষর দিয়ে গরিবের জন্য বরাদ্দ সিংহভাগ নিত্যপণ্য বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই শতাধিক নারী-পুরুষের কাছে ফ্যামিলি কার্ড থাকলেও কোনো পণ্যসামগ্রী পাননি। তাঁরা ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে দীর্ঘ সময় কার্ড নিয়ে অপেক্ষা করেও পণ্য না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিম্ন আয়ের পরিবারকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার সুলভমূল্যে পণ্য সামগ্রী দিচ্ছেন। এটি বাস্তবায়ন করছেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। তাদের ডিলারদের মাধ্যমে সারাদেশেই ভর্তুকিমূল্যের পণ্যসামগ্রীগুলো বিতরণ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শেরপুর উপজেলার পনের হাজার দরিদ্র পরিবারকে উক্ত কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারকে দেওয়া হয়েছে একটি করে ফ্যামিলি কার্ড। সে অনুযায়ী শাহবন্দেগী ইউনিয়নের এক হাজার পাঁচশ’ একষষ্ট্রি পরিবার ওই ফ্যামিলি কার্ড পেয়েছেন। রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে তাদের মাঝে টিসিবির পণ্য বিতরণ শুরু করা হয়েছে। এ দফায় সয়াবিন তেল, পিয়াজ, মসুর ডাল ও চিনি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব পণ্য বিতরণে ডিলারদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের হামছায়াপুর গ্রামের আব্দুল বারিকের স্ত্রী ববিতা আক্তার তার নামের ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে টিসিবির পণ্যসামগ্রী নিতে খন্দকারটোলা মাজারগেট বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। দীর্ঘ সময় পর ডিলার তাকে বলেন, এ মাসের পণ্য বিতরণ শেষ। তাই কার্ড থাকলেও পণ্য না পেয়ে খালি হাতেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। একইভাবে দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিনমজুর সাদেক আলী কার্ড দেখিয়ে বলেন, এই কার্ড থেকে কী লাভ। কার্ড আছে, পণ্য নাই। কার্ড ছাড়াই সরকারি ভর্তুকি মূল্যের পণ্যসামগ্রী বিতরণ দেখিয়ে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন ডিলাররা।

ফলে সূলভ মূল্যের কোনো টিসিবির পণ্যই পাননি তাঁরা। এটি শুধু শাহবন্দেগী ইউনিয়নেই নয়, এই উপজেলার দশটি ইউনিয়নে একই চিত্র। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সেদিকে কোনো নজর নেই। প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রে দায়িত্ব থাকা (ট্যাগ অফিসার) কর্মকর্তারাও নাকে তেল মাখিয়ে ঘুমিয়ে আছেন। এসব অনিয়মের সঙ্গে কতিপয় ট্যাগ কর্তারা জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, আমি পরীক্ষার দায়িত্ব থাকার কারণে বিক্রয় কেন্দ্রে যেতে পারিনি। কিন্তু সেখানে আমার লোক আছে।

এছাড়া বিতরণের মাস্টাররোলে কার্ডধারীদের সব তথ্যই আছে। সেটি যাচাই-বাছাই করলেই সব বেরিয়ে আসবে। আর অনিয়ম পরীলক্ষিত হলেই কেবল ডিলার দায়ী হবেন। নইলে তাদের দোষ দেওয়া ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন। এদিকে কার্ডধারীরা পণ্য না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিলার আব্দুল আউয়াল ও তোতা মিয়ার পক্ষে তার ছেলে বাবু কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।তবে বাবু মিয়ার দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনেই টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়েছে। এখানে অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়নি। এছাড়া তাদের বেকায়দায় ফেলতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বরাদ্দের অতিরিক্ত ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। তাই তাদের কাছে ফ্যামিলি কার্ড থাকলেও কোনো পণ্য পাননি তাঁরা। এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে অত্র শাহবন্দেগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম আজাদ ডিলারদের বক্তব্য উঁড়িয়ে দিয়ে বলেন, ফ্যামিলি কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে উপজেলা থেকে। আমাদের বরাদ্দ অনুযায়ী কার্ড দেওয়া হয়।

আমি শুধু সেখানে স্বাক্ষর করেছি, আর মেম্বারা তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তাই কার্ড অতিরিক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য ওই দুই ডিলার ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়েছেন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো, ময়নুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। ফ্যামিলি কার্ডধারীরা টিসিবির পণ্য না পাওয়ার কথা নয়। তাই বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

কিউএনবি/অনিমা/২০.০৯.২০২২/বিকাল ৪.০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit