এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় আমন ও শীতের সবজি চাষ নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। বর্ষার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকরা দেরিতেই ডিজেলচালিত স্যালো মেশিনের সেচ নিয়ে আমনের চারা রোপণ শুরু করছেন। এদিকে হঠাৎ করে সার-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কৃষকের। তারা একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কিভাবে আবাদ শেষ করে ঘরে তুলবেন, তাদেরতা নিয়ে যত দুশ্চিন্তা। বিশেষ করে ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে চলতি আমন এবং আগাম শীত মৌসুমে সবজির আবাদ রিতিমত হুমকির মুখে পড়ছে। উপজেলার কৃষকদের আশঙ্কা সার-ডিজেলের দাম হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় আমন শীত মৌসুমে সবজির আবাদও হুমকির মুখে পড়বে ।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলা ও পৌর এলাকায় প্রায় ১১ হাজার ৫০টি ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি গভীর (ডিপ) ও বাকি সব অগভীর নলকূপ (স্যালো)। ডিজেল চালিত ছাড়াও বিদ্যুৎ চালিত নলকূপ রয়েছে ৭শ ৫০ টি। নারায়নপুর ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা লিমন সরকার বলেন, এ ইউনিয়নে এক হাজার ৭০টি ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র রয়েছে। এ সব স্যালো মেশিনর আওতায় গড়ে ১৫/২০ বিঘা জমি চাষ হয় বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তারা। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ডিজেল চালিত স্যালো মেশিনের আওতায় ৩৪ হাজার হেক্টরের মতো জমি চাষ হয়।
চলতি আমন মৌসুমে চাহিদামতো বৃষ্টি না হওয়ায় এ এলাকার কৃষকরা নিরুপাই হয়ে শেষমেশ স্যালো মেশিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। অধিকাংশ জায়গায় সেচের পানি দিয়ে আমন ধান রোপণ করেছেন কৃষকরা। ভরা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা না পেয়ে যখন সেচ নিয়ে আমন রোপনে কৃষকরা মহাব্যস্ত সময়পার করছেন ঠিক সেই সময় আকস্মিক ভাবে বেড়ে গেছে ডিজেলের দাম। আর এ কারণেই কৃষকের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তারা। আমন চাষের পাশাপাশি আরো বেশি দুশ্চিন্তা পড়েছেন শীতকালীন সবজিচাষিরা। কারণ শীতকালে সবজি চাষ স¤পূর্ণ সেচের ওপর নির্ভর করতে হয়। যে ভাবে ডিজেলের দাম বেড়েছে তাতে সবজি চাষে কয়েকগুণ খরচ বেড়ে যাবে বলে চাষিরা মনে করছেন। ব্যাপক ভাবে খরচ করে উৎপাাদিত সবজি ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন তো ?। সেই হিসাব কষছেন চাষিরা। বর্তমানে বৃষ্টির যে অবস্থা, সেই সাথে সার-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়াও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের তথ্যা কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, এ বছর উপজেলায় হাইব্রিড- ধানীগোল্ড, ব্রি-৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭, স্বর্ণ, প্রতিক ও রড-মিনিকেট জাতের আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৬শ ৮৫ হেক্টর। ১৩ আগস্ট পর্যন্ত রোপণ করা হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে। এ দিকে কৃষকরা মৌসুমী বৃষ্টির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠঘাট শুকিয়ে ঠনঠন করছে। পানির অভাবে কৃষকরা আমনের ক্ষেত তৈরী ও রোপণ করতে পারেননি। যে সময় আমন চাষ নিয়ে কৃষকের ব্যস্ত থাকার কথা, ঠিক সেই সময় বৃষ্টির অভাবে কৃষকের মাঝে হাহাকার নেমে এসেছে। কর্মবিমুখ হয়ে অলস সময় পার করেছেন তারা। আগস্ট মাসের প্রথমদিকে অল্পবৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা কিছুটা হলেও আশাবাদী হন। পরে আবারো বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টি দেখা না পেয়ে তারা সেচ নিয়ে আমন ধান রোপণ শুরু করেন। সেচের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছেন এ এলাকার ধান ও সবজি চাষিরা।
উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের চাঁদপাড়া গ্রামের কৃষক আবু তালেব, আরোজ মিয়া, নজরুল কাজী, আয়ুব হোসেন ও আব্দুর রব, বলেন, সেচের ওপর নির্ভর করে আমন ধানের চারা রোপণ করতে হচ্ছে। সবজির আবাদতো সেচের পানি দিয়েই করতে হয়। এ বছর আমনের ক্ষেত তৈরীতেও সেচ দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাদকরা কঠিন হয়ে পড়ছে। একই এলাকার কৃষক জাহিদুল ইসলাম, জারমান খান, হযরত আলী ও শরিফুল ইসলাম বলেন, ডিজেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামীতে স্যালো মেশিনে সেচ নির্ভর সব ধরনের আবাদ হুমকির মুখে পড়বে। ফসল চাষ করে কৃষকের খরচ উঠবে না বলে মনে করেন তারা। কৃষকরা আরো বলেন, ডিজেলের পাশাপাশি সারের দামও বেড়েছে। আবাদের প্রধান সার ইউরিয়া কিছুদিন আগেও ছিলো ৮শ টাকা বস্তা। বর্তমানে সরকার ৩শ টাকা বস্তা প্রতি বাড়িয়ে ১১শ টাকা করেছেন। এ যেন কৃষকের জন্য মরার পরে খাড়ার ঘা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, ডিজিলের দাম বৃদ্ধিতে কৃষিতে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে। তবে সারের দামে প্রভাব পড়বে কম। সরকার নানাভাবে কৃষককে প্রণোদনা দিচ্ছে। আগামীতে সরকার বিভিন্ন ফসলে প্রণোদনা বাড়তে পারে। তা ছাড়া উৎপাদিত পণ্যেরও দাম বাড়বে। এ কারণে কৃষক তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
কিউএনবি/আয়শা/১৩ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৫:৪৮