রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০৩ পূর্বাহ্ন

কোণঠাসা ইউরোপ, ‘সফল’ পুতিন

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২
  • ১১৭ Time View

ডেস্কনিউজঃ চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরুর পর কেটে গেছে পাঁচমাসের বেশি সময়। এই পাঁচমাসে যুদ্ধের আঁচ লেগেছে গোটা বিশ্বেই। করোনার মন্দা কাটিয়ে বিশ্ববাসী যখন সবে স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে যাচ্ছিলেন তখনই যুদ্ধের ধাক্কা। সেই ধাক্কা সারা বিশ্বের ওপর পড়লেও এ পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সফলই বলা যায়। তিনি যে পরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেন অভিযান শুরু করেন তা অনেকাংশেই বাস্তবায়িত হয়েছে।

ধীরে চলো নীতিতে ‘বাজিমাত’

ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল পুতিনের লক্ষ্য সমগ্র ইউক্রেন নয়। বরং ইউক্রেনের কিছু অংশ ‘দখল’ করে গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করা। অভিযান শুরুর পাঁচ মাস পর দখল করা অঞ্চলগুলোতে গণভোটের আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। এক্ষেত্রে পুতিনকে পরিকল্পনা সফলতার মুখ দেখতে যাচ্ছে।

যুদ্ধ শুরুর সময় অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের পরিকল্পনা করেছেন পুতিন। শুরুতে রুশপন্থী দোনবাস এলাকা ছিল পুতিনের লক্ষ্য।

এমনকি যুদ্ধের প্রথমেই রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রাখলেও এক পর্যায়ে সেই পরিকল্পনা থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দিকে নজর দেয় রুশ বাহিনী। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের সেভেরোদোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছেন। লিসিচানস্ক শহরও রুশ সেনাদের দখলে। লুহানস্ক অঞ্চলকেও স্বাধীন বলে ঘোষণা দিয়েছে মস্কো। পুতিনের এই ধীরে চলো নীতিও সফল বলা চলে।

তেল-গ্যাসেই ‘কিস্তিমাত’

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। ফলে রুবলের মান এত দ্রুত পড়তে থাকে যে ধারণা করা হচ্ছিল আন্তর্জাতিক বাজারে ধস নামতে যাচ্ছে রুশ মুদ্রার। কিন্তু নাটকীয়ভাবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে যে অবস্থানে ছিল, তার চেয়েও শক্তিশালী অবস্থানে এসেছে রুবল। আর রুবলের অবস্থান ফিরিয়ে আনতে শক্ত হাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুতিন। রাশিয়ার রপ্তানি আয়ের ৪০ শতাংশ আসে তেল-গ্যাস থেকে। আর রাশিয়ার রপ্তানি পণ্যের মধ্যে সিংহভাগই হচ্ছে তেল ও গ্যাস। যুদ্ধের ডামাডোলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে তেল গ্যাস নিয়েই বড় বাজি ধরেন পুতিন। সাফ জানিয়ে দেন এখন থেকে ‘অবন্ধুসুলভ’ দেশগুলোকে রাশিয়ার তেল-গ্যাস কিনতে হবে রুবলে।

বিশ্লেষকদের মতে, নিষেধাজ্ঞার রাশিয়ার জন্য শাপে বর হয়েছে। কারণ রাশিয়ার তেল-গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ কমলেও আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতির পাল্লাটা ভারি হচ্ছে না রাশিয়ার।

অন্যদিকে, তেল-গ্যাস বিক্রির অর্থ রুবলে নেওয়ায় রাশিয়ার মুদ্রার চাহিদা বেড়েছে। এই কারণেই মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুবল শক্তি ফিরে পেয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। যেহেতু ইউরোকে রুবলে বদলে রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কিনতে হয়, সে জন্য রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের বড় চাহিদা তৈরি হয়েছে। এর ফলে রুবলের দামও বেড়েছে।

এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন দেশ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় রাশিয়া অনেক জিনিস আমদানি করতে পারছে না। রুশ নাগরিকরাও যুদ্ধের কারণে আগের মতো বিদেশে যেতে পারছে না। ফলে তাদের ডলার ও ইউরোর চাহিদা কমে গেছে।

এদিকে, চীন এবং ভারতের কাছে জ্বালানি বিক্রির মাধ্যমে রাশিয়ায় বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে।

সম্প্রতি মস্কো সফরে গিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানও রুবল দিয়ে গ্যাস কেনার ঘোষণা দিয়েছেন।

তাই এ কথা বলা যেতেই পারে যে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পরও তেল-গ্যাসকে ব্যবহার করে কিস্তিমাত করেছেন পুতিন।

কোণঠাসা ইউরোপ

ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার গ্যাস ও তেলের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পুতিন রুবল দিয়ে তেল-গ্যাসের দাম মেটাতে বলায় ইউরোপের অনেক দেশেরই ‘আঁতে ঘা’ লাগে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রম পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করেছে। রুবলে মূল্য পরিশোধ না করলে গ্যাস সরবরাহ চালু করা হবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

জার্মানি রাশিয়ান গ্যাসের উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল দেশগুলোর মধ্যে একটি। নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপ লাইন দিয়ে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় ইউরোপের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি জার্মানির শিল্প-কারখানাগুলো ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়েছে। শীতপ্রধান দেশটিতে আসন্ন শীতে নাগরিকদের বাড়িঘর গরম রাখতে বাড়তি বিদ্যুতের জোগান দেয়া সম্ভব হবে কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছে জার্মানি। দেশটির অর্থমন্ত্রী রোবার্ট হাবেক এই সংকটকে স্মরণকালের অন্যতম আখ্যা দিয়েছেন।

এছাড়া জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ নাগরিকদের টাই না পরার অনুরোধ জানিয়েছেন। দেশটির পরিবেশ পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই বিদ্যুতের ব্যবহার কম রাখার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করছে।

জ্বালানি সাশ্রয়ে ১ আগস্ট থেকে স্পেন সরকার ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো জ্বালানি সঞ্চয় কর্মসূচি চালু করেছে।

রাশিয়া মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় কোণঠাসা ইউরোপের দেশগুলো নিজেদের মতো করে পরিস্থিতি সামাল নেওয়ার চেষ্টা করছে। হন্যে হয়ে রাশিয়ার তেল-গ্যাসের বিকল্প খুঁজছে কোনো কোনো দেশ। কেউ কেউ আবার চাপে পড়ে হয়েছে নমনীয়।

এরই মধ্যে জার্মানি, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ার মতো দেশের গ্যাস কোম্পানিগুলো রাশিয়ার গ্যাজপ্রম ব্যাংকের মাধ্যমে ইউরোতে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে রাজি হয়েছে। এসব ইউরো পরে ব্যাংকের মাধ্যমে রুবলে বদলে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

অস্ট্রিয়া ও ইতালির গ্যাস কোম্পানিগুলোও গ্যাজপ্রম ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার পরিকল্পনা করছে।

কোণঠাসা ইউরোপ রাশিয়ার তেল-গ্যাসের বিকল্প খুঁজে বের করে ঘুরে দাঁড়ায় কি না সেটাই দেখার বিষয়।

কিউএনবি/বিপুল/১১.০৮.২০২২/ রাত ১১.৫০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit