বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০২:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ: এক ম্যাচে ৬ রেকর্ড ঢাকার ১১ স্থানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আ.লীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ১৩১ ৯ বলের সুপার ওভার, পাঁচ বলে ৫ রান করতে পারেনি বাংলাদেশ চিকিৎসক হয়েও সুরের ভুবনে ঝংকার তুলছেন রানা প্রশাসনে রদবদল নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি তাঁবেদার থেকে দেশ রক্ষার সুযোগ তৈরি হয়েছে: রেজাউল করিম দৌলতপুরে ক্লিনিক ব্যবসার আড়ালে দেহ ব্যবসা : আটক-২ অবিশ্বাস্য থ্রোতে ভাঙল ৪৪ রানের জুটি, বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরালেন মিরাজ ফুলের মতো পবিত্র মানুষগুলোই আপনাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে”–কুড়িগ্রামে পথসভায় ব্যারিস্টার ফুয়াদ কিম বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজনা, প্রতিরক্ষা জোরদারের ঘোষণা দক্ষিণ কোরিয়ার

সিনেমার গল্পকে হার মানাবে যে বাস্তবতা!

বাদল আহাম্মদ খান ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ।    
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৭ জুলাই, ২০২২
  • ১৫৫ Time View
বাদল আহাম্মদ খান বাদল আহাম্মদ খান : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাপ্রতিনিধি : গর্ভে বেড়ে উঠছে সন্তান। প্রয়োজন বাড়তি খাবারের। ‘স্বামীহীন’ রুমা আক্তার দিশাহীন। পেটপুড়ে ভাত খাওয়াই দায়। বাড়তি খাবার তো আশাতীত। আশার প্রদীপ দেখায় পরিচিত এক দোকানী। প্রতিদিন চা, বিস্কুট, কেক খেতে দিবেন। তবে শর্ত হলো জন্মের পর সন্তান দিয়ে দিতে হবে। অসহায় রুমা সেই শর্তে রাজি হন। সন্তান দিতে হবে- এমন কথা মনে করালে কখনো কখনো মুখ ফসকে না করে বসেন। পরক্ষণেই দোকান বাকি ও শর্তের কথা চিন্তা করে কথা ফিরিয়ে নেন। সুযোগ সন্ধানী দোকানি রুমা সন্তান প্রসবের সময় কিছু টাকা ধার দেন। 

রুমা একসঙ্গে দুই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। হাজির ওই দোকানি। এক সন্তান দিয়ে দিতে হবে। কখনো ফোনে কখনো বা স্বশরীরে এসে হুমকির সুরেই সন্তান দিয়ে দিতে বলে গেলেন। এতে রুমা রাজি নন। সন্তান নিয়ে যাবে এমন চিন্তায় রুমার মন খারাপ। রুমার দুই সন্তানের নাম রাখা হয়েছে হাসান ও হোসেন। জিলহজ¦ মাসকে সামনে রেখে এ নাম রাখা। হাসান ও হোসেন বেশ অসুস্থ। তাদেরকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হাসান ও হোসেনকে ইতিমধ্যেই এক ব্যাগ করে রক্ত দেওয়া হয়েছে।

এদিকে অসহায় রুমা আক্তারকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে ভাগ্য বদলে যায়। সরকারের তরফ থেকে রুমাকে বাড়ির ব্যবস্থা করে দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে।  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকির নজরে এলে তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক ব্রাহ্মবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেন। মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে কথা হয় রুমা আক্তারের সঙ্গে। এ সময় তিনি বলেন, ‘ভালোভাবে সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা চিন্তা করে মোল্লার (দোকানির প্রচলিত নাম) কাছ থেকে চা, বিস্কুট, কেক খেয়েছি। প্রয়োজনে টাকা নিয়েছি। তখন মোল্লা আমাকে বলতো বাচ্চা হলে যেন দিয়ে দেই। ওনি কাকে যেন বাচ্চা দিয়ে দিবেন। আমি না করতাম। টাকা দিয়ে দিবো বলতাম। আমার বাচ্চা জন্ম হওয়ার সময় মোল্লা কিছু টাকা দেয়। এখন সে একটা বাচ্চা নিয়ে যেতে চাই। আমি আমার বাচ্চা কাউকে দিবো না।’    

ভোলার লালমোহন উপজেলার সন্তান রুমা আক্তার। বয়স ৩০ বছরের মতো। সৎ মায়ের অত্যাচারে ছোট বেলাতেই বাড়ি থেকে বের হওয়া। বেড়ে উঠা এখানে সেখানে। কয়েক বছর আগে বিয়ে হয় হবিগঞ্জের যুবকের সঙ্গে। স্বামীকে নিয়ে থাকতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায়। কয়েক মাস হলো বড় সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী আরেকজনকে বিয়ে করে অন্যত্র চলে গেছে। রুমা জানেন না তার স্বামী কোথায়। আখাউড়ার খড়মপুরে আসার সূত্র ধরে দিনমজুর ইব্রাহিম মিয়ার সঙ্গে রুমার বিয়ে হয়। এক কন্যা সন্তান নিয়ে ভালোই কাটছিলো রুমার সংসার। দ্বিতীয়বার গর্ভধারণের পর প্রায় ছয়-সাত মাস আগে কন্যাকে নিয়ে চলে যান স্বামী ইব্রাহিম। মাথায় বাজ পড়া রুমা ভাড়া বাসা ছেড়ে আশ্রয় নেন আখাউড়া রেলওয়ে জংশন স্টেশনে। অন্যের কাছে হাত পেতে চলতো পেট।

সুমি আক্তার নামে এক নারীকে মা ডাকতেন। সেই নারী ২৮ জুন রাত ১১টার দিকে রুমাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। সেখানেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দুই ছেলে সন্তানের জন্ম দেন রুমা আক্তার। জিলহজ মাসকে সামনে রেখে চিকিৎসকদের পরামর্শে সন্তানদের নাম রাখা হয় হাসান ও হোসেন। তবে সন্তানদেরদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন রুমা। নিজে এখানে সেখানে বেড়ে উঠলেও ছেলে সন্তানদের কিভাবে লালন পালন করবেন সে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তিনি। এ নিয়ে ৩০ জুন কালের কণ্ঠের অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক শাহগীর আলম  জানান, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আহসান কিবরিয়া সিদ্দিক্কীর নজরে আসে। তিনি বিষয়টি অবহিত করার পাশাপাশি রুমা আক্তারের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরায় প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানান। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ওই নারীর দায়িত্ব নিয়েছে। ওই নারীকে উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘর দেওয়া হবে। এছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। তাকে সুবিধাভোগীর আওতায় এনে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। আত্মনির্ভরশীলতার জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সর্বোপরি তিনি যেন পিছিয়ে না পড়েন সেজন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন ও আখাউড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। নিয়মিত খোঁজ রাখা হচ্ছে ওই নারী ও তার সন্তানদের।’

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে আখাউড়া হাসপাতালের ধাত্রী (মিডওয়াইফ) তানিয়া আক্তার ও রোকসানা আক্তার বলেন, ‘প্রসব বেদনা নিয়ে ওই নারী হাসপাতালে আসে। প্রসব করাতে গিয়ে দেখি টুইন বেবি। কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করানোয় প্রসূতি নারীরও বিষয়টি জানা ছিলো না। সমস্যা দেখা দেয় যখন দেখা যায় ওই নারীর এক সন্তান গর্ভে উল্টো অবস্থায় আছে। আগেও এক সন্তান স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ভালোভাবেই প্রসব করানো যায়। রাত ১১টা ১০ মিনিট ও ২০ মিনিটের সময় ওই  নারী দু’সন্তান প্রসব করেন। হাসপাতালের সেবিকা (নার্স) সানজিদা মাহমুদ বলেন, ‘জন্মের পর মা ও শিশু দু’জনের অবস্থাই ভালো দেখা যায়। তবে এক শিশুর ওজন একটু কম হওয়ায় তাকে অবজারভেশনে রাখা হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে দুই সন্তানকে নতুন কাপড় দেওয়াসহ সব ধরণের সহযোগিতা করা হয়।’

সুমি আক্তার নামে এক নারী বলেন, ‘পরিচয়ের সুবাদে আমাকে মা ডাকে রুমা। বুধবার রাতে আমি একজনের জন্য ভাত নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে কান্না করতে দেখি। তখন সে সমস্যা হচ্ছিল বলে জানায়। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আখাউড়া হাসপাাতলে নিয়ে যাই। এখানে সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় কোনো ধরণের সমস্যা ছাড়াই রুমা দুই ছেলে সন্তানের জন্ম দেয়।’সুমি আক্তার আরো জানায়, স্টেশন এলাকায় মোল্লা নামে এক দোকানদারের কাছ থেকে মাঝে মাঝে কিছু খেতো রুমা। সন্তান প্রসবের সময় দুই হাজার ৩০০ টাকাও দেয়। এ অবস্থায় এখন ওই দোকানি এক সন্তানকে দিয়ে দেওয়ার জন্য বলতেছে। কিন্তু রুমা কোনোভাবেই সন্তান দিতে রাজি নন। রুমা আক্তার বলেন, ‘মেয়েটাকে নিয়ে স্বামী চলে যাওয়ার পর স্টেশনে আশ্রয় নেই। ছোট বেলা থেকেই আমি বাবা-মা হারা। সৎ মায়ের অত্যাচারে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। আমাদের পাঁচ বোনের মধ্যে এক বোন মারা গেছে। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। পত্রিকায় খবর প্রকাশ হলে সরকার ঘর দিবে বলে শুনেছি। সরকারের পক্ষ থেকে আমার খোঁজ রাখা হচ্ছে।’ তবে তিনি দোকানিকে কোনো সন্তান দিবেন না বলে জানান।

লিটন মোল্লা নামে দোকানী মঙ্গলবার বিকেলে  বলেন, ‘ওই মহিলা গরীব। সব ধরণের সহযোগিতার করার শর্তে সকলের সামনে সে কথা দিয়েছে ছেলে হোক মেয়ে হোক সন্তান দিয়ে দিবে। এ কারণে আমি দোকান বাকিসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছি। সন্তানের গর্ভ যখন পাঁচ মাস তখন থেকেই সে আমার দোকান থেকে এটা সেটা খায়। এখন ওই মহিলা সন্তান দিবে না বলতেছে। সে সন্তান পালতে পারবে না বলে আমার এক ভাতিজার জন্য নিবো ভেবেছিলাম, যার ২২ বছর ধরে সন্তান হয় না।’ এভাবে কারো সন্তান নিয়ে যাওয়া ঠিক কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে লিটন মোল্লা ভ্যাবাচেকা খান। তিনি বলেন, ‘এখন যদি ওই মহিলা তার সন্তান পালতে পাওে এতে আমার আপত্তি নাই। এ নিয়ে আমি কোনো জোর করছি না।’

কিউএনবি/আয়শা/০৭ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:৩০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit