অসময়ে বিপাশার চলে যাওয়া এবং আমাদের জন্য সতর্কবার্তা
————————————————————————–
১. নজরুল সংগীতের নন্দিত শিল্পী বিপাশা চলে গেলেন অসীমের পানে। সেখানে গেলে কেউ আর ফেরে না। মৃত্যু মানুষের জীবনের অনিবার্য সত্য। কিন্তু, মাত্র ৫৩ বছরে চলে যাওয়াকে কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।তিনি রক্তরোগ,থাইরয়েডসহ কিছু স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন। হটাৎ করে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন । রিং পরানোর কথা ছিল তার আগেই মৃত্যুর কোলে তিনি ঢলে পরলেন।
২.অনেক শিল্পীদের কাছে তিনি ছিলেন ‘আইকন’। উঁচু স্থান অর্জন করা যেমন কঠিন, রক্ষা করা আরও কঠিন। সেজন্য প্রায় সব সময়ই অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা’য় থাকতে হয়। মানসিক চাপ ক্রনিক কোন রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এজমা বাড়াতে পারে। তাই মানসিক চাপ পরিহার করা, ‘বায়োলজিকাল ক্লক ‘ মেনে চলা এধরণের অসুখ নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করতে পারে।
৩.বয়স পঞ্চাশ কেন চল্লিশ পেরুলেই দেহের ভিতরে নানা অসুখের বীজ বাসা বাঁধতে পারে। এইসব অনেক রোগেরই লক্ষণ প্রকাশিত হয় না। আবার যদি হয়েও থাকে তখন রোগটি জটিল আকার ধারণ করে প্রায় অনিরাময়যোগ্য হয়ে পরে। তাই বছরে অন্তত দুইবার ক্ষেত্র বিশেষে তার চেয়েও বেশী ”Throughly Checkup’ করা উচিৎ। দেখে নিন নীরব ঘাতক উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস আছে কি না। লিভার ফাংশন টেস্ট করে জেনে নিন লিভার যথাযথ আছে কি না, ক্রিয়াটিনিন পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির অবস্থা জেনে নিন।
৪.হাই কোলেস্টেরল এই সময়কালে আরেক গুপ্ত ঘাতকের নাম। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা জেনে নিন। ভালমন্দ দুই ধরনের কোলেস্টেরল আছে। সেগুলির প্রোফাইল, রেশিও জানা দরকার। এই ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ‘রেড মিট ‘ কমিয়ে মাছ, শাকসব্জি খাদ্য তালিকায় রাখুন। ফাস্ট ফুডকে না বলুন। ভাতসহ শর্করা জাতীয় কমিয়ে ফল, দুধ, ডিম রাখুন। শুধু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলেই অনেক অসুখকে না বলা যাবে অথবা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম শরীর ও মনকে প্রফুল্ল রাখবে।
৫.পুরুষ হলে প্রস্টেট গ্ল্যান্ড পরীক্ষা করিয়ে নিন। স্ত্রী হলে জরায়ু বা স্তনে ক্যান্সার যে বাসা বাঁধে নি সেটি নিশ্চিত হন। বুকে ব্যথা, ধড়ফড় করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। মনে রাখা দরকার ‘A stich in time saves nine ‘.
৬.খোদ আমেরিকাতে মানসিক রোগ আশংকাজনকভাবে বাড়ছে। তাই হতাশা, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গেলে সেটি লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। মাদক, এলকোহল, সিগারেটের আরেক নাম ‘ ইচ্ছামৃত্যু’।
৭.টিনএজ আমাদের সন্তানদের মনোদৈহিক অনেক পরিবর্তন আনে। কেউ উদ্ধত আচরণ করে কেউ বা অন্তর্মুখী হয়ে পরে। ‘ আমার সন্তান উচ্ছনে গেছে ‘ এটি না ভেবে সংবেদনশীলতা, বুদ্ধিমত্তা আর ”Good Parenting ‘ এর মাধ্যমে এটি মোকাবেলা করুন। ‘ অমুকের ছেলে তমুক পারে,তুই পারবি না কেন ‘ এমন কথায় তাদের মনে হীনমন্যতা আনতে পারে। আত্মহননের নজিরও কম নেই।
৮.নারীদের ৪০-৪৫ বছর বয়সে পিরিয়ড কমতে কমতে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।বিষয়টিকে ‘ মেনোপজ ‘ বলা হয়। এটি সম্পুর্ণই একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। হরমোনের ব্যপক পরিবর্তন ঘটে। তার প্রভাবে Hot Flash সহ আচরণে নানা ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে। ‘Prevention is better than cure ‘ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার চেয়ে প্রতিরোধে সতর্ক হোন। সদ্য পঞ্চাশ অতিক্রান্ত বিপাশা আমাদের সেই ম্যাসেজই দিয়ে গেলো।
লেখকঃ মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ, এমবিবিএস, এমফিল (বিএসএমএমইউ) ক্লাসিফাইড স্পেশালিষ্ট, বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস।তাঁর ফেসবুক টাইমলাইন থেকে অনুমতি স্বাপেক্ষে সংগৃহিত।
কিউএনবি/ বিপুল/ ২২.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/ রাত ১১.০২