স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর) : একদিকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা, অপরদিকে সার, বিদ্যুৎ, ডিজেলের দাম উর্ধমুখী হওয়া, তার ওপর তীব্র শীতে বীজতলা নষ্ট হওয়ার দরুন চলতি বোরো মৌসুমে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ভবদহ সংলগ্ন ছয়টি ইউনিয়নে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ না করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে চাষীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।চলতি মৌসুমে মাত্র ৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। জানাযায়, মনিরামপুর উপজেলার মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রীনদীর নাব্যতা হারিয়ে তলদেশ উচু হয়ে ভবদহ সংলগ্ন মনিরামপুর উপজেলার বিল বোকড়, বিল কেদারিয়া, আড়পাতা সহ ১৫ টি বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতার দেখা দিয়েছে।
মনোহরপুর, নেহালপুর, কুলটিয়া, দূর্বাডাঙ্গা, হরিদাসকাটি ও ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য অবকাঠামোগুলো এখনও জলমগ্ন রয়েছে। এসব এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানাগেছে। উপজেলা উপ সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষন অফিসার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস জানান, চলতি বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে ডিসেম্বর থেকে। আর তা চলবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এবার বোরো আবাদের লক্ষমাত্র্ ানির্ধারন করা হয়েছে ২৭ হাজার পাঁচ’শ হেক্টর জমি। ভবদহপাড়ের মনোহরপুর গ্রামের কৃষক মোশাররফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার কারনে আমার পাঁচ বিঘা জমিতে এবার আবাদ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তার ওপর শীতজনিত কারনে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চারার অভাবে আবাদ করা সম্ভব নয়।
হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান বিদ্যুৎ, ডিজেল, সারের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে করে লোকসানের ভার মাথায় নিয়ে বোরো আবাদ করা সম্ভব নয়। হরিদাসকাটির ইউপি সদস্য প্রনব কুমার বিশ্বাস বলেন, জলাবদ্ধতার কারনে এবার কুচলিয়া, পাঁচকাটিয়া, কুমারসিমা, ভূলবাড়িয়া মাঠে এবার বোরো আবাদ করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। ভবদহ এলাকার কৃষক নেতা পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, এতো আন্দোলন-সংগ্রাম করার পরও ভবদহ জনপদের মানুষের হাহাকার ঘুচলোনা। এ জনপদের কৃষকরা বছরে একটি মাত্র ফসল ঘরে তুলতে পারলেও অভিশপ্ত ভবদহের জলাবদ্ধতায় তাও সম্ভব হচ্ছেনা। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি কমরেড গাজী আব্দুল হামিদ বলেন, প্রতিবছর ভবদহ এলাকার বিল সমুহ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য সরকার লাখ লাখ টাকা বরাদ্ধ করছে।
কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা ও স্থানীয় এক শ্রেণীর দালালরা জোগসাজস করে তার সিংহ ভাগই নিজেদের পকেটে ভরছে। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার আবুল হোসেন জানান, উপসহকারি কৃষি অফিসারদের রিপোর্ট মোতাবেক জলাবদ্ধতার কারনে ভবদহ এলাকায় এবার চার’শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে কিছু ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় আবাদের জন্য সেচের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে।
কিউএনবি/আয়শা/৬ই জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:২৮