বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন

নিয়ম না মানার হ্যাপির ‘দুর্নীতির হাব’  নওগাঁর আত্রাইয়ে স্বাস্থ্যসেবা হুমকিতে!

মো.সজিব হোসেন নওগাঁ প্রতিনিধি ।
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১২ Time View
মো.সজিব হোসেন নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. রোকসানা হ্যাপির বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সরকারি বিধি অনুযায়ী এক কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি সময় থাকার নিয়ম না থাকলেও তিনি ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর যোগদানের পর থেকে এখনো পর্যন্ত একই পদে বহাল রয়েছেন।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ডা. হ্যাপির দীর্ঘদিনের অবস্থানকে পুঁজি করে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে রীতিমতো দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছেন। করোনা মহামারির সময় রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে, বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেই সময় নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের জন্য নির্ধারিত প্রণোদনা ভাতার একটি বড় অংশ আত্মসাৎ করা হয় বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৪ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পোশাকের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকেও ঘুষ বাবদ জনপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যেখানে প্রতিজনের প্রাপ্য ছিল ১১ হাজার টাকা। এছাড়াও, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণের গাছ টেন্ডার ছাড়াই কেটে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাত, দীর্ঘদিন নষ্ট জেনারেটরের মেরামতের নামে ভুয়া বিল তৈরি করে বাজেট নয়-ছয় করার মতো গুরুতর অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
স্বামীকে দিয়ে ‘ক্ষমতার প্রভাব:
ডা. হ্যাপির স্বামী, যিনি পেশাগতভাবে বেকার, তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর প্রভাব খাটিয়ে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন মেরামতের কাজের ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে তাতে নিজের স্বাক্ষর বসিয়ে দেন। এছাড়া হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের ভয়-ভীতি দেখানো, এমনকি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগও রয়েছে।
চলমান তদন্ত ও স্থানীয়দের ক্ষোভ:
এ প্রসঙ্গে নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, ডা. হ্যাপির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আত্রাই উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মান্নান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ডা. হ্যাপির যোগদানের পর থেকেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত ওষুধ ও চিকিৎসা সেবাও নিয়মিতভাবে আত্মসাৎ করা হচ্ছে।”
উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় আত্রাই প্রেসক্লাবের সভাপতি উত্তাল মাহমুদসহ বেশ কয়েকজন বলেন, “দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুযোগ নিয়ে ডা. হ্যাপি স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন।
অদৃশ্য শক্তি’র ছায়ায় বহাল তবিয়তে: 
বদলির আদেশ থাকা সত্ত্বেও ডা. হ্যাপি এখনো পদে বহাল আছেন, যার পেছনে ‘অদৃশ্য শক্তি’ কাজ করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা বলেন, বিসিএস ক্যাডার না হয়েও তিনি নিজেকে উচ্চপদস্থ বিসিএস কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন, যা প্রতারণার শামিল। 

বিষয়টি মন্তব্য জানতে চেয়ে আত্রাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. রোকসানা হ্যাপির মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

স্থানীয়দের প্রত্যাশা: দুদকের হস্তক্ষেপ:
স্থানীয় সচেতন মহল এবং ভুক্তভোগীরা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা আশা করছেন, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন ও দোষীদের যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা হবে।

কিউএনবি/আয়শা/২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /সন্ধ্যা ৬:২২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit