 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হামাসের দেওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির প্রস্তাবটিও প্রত্যাখ্যান করল যুদ্ধবাজ ইসরাইল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গঠিত এক খসড়া পরিকল্পনায় হামাসের কাছ থেকে ১০ জন জীবিত জিম্মির মুক্তি ও প্রায় ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়।
কিন্তু তেলআবিবের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি ‘অগ্রহণযোগ্য’, কোনো ‘দায়িত্বশীল সরকার এটি গ্রহণ করতে পারে না’। খবর টাইমস অব ইসরাইলের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ইসরাইলি কর্মকর্তার মতে, ‘হামাস এমন সব শর্ত দিচ্ছে, যা গ্রহণ করলে যুদ্ধের মূল লক্ষ্য– হামাসকে ধ্বংস এবং সব জিম্মির মুক্তি– তা অর্জন সম্ভব হবে না’।
তার ভাষায়, এই প্রস্তাব ‘বাস্তবসম্মত নয়’ এবং ‘ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের মূল প্রস্তাব থেকে এটি অনেক দূরে’।
হামাসের দাবিতে কী ছিল?
লেবাননের সংবাদমাদধ্যম আল-মায়াদিন জানিয়েছে, আলোচনায় হামাস ৭০ দিনের যুদ্ধবিরতি চেয়েছে, ১০ জন জীবিত জিম্মিকে দুই ধাপে (৫+৫) ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, প্রতিদিন ১,০০০ মানবিক সহায়তা (ত্রাণ) ট্রাক গাজায় ঢোকানোর দাবি করেছে এবং অস্ত্র প্রস্তুত, পাচার বা ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে দখলদার ইসরাইল বলছে, এই দাবিগুলো কেবলই ‘চুক্তি করার নাটক মাত্র’!
যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা ও নতুন দূত
এ আলোচনায় মধ্যস্থতা করেছেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ও ফিলিস্তিনি-আমেরিকান ব্যবসায়ী বিশারা বাহবাহ। উইটকফ এর আগে মার্কিন-ইসরাইলি জিম্মি এডান আলেক্সান্ডারের মুক্তিতেও মধ্যস্থতা করেছিলেন।
এদিকে ট্রাম্প রোববার জানান, ‘গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যুদ্ধ থামানো যায় কি না’।
গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি
বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অনাহারক্লিষ্ট গাজা উপত্যকাজুড়ে সংঘর্ষ আবার শুরু হয়েছে। ইসরাইল দাবি করেছে, তারা গত কয়েক দিনে ৮০০ সশস্ত্র হামাস সদস্যকে হত্যা করেছে। তবে হামাস বলছে, এই সময়ে ৩,৭৮৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরাইলের হিসাব মতে, এখনো ৫৮ জন জিম্মি গাজায় আটক রয়েছেন। যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জিম্মি পরিবারগুলোর প্রতিক্রিয়া
এদিকে ইসরাইলের ‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ নামে জিম্মিদের পরিবারগুলোর একটি সংগঠন জানিয়েছে, ‘আংশিক চুক্তি ইসরাইলের জন্য পরাজয়। এই চুক্তি যুদ্ধের অবসান ও সব জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করে না’।
তাদের মতে, ‘সরকার চাইলে আগামীকালই এমন চুক্তি করতে পারে, যা সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনবে ও যুদ্ধের ইতি ঘটাবে’।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
এদিকে যুদ্ধবাজ ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগেই ঘোষণা করেছেন যে, ‘হামাসকে ধ্বংস না করে, গাজায় তাদের প্রভাবকে উৎখাত না করে এবং সব জিম্মিকে মুক্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না’।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চালানো ইসরাইলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৫৪,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন আরও বেশ কয়েক হাজার।
অন্যদিকে ইসরাইল বলছে, এ পর্যন্ত তারা ২০,০০০-এর বেশি হামাস যোদ্ধা এবং ৭ অক্টোবরের হামলায় অংশ নেওয়া ১,৬০০ জনকে হত্যা করেছে। বিপরীতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নিহত সদস্যের সংখ্যা এখন ৪২০।
এ অবস্থায় নতুন কোনো যুদ্ধবিরতি বা চুক্তির বাস্তবায়ন আপাতত সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যস্থতাকারীরা নতুন সমঝোতার খোঁজে এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
কিউএনবি/আয়শা/২৬ মে ২০২৫, /রাত ৮:৩৪