বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন

ইসলামের দৃষ্টিতে ‘ক্যাটফিশিং’

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৬২ Time View

ডেস্ক নিউজ : বর্তমানে মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এই অঙ্গনে মানুষের বিচরণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অপরাধীরাও এই অঙ্গন ব্যবহার করে মানুষের অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেওয়া এবং সম্মান ক্ষুণ্ন করার বিভিন্ন কৌশল বের করে নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষকে প্রতারিত করার তেমনই একটি কৌশল ক্যাটফিশিং।

ক্যাটফিশিংয়ের পদ্ধতি হলো— প্রথমত প্রতারকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে কোনো একজনকে টার্গেট করে। তারপর নিজের পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে। টার্গেটকে আকর্ষণ করতে ও তার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে অপরাধীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারও সহযোগিতা নেয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে অন্যের আকর্ষণীয় ছবি ও পোস্টগুলো নিজের ভুয়া প্রোফাইলে পোস্ট করেও টার্গেটকে বোকা বানাতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলে অর্থ হাতিয়ে নেয়।

আবার এমনও হতে পারে যে ডেটিংয়ে আগ্রহী ব্যক্তিকে কোথাও দেখা করার জন্য ডেকে নিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতে পারে।
ইসলামের আলোকে ক্যাটফিশিংকে বিচার করলে কয়েকটি অপরাধ সংঘটিত হতে দেখা যায়, যার প্রতিটিই ইসলামে নিষিদ্ধ।

প্রতারণা নিষিদ্ধ : ইসলাম প্রতারণাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০২)।

ক্যাটফিশিংয়ের মাধ্যমে যখন একজন ব্যক্তি অন্যকে মিথ্যা পরিচয় দেয়, তখন তা প্রতারণার একটি রূপ।

মানবিক মর্যাদা ও সম্মান : ইসলাম মানুষের সম্মান ও মর্যাদাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। ক্যাটফিশিংয়ের মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে মিথ্যা সম্পর্ক গড়ে তাকে প্রভাবিত করা, তার অনুভূতিতে খেলা এবং তার ব্যক্তিগত গোপন তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তার সম্মানহানি করা হয়। ইসলামে এসব কাজকে গুরুতর অপরাধ বলে বিবেচনা করে।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারে উঠে চিৎকার দিয়ে বললেন, হে লোকেরা, যারা মুখে ইসলাম গ্রহণ করেছ, কিন্তু অন্তরে এখনো ইমান দৃঢ় হয়নি! তোমরা মুসলমানদের কষ্ট দেবে না, তাদের লজ্জা দেবে না এবং তাদের গোপন দোষ অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হবে না। কেননা যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ অনুসন্ধানে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তার গোপন দোষ প্রকাশ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তির দোষ আল্লাহ প্রকাশ করে দেবেন, তাকে অপমান করে ছাড়বেন, সে তার উটের হাওদার ভেতরে অবস্থান করে থাকলেও। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩২)

বিবাহ-পূর্ব অনৈতিক সম্পর্ক : কখনো কখনো ক্যাটফিশিংয়ের উদ্দেশ্য হতে পারে কারো সঙ্গে বিবাহ-পূর্ব অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে। সামনে সামনে না হোক, ভার্চুয়ালি টার্গেটের সঙ্গে রগরগে কথাবার্তা ও চ্যাট করার উদ্দেশ্যে। মানুষ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ক্যাটফিশিংয়ের শিকার হয় অনলাইন ডেটিং সাইটগুলোতে। এটাও ইসলামে নিষিদ্ধ। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) নবিজি (সা.) সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘আদম সন্তানের ওপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। নিঃসন্দেহে দুই চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দুই কানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া, হৃদয়ের ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৬৪৭)

সামাজিক সমস্যা ও সম্পর্কের

ক্ষতি : ইসলাম সামাজিক সম্পর্ক ও শান্তি রক্ষার পক্ষে। ক্যাটফিশিংয়ের ফলে সমাজে বিভেদ, বিশ্বাসঘাতকতা ও সম্পর্কের ক্ষতি হতে পারে, বিশেষ করে তার পরিচয় বহন করে ভিকটিমকে প্রতারিত করা হয়েছে, তার সঙ্গে ভিকটিমের বড় ধরনের বিভেদ তৈরি হতে পারে, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।

আবদুর রহমান ইবনে গানম (রা.) থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেছেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ওই সব লোক উত্তম, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। আর আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে নিকৃষ্ট ওই সব লোক, যারা চোগলখুরি করে বেড়ায়, দুই বন্ধুর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায় এবং যারা সতীসাধ্বী রমণীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়ার সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ৪৩০১)

মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের অপরাধ থেকে দূরে রাখুন। সর্বাবস্থায় সতর্ক থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

কিউএনবি/অনিমা/০২ জানুয়ারী ২০২৫,/রাত ৮:৩৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit