বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর প্রকাশ খালেদা জিয়া : একজন মহীয়সীর মহাপ্রয়াণ সাবেক প্রতিমন্ত্রীর স্বামীর ‘বীর প্রতীক’ খেতাব বাতিল নওগাঁ ছয়টি সংসদীয় আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ মোট ৪১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল  নিস্তব্ধ এভারকেয়ার, অশ্রুসিক্ত চোখে ‘আপসহীন’ নেত্রীর জন্য প্রার্থনা আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল ইয়েমেনের রাঙামাটিতে ৬৫০ লিটার চোলাই মদভর্তি গাড়িসহ আটক-১ ঋণের আশ্বাসে ধর্ষণ,ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইল! রাঙামাটিতে ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা নেত্রকোণায় নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে অ্যাডভোকেসি ডায়ালগ সভা অনুষ্ঠিত চৌগাছায় রাগীব আহসান নিহাল আইডিয়াল স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ

আগস্ট বিপ্লবঃ শহীদ নূর আলমের নবজাতক শিশু দেখতে পেলোনা বাবাকে

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪৪ Time View

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ নূর আলম বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দিয়ে শহিদ হয়েছেন। ডান চোখে গুলি লেগেছিল তার। এদিকে বিয়ের প্রথম বছর না পেরুতেই খাদিজা হারালেন তার স্বামীকে। এমনকি শ্বশুর বাড়িতেও ঠাঁই হলো না তার। আর নবজাতক সন্তান বঞ্চিত হলো পিতার প্রথম স্নেহের পরশ থেকে।

চিকিৎসক জানিয়েছেন, নবজাতক আব্দুল খালেক হৃদরোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। স্বামী হারানোর শোক আর সন্তানের অসুস্থতায় দিশেহারা এখন খাদিজা খাতুন (১৯)। শহিদ নূর আলম (২২) কুড়িগ্রাম সদরের ভোগঙাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লা পাড়া গ্রামের ভ্যান চালক মোঃ আমীর হোসেন ও পোশাক শ্রমিক নূর বানু বেগম দম্পত্তির দুই পুত্রের মধ্যে বড়। ছোট পুত্র নূর জামাল (১৪) পেশায় রাজমিস্ত্রী। নূর আলম স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন ঢাকার গাজীপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন তেলিপাড়া গ্রামে। গত ২০ জুলাই বাসা থেকে বের হয়ে কাজে যাওয়ার পথে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে মিছিলের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন তিনি।

নূর আলমের স্ত্রী মোছাঃ খাদিজা খাতুন বাসসকে বলেন, ‘২০ জুলাই সকাল বেলা উঠে আমার স্বামী কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে যায়। দুপুর ১টার দিকে লোকমুখে শুনি আমার স্বামী গুলিতে মারা গেছে। দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে হাসপাতালে যাই। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করলে ওই দিন রাতেই স্বামীর মরদেহ নিয়ে গ্রামে চলে আসি।’

 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহিদ নূর আলম।

মোছা: খাদিজা খাতুন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মুন্সীপাড়ার কাচ্চির গ্রামের বাসিন্দা মো. নন্দু মিয়া (৬৫) ও সামিনা বেগম (৫৮) এর তৃতীয় সন্তান। নূর আলম ও খাদিজার বিয়ে হয় ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবরে। তারপর থেকেই তারা ঢাকা-গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকার তেলিপাড়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন। নূর আলমের মৃত্যুর দুই মাস পর ২২ সেপ্টেম্বর এই দম্পতির প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ ম্লান হয়ে গেছে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে।

স্বামীর মৃত্যুশোকে দিশেহারা অন্তঃসত্ত্বা খাদিজা খাতুনের জায়গা হয়নি শ্বশুর বাড়িতেও। নূর আলমের মৃত্যুর দেড় মাস পরে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায়ই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়ী। হত দরিদ্র বৃদ্ধ পিতার একমাত্র পুত্র ঈমান আলী (১৪) নবম শ্রেণীর ছাত্র। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে সংসার চলে। সেখানে নবজাতকসহ বিধবা কন্যার বাড়ি ফিরে আসায় গভীর সংকটে পড়েছেন তারা।

খাদিজা জানান, মামার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বাবার বাড়িতে কোনোরকমে দিনাতিপাত করছেন। কোলের শিশুটিও অসুস্থ। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আল আমিন বলেছেন, শিশুটি হৃদরোগে আক্রান্ত। দিশেহারা খাদিজা অভিযোগ করেন, নূর আলমের মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন থেকে যেসব অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে সবই নিয়েছে নূর আলমের পিতা মোঃ আমীর হোসেন। উপরন্তু এই টাকার ভাগ খাদিজা খাতুনকে দিতে হবে বলে তাকে শ্বশুর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

শোক ও উৎকন্ঠায় দিশেহারা খাদিজা বাসসকে বলেন, স্বামী হারানোর শোক যে কি যার স্বামী হারিয়েছে সেই জানে। এতকিছুর মাঝে আমি আরো বড় আঘাত পেয়েছি আমার স্বামী মারা যাওয়ার ৪৪ দিনের মাথায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে বিনা কারণে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। গর্ভাবস্থায় আমার শ্বশুর রাতের বেলা আমাকে হাত ধরে বের করে দেন। আমি পাশের বাড়িতে রাতে থেকে আমার বাবাকে ফোন দেই। পরের দিন বাবা গিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এদিকে গত ২২ সেপ্টেম্বর ছেলের জন্ম হয়েছে। তার বয়স ১৫ দিন হতে চললো। তবু ওরা আমার সন্তানের খোঁজ নিতে আসে নাই। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার শ্বশুরের কাছে আর্থিক সহযোগিতা আসছে। সে সব সহযোগিতার টাকার খবর যাতে আমি না শুনি এ কারণে আমার শ্বশুর পরিকল্পিতভাবে আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে, বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। তার উপর শিশু সন্তানের অসুস্থতায় কোথায় যাবো, কি করবো ভেবে পাই না। আমার ভবিষ্যৎ এখন নূর আলমের রেখে যাওয়া আমানত সন্তান আব্দুল খালেক। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়েও খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। আমি আমার ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করতে চাই। আমার সন্তানের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা ও সাহায্য প্রার্থনা করছি।’

নূর আলমের বাবা মোঃ আমীর হোসেন বাসসকে বলেন, আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে নূর আলমকে হারিয়ে আমরা ভালো নেই। সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা আসছে। এ পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা ৫০ হাজার টাকা, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ২ লাখ ৫ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে আশ্বাস ও সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

নূর আলমের স্ত্রী খাদিজা খাতুনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমীর হোসেনের সাথে মুঠোফোনে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার নাতি ও ছেলের বউ খাদিজা বর্তমানে ওর বাবার বাড়ি আছে। তার সাথে আমারা কোন ঝগড়া বিবাদ করি নাই। সে নিজ ইচ্ছেয় ওর বাবার বাড়ি চলে গেছে। এলাকায় এসে খোঁজ নিতে পারেন।’

এ বিষয়ে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন মোঃ নূর আলম। আমি তার পরিবারের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি। নূর আলমের স্ত্রীর সাথে তার বাবা মায়ের কোন ঝগড়া বিবাদ হয়েছে কি না আমি জানি না।

কিউএনবি/বিপুল/০৫.১২.২০২৪/সন্ধ্যা ৭.০৯

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit