সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩০ অপরাহ্ন

‘শ্রমিকদেরকেও উন্নয়নের হিস্যা দিতে হবে’

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১ মে, ২০২৪
  • ১২৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : নারী অধিকারকর্মী ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার বলেছেন, উন্নয়নের ভাগীদার যদি শ্রমিকরা না হন তবে সেই উন্নয়নকে টেকসই উন্নয়ন বলা যাবে না। শ্রমিকদেরকেও তাদের উন্নয়নের হিস্যা দিতে হবে। ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’ বিজয়ী খ্যাতিমান এই আলোচত্রী ও আলোকচিত্র সাংবাদিকতার শিক্ষক মনে করেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সব কিছুর দাম বাড়ছে, এটা সবাই স্বীকার করছে। কাপড়-সুতা-বিদ্যুত সবকিছু বেশি দামে কিনছেন, শুধুমাত্র শ্রমিকের শ্রমটা কম দামে কেনা হচ্ছে।

এটা তো হতে পারে না। মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বার্তা২৪.কম-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তাসলিমা আখতার। কথা বলেছেন পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। বার্তা২৪.কম: আমাদের রাষ্ট্র শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কতটা সচেষ্ট হতে পেরেছে?

তাসলিমা আক্তার: মে দিবসের ১৩৮ বছর হতে চললো। এই দিবসের সূচনাই হয়েছিল শ্রমিকদের ৮ ঘন্টা শ্রমের স্বীকৃতির দাবিতে। আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে তাকাই, রাষ্ট্র কতটা শ্রমিকবান্ধব তা বোঝার চেষ্টা করি, শ্রমিকদের অবস্থার দিকে তাকালেই তা বোঝা যাবে। ১৩৮ বছরেও এখন পর্যন্ত কাগজে-কলমে ৮ ঘন্টা কাজের স্বীকৃতি আছে। কিন্তু বাস্তবে কি বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিক বা অন্য শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কাজ করে বাঁচার মতো মর্যাদাপূর্ণ মজুরি পান? ৮ ঘন্টার পরেও তাদের বাধ্যতামূলক ওভারটাইম করতে হয় এবং শ্রমিকদের বলার কোন সুযোগই থাকে না যে তারা বলবে, ‘আমি কাজ করব না’।

কেউ যদি বলে ওভারটাইম করবে না, তাহলে তার চাকুরি থাকবে না। এটা একটা ব্যাপার আবার ওভারটাইম না করলে সে বাঁচতেও পারে না। শ্রমিকরা আসলে ৮ ঘন্টা কাজ করে না, শ্রম আইন অনুযায়ী ১২ ঘন্টা কাজ করতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে শ্রমিকরা ১৪-১৫ ঘন্টাও কাজ করে। তাহলে এই রকম একটা অমানুবিক জীবন-যাপন আমাদের শ্রমিকরা করছে। যেখানে ৮ ঘন্টা কাজ করে মর্যাদাপূর্ণভাবে বাঁচা যায় না। এই রকম একটা পরিস্থিতিতেই আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, মালিকরা এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই ১৩৮ বছর আগে শিকাগোতে যে শ্রমিকদের দেখা গিয়েছিল-মনে হয় যেন সেই শ্রমিকরাই আমাদের দেশে অন্যভাবে আছেন। রাষ্ট্রের শ্রমিকদের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি তাকে মানুষ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে মর্যাদা দেওয়ার সেটা না দিয়ে শ্রমিকদের কেবল মেশিন হিসাবে দেখা হয়। মানুষ হিসাবে গণ্য করা হয় না। বর্তমান পরিস্থিতিটা এই দাঁড়িয়েছে।

বার্তা২৪.কম: শ্রমজীবী মানুষের অধিকারকে সংহত না রেখে আমরা কি উন্নত দেশে পৌছাতে পারব? তাসলিমা আক্তার: এখন উন্নয়নের সংজ্ঞা যাঁরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন তাদের কাছে এক রকম, যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক আছেন তাদের কাছে একরকম। আমরা তো মনেকরি, শিল্পমালিক বা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাঁরা আছেন তাদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন দিয়ে তো আর উন্নয়নের মাপকাঠি নির্ধারণ করা সম্ভব না। একটা দেশের কতটা উন্নয়ন হয়েছে তা বড় সেতু বা মেট্রোরেল দেখিয়েই হবে না।

সেতু বা মেট্রোরেল নিশ্চয়ই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে যদি আমাদের দেশের যাঁরা সেতু তৈরি করছেন, মেট্রোরেল তৈরি করছে যে শ্রমিকরা-তাদের জীবনটা আসলে কোন জায়গায় আছেন? তারা কি অবস্থার মাঝে আছেন? আমাদের দেশের যে শ্রমিকরা অর্থনীতিতে বা বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে তারা কতটুকু দাম পাচ্ছেন? সেই জায়গাগুলো দেখলে আমার মনে হয় যে আমাদের যারা শিল্প মালিক বা সংসদ সদস্য যারা আছেন-তাদের জীবনমান ও অর্থনৈতিক অবস্থার যতটা উন্নয়ন হয়েছে, অন্যদিকে দেশের আপামর শ্রমজীবী মানুষের জীবনের উন্নয়ন কিন্তু ঘটেনি। যদি ঘটতো তাহলে আজকে দেখা যেত, আমরা গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি ২৫ হাজার বা ৩০ হাজার দাবি করেছিলাম, আমরা এটা থেকে দর কষাকষি করতে চেয়েছি।

কিন্তু দেখা গেল সাড়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে যা আমাদের প্রস্তাবের ধারেকাছেও নেই। এই বেতনে শ্রমিকদের পক্ষে বেঁচে থাকাই মুশকিলজনক। শ্রমিকরা যে বেতন পাচ্ছেন, তাদের তো ৮ ঘণ্টা কাজ করলে চলছে না। এখন তাদের কাজের চাপ-টার্গেটের চাপ এত বাড়ানো হয়েছে, তাতে আগে শ্রমিকদের যতটা ক্লান্ত-অবসন্ন দেখতাম কাজের চাপে; এখন তাকে আরও ভয়াবহ ক্লান্ত দেখি। এখন অনেক সময় শ্রমিকদের সূর্যের আলোটা দেখার সুযোগও হয় না। এ রকম একটা অবস্থার মধ্যে শ্রমিকরা আছেন। এই মজুরি বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের জীবনের কোনো বিশেষ পরিবর্তন আসলে হয়নি। সে তো তার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো, ভালো বাসায় থাকা-তিন বেলা ভালো খাওয়া বা ঘুমানো কিছুই করতে পারছে না।

তাকে ৮ ঘন্টার বেশি কাজ করতে হচ্ছে এবং এমন একটা অবস্থা…রাত পর্যন্ত কাজ করে এসে বাসায় কাজ করে; তারপর রাতে ঘুমাতে পারে না বিদ্যুত না থাকায়। মধ্যবিত্তরা তো এক রকম অবস্থার মধ্যে থাকেন। শ্রমিকরা তো ভয়াবহ দূর্ভোগের মধ্যে জীবনযাপন করছে। উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে পোশাক কারখানার মালিকরা বলেন, আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কারখানা ভবন আগের চেয়ে অনেক টেকসই ও নিরাপদ হয়েছে। আমরাও মনে করি যে এগুলো ইতিবাচক দিক।

কিন্তু শ্রমিকের জীবনমানের উন্নয়ন কারখানার ইটপাথরের সঙ্গে যুক্ত থাকে না। শ্রমিকরা মর্যাদাপূর্ণ জীবন পাচ্ছে কিনা সেটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়নের সংজ্ঞাটা কেবল ভবনের সঙ্গে যুক্ত নয়। অনেক বড় ও স্বাস্থ্যসম্মত ভবন, গাছপালা কিংবা মেট্রোরেল কিন্তু শ্রমিকের জীবনের পরির্তন আনছে না। এক্সপ্রেসওয়েসে কিন্তু শ্রমিকরা যেতে পারছেন না। মেট্রোরেলেও কিন্তু শ্রমিকরা যেতে পারেন না-যে টাকা ভাড়া দিতে হয়। পদ্মা সেতুতেও যে টোল দিতে হয় সেটাও কিন্তু কম নয়।

বার্তা২৪.কম: রাজনৈতিক দলগুলোর শ্রমিকস্বার্থ দেখার জন্য সংগঠন রয়েছে। তারা কি শ্রমিকদের কণ্ঠস্বর কতটা হয়ে উঠতে পেরেছেন? তাসলিমা আক্তার: একটি গভীর প্রশ্ন। গত ১৫ বছর ধরে আমরা যে শাসনের মধ্যে বা পরিবেশের মধ্যে আছি। আমরা নিজেরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করছি, ভোটাধিকার থাকলে পোশাক শ্রমিকরাও ভোটব্যাংক হিসাবে বিশাল জায়গায় থাকতেন। ফলে যেখানে কথা বলার অধিকার থাকে না, সেখানে কিছু আশা করার থাকে না। সেখানে ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক উন্নয়ন করাটিই আমরা দেখি। শ্রমিকদের উন্নয়নটা করা হচ্ছে না। শ্রমিকরা যদি কথা বলে সেটা আসলে এই জবাবদিহিতাহীন রাষ্ট্রে প্রতিফলিত হয় না। যেটা হয় সেটা হচ্ছে শ্রমিক আদোলনকে যত বেশি ভাগ করা যায় ততোটই হয়ত ভালো, যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের জন্য।

বার্তা২৪.কম: তার মানে রাজনৈতিক দলগুলি কি সংগঠনগুলি তৈরি করে শ্রমিকদের কণ্ঠকে রোধ করার জন্য? তাসলিমা আক্তার: সকল শ্রমিক সংগঠন বা দলের কথা আমি বলছি না। সংগঠনগুলির প্রত্যেকেরই রাজনীতি থাকে, তাতে আপত্তি নাই। কিন্তু যে দল জনগণের কথা বলে না, জনগণের পরোয়া করে না কেবল মুখে মুখে কথা বলে-তারা রাষ্ট্রকে প্রশ্নের মুখোমুখি করে। তবে কোন রাজনীতি আমাদের আন্দোলনকে বিভক্ত করে সেটাও বুঝতে হবে।

বার্তা২৪.কম: আমরা দেখি বর্তমানে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলা অনেক বাম রাজনৈতিক দলের চরিত্রেও পরিবর্তন এসেছে…

তাসলিমা আক্তার: জনগণের শক্তি হিসাবে বা গণতন্ত্রের শক্তি হিসাবে যদি আমি কথা বলি আর কাজটা যদি না করি তাহলে নামটা গুরুত্বপূর্ণ নয়…যদি ক্ষমতার সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে যারা জনগণের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয় তাহলে তো প্রগতিশীল বাম শক্তি হিসাবে দাবি করার সুযোগ থাকে না। সেরকম যদি হয় যে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের হয়ে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে নিজেদের আখের গোছানো বা দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে তাদের অনেক হিসাব নিকাশ করতে হয়। সেখানে শ্রমিকদের স্বার্থটা লঙ্ঘিতে হবেই। ক্ষমতায়ও যাঁরা আছেন গত ১৫ বছর ধরে তারা যেভাবে আছেন, তাদের সঙ্গে যারা যুক্ত আছেন-তারাও শ্রমিকদের স্বার্থের কথা যতটা মুখে বলছেন বাস্তবে সেটার কোন প্রতিফলন আমরা দেখছি না। যদি দেখতাম তাহলে ২০২৩ সালে আন্দোলনে যে চারজন শ্রমিককে গুলিতে মারা যেতে হল সেটা দেখতাম না। যেখানে কথা বললেই আমাকে গুলি খেতে হবে, প্রতিবাদ করলে চাকুরি হারাতে হবে-এরকম একটা ভয়ের রাজনীতির পরিবেশ নিশ্চয়ই একটা গণতান্ত্রিক দেশে থাকে না। শ্রমিকরা এখন প্রতি মুহুর্তেই ভয়ের মধ্যে থাকেন। কোনভাবে যেন শ্রমিকরা সচেতন হতে না পারে সেকারণে নানা রকম প্রলোভন ও ভয়ভীতি এবং শ্রমিক নেতৃত্ব দূষিত করার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো আমরা দেখছি।

বার্তা২৪.কম: ‘দুনিয়ার মজদুর-এক হও’ স্লোগান নিয়ে রাজধানী ঢাকায় অনেক রাজনৈতিক দল রাজপথে সরব হয়ে কোথাই যেন মিলিয়ে গেলেন… তাদের কণ্ঠ কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। এই যে মূল্যবোধের পচন সেটা শ্রমিক আন্দোলনকারীদের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দেয় কিনা…

তাসলিমা আক্তার: স্লোগানটি শুধু শ্রমিক আন্দোলনেরই নয়, জনগণের স্বপক্ষের সব আন্দোলনে এতে ঐক্য খোঁজে পায়। শুধু দেশের নয়, সারা বিশে^র শ্রমিক আন্দোলনের স্লোগান। আমরা মনে করি যে, স্থানিকভাবে ও বৈশি^ক -সবভাবেই আমাদের লড়াই করা দরকার। বৈশ্বিক পর্যায়ে এই স্লোগানের যে সংহতি তা বার বার মনে করিয়ে দেয়। একটা দেশে যদি গণতন্ত্র থাকে, জবাবদিহিতা থাকে-তখন শ্রমিক আন্দোলনও শক্তিশালী হতে পারে। যদি জবাবদিহিতা না থাকে, ভয়ের রাজনীতি থাকে-সেখানে শ্রমিকদের নানাভাবে বঞ্চিত করার প্রচেষ্টাই দেখি।

বার্তা২৪.কম: রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ কতটা নিশ্চিত করতে পেরেছে রাষ্ট্র?

তাসলিমা আক্তার: ওই ঘটনার পর আমিসহ অনেক আলোকচিত্রীই ছবি তুলেছিলেন। ওই ঘটনার সাক্ষী হিসাবে সারা দুনিয়ার সামনে এসেছে এবং পোশাক শ্রমিকদের জীবনের পেছনে যে নির্মম নিষ্ঠুরতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। শ্রমিক নিরাপত্তার বিষয়েও একটি বড় প্রশ্নবোধক হয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক যে ভোক্তারা আছেন তাদের কাছেও…তারা যে টি শার্ট বা জামা পড়ছে তাদের ক্রেতারা জানতে পেরেছে। আমরা দেখেছি ওই ঘটনার ১১ বছর পরেও সোহেল রানাসহ আসলে যারা দোষীরা তারা শাস্তি পান নাই। ক্ষতিপূরণ আইন মাত্র ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ বা আড়াই লাখ করা..সেটা কোন মর্যাদাপূর্ণ ক্ষতিপূরণ না। যদি এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা থাকতো তাহলে তাদের শাস্তি হতো। এখন আইনের শাসন বলে কিছু কাজ করে কিনা সেটাই তো একটা সন্দেহের ব্যাপার। কে গ্রেপ্তার হবেন, কে জামিন পাবেন-কে পাবেন না, কোন মামলার দ্রুত রায় হবে, কোনটার হবে না-এই প্রত্যেকটা জিনিস বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিবেশ সেখানে আমাদের কাছে মনে হয়, পুরোটা একটা রাজনৈতিক বিষয় হয়ে গেছে। আইন নিজে চলতে পারছে না। সেইখানে সরকারের যে সদিচ্ছা সেটার অভাবের কারণেই আসলে রানাপ্লাজার ঘটনার পরেও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। যদি করা যেত তাহলে শিল্প মালিকরা সতর্ক হতে পারতো। তাদের যদি বড় অংকের ক্ষতিপূরণ দিতে হতো, তাহলে সতর্ক হতো। ২ লাখ বা আড়াই লাখ টাকা যদি একটা গার্মেন্টস মালিককে দিতে হয় তাহলে তার বেশি সমস্যা হবে না। আবার যদি দেখা যায় তাজরীনের মালিকের মতো জামিনে বের হয়ে মৎসজীবী লীগের সভাপতি হওয়া যায় তাহলে সমস্যা কি? এই জিনিসগুলো বিবেচনায় আনার দরকার। সরকারের সদিচ্ছাটা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখি যে, গার্মেন্টস মালিকদের একটা বড় অংশই সংসদে আছেন, উনারা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং এই শাস্তিগুলো হলে হয়ত তাদের ওপর চাপ তৈরি হবে। এই একটা চক্রে মধ্যে মনে হয় আমরা আটকে আছি। আমাদের নতুন পথ খুঁজতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারা আসলে আমাদের (শ্রমিকদের) পক্ষে আর কারা আমাদের পক্ষের হয়ে দিনশেষে কাজ করছে না, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে শ্রমিক এলাকাগুলোতে প্রলোভন দেখিয়ে নেতৃত্বকে কেনাবেচা করা হচ্ছে, সেই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে।

বার্তা২৪.কম: রানাপ্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর বহির্বিশ্বের চাপে পোশাক কারখানাগুলোতে কর্মপরিবেশের কিছু উন্নয়ন হয়েছে, পর্যায়ক্রমে আরও হচ্ছে, এটা কোন আশাবাদ তৈরি করছে কিনা?

তাসলিমা আক্তার: আমি মনে করি কিছু পরিবর্তন তো অবশ্যই হয়েছে। রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পরে মালিকরা বলেছিলেন, ৫০ বিলিয়নের শিল্পে পরিণত করবেন ৫০ বছরে, এখন আবার বলছেন ১০০ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত করবেন। এখন বড় বড় কারখানাগুলো আগের চেয়ে অনেক ভালো। কিছুৃ গ্রিণ ফ্যাক্টরিও হয়েছে। এটা আমি ইতিবাচক মনে করি। কিন্তু এই উন্নয়নের ভাগীদার কেন শ্রমিকরা হচ্ছেন না এটাই আমার কথা। আমরা মনেকরি শিল্পের বিকাশ হওয়া দরকার, বাংলাদেশে যারা মালিকপক্ষ আছেন তারা করোনার সময়ে অনেক ঝুঁকি নিয়ে কারখানা চালু রেখেছেন, তাই অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও গার্মেন্টসগুলো বন্ধ হয়নি। রফতানিখাতের মধ্যে এটাই সাসটেইনিং। এটা নিশ্চয়ই আমাদের জন্য ভালো বিষয়। বিজিএমইএ পোশাক শ্রমিকদের জন্যও কাজ করছে। এগুলো ভালো দিক। নতুন একটা পরিবেশ তৈরি হবে। সেই পরিবর্তন যদি হয় কেবল মালিকদের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা, সেই শিল্প আসলে কিভাবে শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন করবে? এই পরিবর্তনকে আমরা তখনই উদযাপন করতে পারব যখন আমাদের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন হবে।

এই উন্নয়নের পেছনে যদি আমাদের শ্রমিকদের জীবন বলিই দিতে হয় শুধু তাহলে, তারুণ্যের ক্ষয় করতে হয়-মজুরি আন্দোলনে জীবন চলে যায়, তাহলে আসলে কিছু হবে না। এই উন্নয়নের ভাগীদার যদি শ্রমিকরা না হয় তা হলে সেটা কিভাবে টেকসই উন্নয়ন হলো? শ্রমিকরা তো তাদের উন্নয়নের হিস্যা চায়। শ্রমিকদেরও উন্নয়নের হিস্যা দিতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সব কিছুর দাম বাড়ছে, এটা সবাই স্বীকার করছি। কাপড়-সুতা-বিদ্যুত সবকিছু বেশি দামে কিনছেন, শুধুমাত্র শ্রমিকের শ্রমটা কম দামে কেনা হচ্ছে। এটা তো হতে পারে না। সুতরাং শিল্পের বিকাশের জন্যই শ্রমের মর্যাদাপূর্ণ মজুরি প্রয়োজন। যাতে ৮ ঘন্টা শ্রমেই শ্রমিকরা তা লাভ করতে পারেন। আন্তর্জাতিক যেসব ক্রেতারা আছেন তাদেরকেও যাতে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা যায় তার জন্য..যে প্রোডাক্টটা তারা কিনেন তা যেন ন্যায্যদামে কিনেন সেসব বিষয়ে চাপ প্রয়োগ করার জন্য পোশাক শিল্পের মালিকদের আরও দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার। শ্রমিকদের দুরবস্থার জন্য আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেরও দায় আছে। অনেক সময় দেখি বিদেশি ক্রেতারা সচেতনতামূলক কথা বলেন, তারা শ্রমিকের ভালো চান-এমনভাবে তারা বলেন-যেন শ্রমিকদের জীবনমানের ভালো রাখার দায় কেবলমাত্র দেশীয় মালিকদের। তারা তাদের দায়টাকে অস্বীকারের চেষ্টা করেন। নিশ্চয়ই শ্রমিক ও মালিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে কিন্তু এটা যেহেতু গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের অংশ সেখানে বিদেশি ক্রেতাদের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা লাভের সিংহভাগই নিয়ে যান। সেই জায়গাতে তাদেরকেও যাতে জবাবদিহিতার জায়গায় আনা যায় সেই চেষ্টা করা উচিত। আমাদের মালিকরা ভাবেন কেবল তারাই ফুলেফেঁপে সম্পদশালী হবেন, আর শ্রমিকরা নিঃস্ব হবেন। বেশিরভাগ শ্রমিক ৩০-৩৫ বছর বা ৪০ বছর পর আর কাজ করার স্পৃহা থাকে না, অল্প বয়েসেই তারা বৃদ্ধ হয়ে যান, শক্তি ক্ষয় হয়ে যায় সেটা নিশ্চয়ই আমরা কখনো চাইব না।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০১ মে ২০২৪,/সন্ধ্যা ৬:১৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit