বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন

সই নকল করে ব্যাংক ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ!

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৭৮ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ঘটনাটি ভারতের। দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংকগুলোর অন্যতম আইসিআইসিআই ব্যাংকের প্রতরণার ঘটনা এটি।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই ব্যাংকের একজন ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ১৬ কোটি ভারতীয় রুপি বা ১৯ লাখ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০ কোটি ৮৭ লাখ টাকারও বেশি) প্রতারণার মাধ্যমে চুরি করে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এক গ্রাহক।

শ্বেতা শর্মা নামে ওই গ্রাহকের অভিযোগ, একটি ফিক্সড ডিপোজিটে জমা করার জন্য তার যুক্তরাষ্ট্রের একাউন্ট থেকে ওই ব্যাংকে ১৯ লাখ মার্কিন ডলার স্থানান্তর করেন তিনি। কিন্তু ওই ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা তার স্বাক্ষর নকল করে একটি ভুয়া একাউন্ট খোলেন। তারপর শ্বেতার নামে একটি ডেবিট কার্ড এবং চেকবই তোলেন। তা ব্যবহার করে তিনি একাউন্ট থেকে অর্থ তুলে নিতে থাকেন।

শ্বেতা শর্মার ভাষায়, ওই কর্মকর্তা আমাকে ভুয়া ব্যাংক বিবরণী পাঠাতেন। আমার নামে একটি ভুয়া ইমেইল আইডি খুলেছিলেন। ব্যাংক রেকর্ডে আমার মোবাইল নাম্বার ম্যানিপুলেট করেছেন।

ফলে একাউন্ট থেকে যে অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে এ সম্পর্কে আমি কোনও নোটিফিকেশন পাইনি।

ব্যাংকটির এক মুখপাত্র প্রতারণার অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, আইসিআইসিআই একটি স্বনামধন্য ব্যাংক। এই ব্যাংকটি লাখ লাখ ভোক্তার ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন রুপি জমা রাখে। এ ঘটনায় যিনি দায়ী তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র ও হংকংয়ে কয়েক দশক বসবাস করেন শ্বেতা শর্মা ও তার স্বামী। এরপর ২০১৬ সালে ভারতে ফিরে আসেন এই দম্পতি। এ সময় একজন বন্ধুর মাধ্যমে একজন ব্যাংকারের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে সুদের হার যেহেতু খুব সামান্য, তাই শ্বেতার স্বামী তাকে বুদ্ধি দেন অর্জিত অর্থ ভারতে স্থানান্তর করতে। কারণ, ভারতে সুদের হার শতকরা ৫.৫ থেকে ৬ ভাগ পর্যন্ত। ২০১৯ সালে দিল্লির কাছে পুরনো গুরুগ্রামে আইসিআইসিআই-এর একটি শাখায় স্বামীর বুদ্ধিতে অনাবাসিক ভারতীয়দের জন্য এনআরই একাউন্ট খোলেন শ্বেতা। তারপর যুক্তরাষ্ট্রে তার একাউন্ট থেকে এই একাউন্টে অর্থ পাঠাতে থাকেন।

শ্বেতা বলেন, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বছর ধরে আমাদের সারাজীবনের সঞ্চয় ১৩ কোটি ৫০ লাখ রুপি জমা করি এই ব্যাংকে। এর সঙ্গে সুদ যোগ হয়ে মোট অর্থের পরিমাণ কমপক্ষে ১৬ কোটি রুপি। 

শ্বেতা বলেন, কখনও তার মধ্যে কোনও সন্দেহ জন্মেনি। কারণ শাখাটির ম্যানেজার তাকে সব সময় ব্যাংকে অর্থ জমার যে রশিদ, যথাযথ সেই রশিদই আমাকে পাঠিয়েছেন। তার আইসিআইসিআই একাউন্ট থেকে ইমেইলে নিয়মিত আমাকে স্টেটমেন্ট পাঠাতেন। কখনও কখনও ডকুমেন্টের ফোল্ডার ধরে পাঠাতেন। কিন্তু প্রতারণার বিষয়টি প্রথম জানুয়ারিতে সামনে আসে। কারণ, এ সময় ওই ব্যাংকের নতুন একজন কর্মকর্তা মিস শর্মাকে তার অর্থের বিপরীতে আরও ভাল লাভ পাওয়ার প্রস্তাব দেন। বলেন, বেশি বেশি অর্থ পাঠাতে। তার একাউন্টে তেমন কোনও অর্থ নেই। এ সময়ই শ্বেতা শর্মা দেখতে পান তার যে ফিক্সড ডিপোজিট ছিল তার সবটাই নিঃশেষ হয়ে গেছে। 

শ্বেতা বলেন, এতে আমি ও আমার স্বামী হতাশ হয়ে পড়ি। আমি অটো-ইমিউন ডিজঅর্ডারে ভুগতে শুরু করি। আমি মানসিকভাবে এতটাই আঘাত পেয়েছি যে, পুরো এক সপ্তাহ ধরে বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। আমার চোখের সামনে পুরো জীবনটাকে একেবারে ধ্বংস করে দেওয়া হল। বিপরীতে কিছুই করতে পারলাম না। 

শ্বেতা শর্মা জানান, এরই মধ্যে তিনি সব তথ্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মিটিং করেছেন। 

শ্বেতা বলেন, ১৬ জানুয়ারি প্রথম সাক্ষাৎ হয় ব্যাংকটির আঞ্চলিক, জোনাল ও আভ্যন্তরীণ নজরদারি বিষয়ক প্রধানদের সঙ্গে। তারা মুম্বাই থেকে উড়ে আসেন সেখানে। তারা আমাকে বলেন- তারা স্বীকার করেন এটা তাদের ত্রুটি ছিল। ওই শাখা ম্যানেজার প্রতারণা করেছেন। তারা আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন পুরো অর্থ ফিরিয়ে দেয়ার। কিন্তু প্রথমেই তারা বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে যে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে তা শনাক্ত করতে তাদেরকে আমার সহায়তা করতে হবে।

শ্বেতা শর্মা ও তার একাউন্ট্যান্ট টিম কয়েকদিন চার বছরের স্টেটমেন্ট নিয়ে কাজ করেন। তা তারা ওই টিমের কাছে উপস্থাপন করেন। তাতে দেখা যায় শতভাগ প্রতারণা করা হয়েছে। 

শ্বেতা শর্মা বলেন, কীভাবে এই অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে আবিষ্কার করা হতাশাজনক। তা কোথায় খরচ করা হয়েছে তাও জানতে চাই। 

তিনি বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পরেও তিনি অপেক্ষায় আছেন তার অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য। এর মধ্যে ব্যাংকটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ডেপুটি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি লেখেন এবং দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, দিল্লি পুলিশের ইকোনমিক অফেন্সেস উইংয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।

এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা শ্বেতা শর্মার একাউন্টে ৯ কোটি ২৭ লাখ রুপি জমা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। বাকি অর্থ তদন্তাধীন। এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন শ্বেতা শর্মা। 

শ্বেতা শর্মা বলেন, “আমি পাব ১৬ কোটি রুপি। কিন্তু আমাকে তার চেয়ে অনেক কম অর্থ প্রস্তাব করা হচ্ছে। এখন পুলিশ এই মামলাটি ক্লোজ না করা পর্যন্ত একাউন্টের অর্থ জব্দ অবস্থায় থাকবে। এর অর্থ মামলাটি নিষ্পত্তি হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।” 

শ্বেতা শর্মার প্রশ্ন- আমার কোনও ত্রুটি না থাকার পরও আমি কেন শাস্তি পাব? আমার জীবনকে ওলটপালট করে দিয়েছে এই প্রতারণা। এখন আমি ঘুমাতে পারি না। সারাক্ষণ দুঃস্বপ্ন দেখি। সূত্র: বিবিসি

কিউএনবি/অনিমা/২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪/দুপুর ২:২৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit