বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:১১ পূর্বাহ্ন

জেলখানা থেকে চিঠি লিখে দুর্দশার বর্ণনা দিলেন সুচি

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৮২ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‍দীর্ঘ দিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সুচি। সেখানে চরম দুর্দশার শিকার শান্তিতে নোবেল জয়ী এই নেত্রী।

এবার জেলখানা থেকে ছেলে কিম অরিসের কাছে চিঠি লিখেছেন সেই দুর্দশার বর্ণনা দিয়েছেন সুচি।

চিঠিতে সুচি জানিয়েছেন, তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। দাঁতের এবং শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তিনি। এ অবস্থায় সুচির স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কিম অরিস। 

 

গণমাধ্যমের প্রতিবেদে বলা হয়, প্রায় তিন বছর নীরবতার পর মা অং সান সুচির হাতে লেখা একটি চিঠি যেদিন পেয়েছেন ছেলে কিম অরিস, সেদিনটি তার কাছে বিরাট একটি মুহূর্ত। এ নিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের বাড়ি থেকে জুম মাধ্যমে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ভয়েস অব আমেরিকার’ সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। মিয়ানমারে জেলে তার মায়ের স্বাস্থ্যের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অরিস নিশ্চিত করেছেন বৃটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তার মায়ের হাতের লেখা একটি চিঠি পেয়েছেন। প্রথমে সেটা ছিল ছবি। পরে হাতে লেখা মূল চিঠি পেয়েছেন।

অরিস বলেন, তার মা, মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সুচি পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। অরিসের ভাষায়- তাকে আমি ‘কেয়ার প্যাকেজ’ এবং পরিবারের ভালবাসা হিসেবে যা পাঠিয়েছি, তার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি এখন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এখনও তার দাঁতের অবস্থা বাজে। এর ফলে খাবার খাওয়া তার জন্য মাঝে মাঝেই খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া আছে তার অস্টেপেরোসিস। এই রোগে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। 

অরিস বলেছেন, তিনি তার মায়ের স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। বলেন, তিনি এখন ৭৮ বছর বয়সী। তাকে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না দিয়ে ভয়াবহ একটি পরিবেশে আটকে রাখা হয়েছে। তাকে নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। যতদূর জানি, তাকে আটকে রাখা হয়েছে রাজধানী ন্যাপিডতে আলাদা করে একটি নিঃসঙ্গ কারাগারে।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সুচির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক জান্তা। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়। এতে শুধু মিয়ানমার নয়, সারাবিশ্বে ক্ষোভ দেখা দেয়। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা রাজনৈতিক। এসব মামলায় তাকে ২৭ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। 

অরিস বলেন, মা অসুস্থ একথা শোনার পর সেপ্টেম্বরে আমি তার কাছে একটি ‘কেয়ার প্যাকেজ’ পাঠাই। যদিও তা রেঙ্গুনে পৌঁছে সেপ্টেম্বরে, কিন্তু তা মা পেয়েছেন ডিসেম্বরের শেষে। এরপর তার জবাব পেয়েছি মধ্য জানুয়ারিতে। 

অং সান সুচিকে এর আগে ১৫ বছর একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল। সুচির পারিবারিক সেই বাড়িটি নিলামে তোলার জন্য ২৫ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এক আদালত। এই বাড়িটির অর্ধেক মালিকানা আছে সুচির বড়ভাই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অং সান ওও’র। এ নিয়ে দীর্ঘ আইনি জটিলতার পর আদালত ওই নির্দেশ দিয়েছে। সে অনুযায়ী বাড়িটি নিলামে তোলার কথা ২০ মার্চ। এতে ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়েছে ৩১,৫০০ কোটি মিয়ানমার কিয়াত (প্রায় ৯ কোটি ডলার)।

অরিস বলেন, ন্যাপিডতে সুচি যে বাড়িতে থাকতেন সেটা তার নিজস্ব সম্পত্তি নয়। সেটা সরকারি সম্পত্তি। সুতরাং তিনি যদি রেঙ্গুনের বাড়িটি হারান, তাহলে মিয়ানমারে তার নিজের বলতে কোনও সম্পত্তি থাকবে না। এরই মধ্যে তার সম্পদ জব্দ করেছে সামরিক জান্তা। এসব সম্পদ তিনি দাতব্য কাজের জন্য গড়ে তুলেছিলেন। ইউনিভার্সিটি এভিউয়ের বাড়িটি তিনি দাতব্য কাজের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল- তারা সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। সবকিছু পশ্চাৎদিকে ধাবিত হচ্ছে। 

সুচির পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আছে এমন একজন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন- সুচির বিরুদ্ধে যেসব আইনি প্রক্রিয়া চলছে তাতে ন্যায়বিচারের যথেষ্ট অভাব আছে। ২০১৮ সালের মিয়ানমার সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘদিনের একটি সিদ্ধান্তকে তারা অবমূল্যায়ন করেছে। ২০১৮ সালে বেসামরিক সরকারের অধীনে সুচির বাড়িটি নিলামে বিক্রির বিরুদ্ধে যে আপিল করেছিলেন অং সান ওও, সেই আবেদন দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রত্যাখ্যান করেছে। এ সময়ে ওই সম্পত্তিতে তার অর্ধেক মালিকানার কথা বলা হয়। এর মধ্যে আছে ১.৯ একর এলাকা। যার ভিতর আছে ইনায়ে লেক এবং ঔপনিবেশিক ধরনের দোতলা একটি বাড়ি। সুচির পিতা ও দেশটির স্বাধীনতার বীর জেনারেল অং সানকে হত্যার পর তার স্ত্রী খিন কি’কে এই বাড়িটি সরকার দিয়েছিল। ফলে বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। সুচির মা খিন কি ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে মারা যান। তার আগে সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে এক ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি দলের সহপ্রতিষ্ঠাতা অং সান সুচি।

মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক একজন আইনজীবী বলেন, এই বাড়িটি তড়িঘড়ি করে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সুচির প্রতি অন্যায়। কারণ, বর্তমানে তিনি জেলে এবং তিনি ওই বাড়িতে বাস করেন। কিন্তু বিষয়টি মোটেও আমলে নেয়নি আদালত। 

অরিস বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হল সেনাবাহিনীই আইন বানাচ্ছে এবং সেমতো সব করছে। এর ফলে তারা আমার মার জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে। তারপর তারা এই ধারা অবলম্বন করবে। চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও তিনি তার মায়ের সঙ্গে ভবিষ্যত যোগাযোগ রাখার আশা করেন। বলেন, তাকে আমি আবারও চিঠি লিখব। আবারও পাঠাব ‘কেয়ার প্যাকেজ’। সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা

 

কিউএনবি/অনিমা/১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪/ দুপুর ১:৩৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit