লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : ক্রিসমাস ডে বা বড়দিনের অন্যতম বড় আকর্ষণ হলো সান্তা ক্লজ। সান্তা ক্লজ বলতে আমরা যাকে চিনি, তিনি লাল রঙের পোশাক, চোঙা আকৃতির লম্বা টুপি পরা ইয়া লম্বা সাদা চুল-দাড়িওয়ালা এক বৃদ্ধ লোক। হরিণ টানা স্লেজে চড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের উপহার পৌঁছে দেন যিনি।
বড়দিনের এই অন্যতম প্রতীকী চরিত্রটি কল্পিত হলেও এই কল্পনার ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর চতুর্থ দশকের সান্তা ক্লজ চরিত্রের মূল মানুষটির দেখা পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কিংবদন্তি চরিত্রটি আসলে ছিলেন সেন্ট নিকোলাস নামের একজন সন্ত কিংবা ধর্মযাজক। এশিয়া মাইনর বা বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খুবই মহৎ ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। দান-দক্ষিণায় তার বেশ সুনাম ছিল চারদিকে। তিনি তার সম্পদ অসহায় গরিব মানুষের সাহায্যে ব্যয় করতেন। তার এই মহানুভবতার জন্য তিনি মানুষের কাছে অতিপ্রিয় ছিলেন। ধারণা করা হয়, একবার দাসী হিসেবে বিক্রি হওয়া তিনটি মেয়েকে রক্ষা করে তাদের বিয়ে ও যৌতুক বাবদ সব খরচ তিনি বহন করেন। তার এই মানবতার জন্য তিনি মানবরক্ষক হিসেবে বেশ পরিচিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী নিকোলাস ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ও মধ্যরাতে ছেলেমেয়েদের বাড়ি ঘুরে ঘুরে উপহার দিতেন।
কিন্তু এখন আমরা রঙিন পোশাক পরা যে সান্তা ক্লজকে দেখি, তিনি তেমন কোনো পোশাক পরেননি। মূলত সাধু নিকোলাসকে স্মরণ করতো ইউরোপীয়রা। ডাচরা সেইন্ট নিকোলাসের নাম উচ্চারণ করতো সিন্তার ক্লাস হিসেবে।ধারণা করা হয় এই শব্দই পরে বদলে হয় সান্তা ক্লজ।
আরেকটি ঐতিহাসিক দিক হলো- যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপীয়দের আগমনের সময় তাদের সঙ্গে চলে আসে সেইন্ট নিকোলাস ডে নামের সংস্কৃতিও। এই সংস্কৃতিতে প্রভাবিত হয় মার্কিন সংস্কৃতি। ১৮২২ সালে ক্রিসমাস ডে উপলক্ষে আমেরিকার বিখ্যাত লেখক ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুরের লেখা ‘ অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ এ ভিজিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস’ কবিতায় এই পোশাকের উদ্ভাবন হয়। আজকের সান্তা ক্লজের রঙিন পোশাকের সূচনা হয় এই কবিতা থেকেই, যা বিভিন্ন পরিক্রমায় আজকের এই রূপ লাভ করেছে। এক সন্ত আটটি হরিণটানা গাড়িতে করে উড়ে উড়ে বাচ্চাদের উপহার দিচ্ছেন-এমন চিত্রই ফুটে ওঠে এই কবিতায়।
১৮৮১ সালে থমাস ন্যাসট নামক একজন আমেরিকান কার্টুনিস্টের আঁকা ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে সান্তা ক্লজের এই সাজ ব্যাপক খ্যাতি পায়। সেখানে সান্তা হরিণটানা গাড়িতে চড়ে কাঁধে উপহারভর্তি ঝোলা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের উপহার দেওয়ার চিত্র ফুটে ওঠে, এই ছবিটি গোটা বিশ্বে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এভাবেই সারা বিশ্বে ক্রিসমাস ডের আগের রাতে বাচ্চাদের বাসায় বাসায় উপহার দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়।
কিউএনবি/অনিমা/২৪ ডিসেম্বর ২০২৩,/রাত ১০:০৯