শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৫৯ অপরাহ্ন

রুমকী’র চিঠি -৩ : তুমি যে ফাগুন, রঙের আগুন, তুমি যে রসের ধারা

লুৎফর রহমান। রাজনীতিবিদ ও কলামিস্ট।
  • Update Time : সোমবার, ৩১ জুলাই, ২০২৩
  • ৯৬৬ Time View

রুমকী’র চিঠি -৩ : তুমি যে ফাগুন, রঙের আগুন, তুমি যে রসের ধারা
———————————————————————–
মাঝে মাঝে রুমকী ডুব দেয়। একেবারেই নিশ্চুপ বনে যায়। না কোন ফোন কল, না কোন চিঠি লিখে সে। এই নিশ্চুপতা, এই নিরবতার কারণ বের করে ফেলেছে নাহিদ। এটাকে বলে সেন্স অব হিউম। রোম যখন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, নিরো তখন বাঁশি বাজিয়েছিল বলেই এই উক্তিটি ইতিহাসে স্থান করে নিতে পেরেছে। নিরোর বাঁশি বাজার হাজারও কারণ থাকতে পারে। কিন্তু আগুনে ভস্ম হয়ে যাওয়া রোমে নিরোর বাঁশির সুর বড় বেমানান।

নাহিদ খুব ভাল করে চিনে রুমকীকে। রুমকীর কমনসেন্স, রুমকীর সেন্স অব হিউম সম্পর্কে নাহিদের বিস্তর ধারণা। তাই রুমকীর নীরবতাকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করেছে নাহিদ। বাংলাদেশের এই উত্তাল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেসুরো কোন সংগীত গাইবে না রুমকী তা নাহিদ খুব ভালো করে জানে। দেশের মানুষ যখন গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই করছে, ভোটাধিকারের জন্যে লড়াই করছে, দিনের ভোট রাতে নয়, দিনেই সম্পন্ন করার দাবিতে যখন রাজপথ কাঁপাচ্ছে, বিনা ভোট নয়, একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য ভোটের দাবিতে রাজপথে যখন রক্ত ঝরাচ্ছে তখন নিশ্চয়ই শচীন দেব বর্মনের উননাসিক কণ্ঠের এই গান ভাল লাগবে না-

তুমি আর, তুমি আর
তুমি আর নেই সে তুমি
জানি না জানি না কেন এমন হয়, জানি না।

ক্লান্ত এক বিকেলে মতিঝিলের অফিসে জানার গ্রিল ধরে এলোমেলো ভাবছে নাহিদ, ভাবছে রুমকী’র সেন্স অব হিউম নিয়ে। ঠিক সে মুহূর্তে টেবিলে রাখা স্মার্ট ফোনটা ভাইব্রেট দিচ্ছে। অলস পায়ে নাহিদ হেঁটে টেবিলের কাছে আসতেই লাস্যময়ী রুমকীর হাসি মাখা মুখ দেখতে পেল মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। হোয়াটস্যাপ এর প্রোফাইল পিকচারটা রুমকী আপলোড দিয়ে রেখেছে নাহিদের পছন্দের কারণে। এই ছবি দেখলে নাহিদের বুকে নাকি রক্তের ছলকানি উঠে।

হোয়াটস্যাপ কল রিসিভ করল নাহিদ। নিউইয়র্কের কুইন্স প্রান্তে কাঁকনের রিনিঝিনি শব্দের মত রুমকীর গলার সুরে সম্বিৎ যেন ফিরে পায় নাহিদ। মতিঝিলের সুউচ্চ টাওয়ারে, তার অফিস থেকে সোনালী বিকেলের দিকে তাকিয়ে থাকে নাহিদ। কালো মেঘে ঢাকা মতিঝিলের অফিস পাড়া যেন নিমিষেই আলোর ঝলকানিতে ঝিলিক দিচ্ছে। কুইন্স প্রান্ত থেকে রুমকী তার নীরবতার ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছে। নাহিদ যা ভেবেছিল, তাই। রুমকী চায়নি, রাজনৈতিক ডামাডোলের মাঝে সে রোমান্টিসিজমে ভুগুক অথবা নাহিদকে নিয়ে যাক আসমুদ্রহিমাচলের প্রেমের অববাহিকতায়।

রুমকী চিঠি লিখেনি কেন, তার ব্যাখ্যাও দিল। আসলে তার মনটা বড় বিক্ষুব্ধ। দেশে যা হচ্ছে তাতে কি আর প্রবাসীরা ভালো থাকতে পারে ? বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ এখন বড় উত্তাপময়। পাল্টাপাল্টি মিছিল মিটিং সমাবেশ হচ্ছে। কথামালার আক্রমণ কখনো কখনো পাল্টা আক্রমণ সৃষ্টি করছে। আবার কখনো সরকার বিরোধী মিছিলের পিছন থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। সমাবেশ হচ্ছে, পাল্টা সমাবেশ হচ্ছে। কথার ফুলঝুড়ি ছুটে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের আকাশে বাতাসে। এর মধ্যে কি গোমতী কন্যা মীরাদেব বর্মনের কথার সুরে সুরের মূর্ছনা সৃষ্টি করা যায় ?

রুমকীর কথায় নাহিদ দ্বিমত করেনা। কিন্তু অনুযোগ রেখে যায়। আগুনঝরা এই রাজনৈতিক ডামাডোলে আমরা ফাগুনের গান গাইতে পারি। ফাগুনের সুর তুলতে পারি। ”এলো আবার ফেব্রুয়ারি, চলো এবার যুদ্ধকরি” টাইপের ফাগুন মাস নয় এটা। কিন্তু ফাগুনের আবহ পাচ্ছি বাংলাদেশের রাজনীতিতে। এসো রুমকী, আমার গানের সাথে তুমি সুর মিলাও, গাও একবার ফাগুনের গান, আগুনের গান –

তুমি যে ফাগুন, রঙের আগুন, তুমি যে রসের ধারা
তোমার মাধুরী, তোমার মদিরা, করে মোরে দিশাহারা।

নিউয়র্কের কুইন্স প্রান্তে যেন আরেকটি নাইন ইলেভেন সৃষ্টি হল। রুমকী’র অট্টহাসিতে যেন নাপাম বোমা বিস্ফারিত হলো। ঢাকার মতিঝিল প্রান্তে নাহিদের কর্ণ কুহরে রুমকীর হাসি যেন এক বাঁধভাঙা জোয়ারের সৃষ্টি করল। নাহিদ শুধু শুনতে পেল রুমকীর লাস্যময় কথার মাঝে – এই তোমার ফাগুনের গান ? এই তোমার আগুনের পরশমনি সৃষ্টির গান ? এটাতো মীরাদেব বর্মনের লেখা সবচেয়ে রোমান্টিক গানের কথা। এই কি ছিল তোমার মনে নাহিদ ?

নাহিদ হেসে জবাব দিল, হ্যা আমার মনে এই ছিল। আমি চাই দেশের অবস্থা ভেবে তুমি অস্বাবাভিক হয়ে যেওনা। আমি চাই তুমি নিয়মিত কথা বলো আমার সাথে। আমি চাই তুমি নিয়মিত চিঠি লিখ। সেই চিঠিতে থাকবে গানের কথা, প্রাণের কথা, সাহিত্যের কথা, আমাদের দুজনের না বলা সব কথা। আমি চাই তুমি চিঠি লিখ গণতন্ত্র নিয়ে। আমি চাই বিনাভোটের বিরুদ্ধে তোমার অন্তর থেকে ঘৃণা ঝরুক, তুমি ধিক্কার জানাও দিনের ভোট রাতে কেন হয় ?

নাহিদের আকুতির মাঝে সমর্পিত হলো রুমকী। কথা দিল নাহিদকে, হ্যা আমি লিখব, নিশ্চুপ থাকবোনা, নিরব থাকবোনা। চিঠি লিখব তোমাকে বাক স্বাধীনতার জন্যে। কথা বলব আমি কথা বলার স্বাধীনতার জন্যে। ভাল থেকো তুমি, ভাল থাকুক প্রিয় স্বদেশ, ভালো থাকুক প্রিয় বাংলাদেশ আমার।

 

লেখকঃ লুৎফর রহমান একজন রাজনীতিবিদ ও লেখক। তিনি নিয়মিত লেখালেখির পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক নিউজ মিডিয়ার সম্পাদক ও প্রকাশক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র লুৎফর রহমান ৮০ এর দশকের স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরতে দুটি রাজনৈতিক উপন্যাস লিখেছেন, যা দেশ বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় জীবনের খন্ডচিত্র এঁকে তিনি এখন ব্যাপক পরিচিত।

 

 

কিউএনবি/নাহিদা /৩০/০৭/২০২৩/ রাত ১১.৪৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit