শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫, ১১:২৯ অপরাহ্ন

শ্রেনিকক্ষে কেককেটে ভ্যান চালকের মেয়ের জন্মদিনের আনন্দ ভাগাভাগি

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩
  • ২০৭ Time View

স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর) : যশোরের মনিরামপুর পৌরশহরের দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী দুই বোন নূরুন্নাহার ও নূর জাহান। পিতা মোস্তাফিজুর রহমান ভ্যান চালিয়ে কোন রকমে সংসারের জিবীকা নির্বাহ করে আসছে। নিজস্ব বাড়িও নেই তাদের। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে পিতা-মাতা অনেক কষ্টে দুই মেয়েকে পাড়াচ্ছেন। তারা দুইবোন নিয়মিতভাবে স্কুলে যায়। স্কুলের অনেক সহপাঠি বাড়িতে বাবা-মা সহ পরিবারের লোকজনের সাথে ধুমধামের মধ্য দিয়ে জন্মদিন পালন করছে। কিন্তু গরিব ভ্যান চালকের মেয়েরও ইচ্ছা হতে পারে নিজের জন্মদিনটি পালন করার। তাই নূর জাহান টিফিনের টাকার একটি অংশ বাচিয়ে এবং পিতা-মাতার দেওয়া কিছু টাকা নিয়ে স্কুলেই গতকাল রোববার দুপুরে টিফিনের ফাকে কেক কেটে নিজের জন্মদিনের আনন্দ সহপাঠিদের সাথে ভাগাভাগি করে নিলো।আর জন্মদিনের ব্যতিক্রমধর্মী এ অনুষ্ঠানে সহপাঠি ছাড়াও স্কুলের সব শিক্ষার্থীরাও অংশ নেয়।

জানাযায়, নুরুন্নাহার ও নূর জাহানের ভ্যানচালক পিতা মোস্তাফিজুর রহমান পৌরশহরের হাকোবা এলাকায় একটি অর্ধ কাচাবাড়ি ভাড়া নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অতি কষ্টে সংসার চালিয়ে আসছেন। মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে অতিকষ্টে দুই মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই বোনের মধ্যে এক বছরের ছোট নূর জাহান। তাদের দুই বোনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বেশ চমৎকার। ফলে সেই ছোটবেলা থেকে তারা দুবোন এক শ্রেনিতে থেকে লেখাপড়া করছে। নূর জাহান জানান, সংসারে একটু সুখের আশায় তার মা আয়শা খাতুন ধারদেনা করে কয়েকমাস আগে ঝিয়ের(কাজের মেয়ে) কাজ নিয়ে সৌদি আরবে গেছেন। মা সৌদি থেকে গতমাসে দুবোনের টিফিনসহ হাতখরচের জন্য যৎসামান্য টাকা পাঠান। বড় বোন নুরুন্নাহার খাতুন জানান, ১৯ মার্চ তার ছোটবোন নূরজাহানের জন্মদিন। ফলে গতমাসে মায়ের পাঠানো টাকার মধ্য থেকে কিছু বাচিয়ে(হাজার তিনেক) গতকাল রোববার দুপুরে স্কুলে টিফিনের সময় শ্রেনিকক্ষে কেককেটে জন্মদিনের আনন্দ সহপাঠিসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে ভাগাভাগি করেছি।

অবশ্য আগে থেকে জন্মদিনের কথা জানতে পেরে সহপাঠিসহ শিক্ষার্থীরা নুর জাহানের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগীতার হাত বাড়াতে কমতি করেনি। কেউ টানিয়েছেন রংবেরংয়ের বেলুন, আবার কেউ ফুল দিয়ে শ্রেনিকক্ষ সাজিয়েছে। আবার কেউ এনেছে মোমবাতি ও মিষ্টি। তবে নুর জাহানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রধানসহ সব শিক্ষককে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক তাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন উপস্থিত হতে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক বিশেষ কাজে বাইরে থাকায় কোন শিক্ষক ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। পরে অবশ্য প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে আইসিটি শিক্ষক মজনুর রহমান ও অফিস সহকারি মতিয়ার রহমান অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আরো উল্লুসিত হয়। তবে শিক্ষকদের অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়া প্রসঙ্গে নূর জাহান আক্ষেপ করে বলেন, আমরা গরিব বলে হয়ত শিক্ষকরা যোগ দেননি। তবে আমি শিক্ষকদের কাছে আশির্বাদ চাই, যেন আমি বড় হয়ে মানুষের মত মানুষ হতে পারি। প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার ফিরোজ অত্যন্ত দু:খ প্রকাশ করে বলেন, অনুষ্ঠানে সব শিক্ষকদের যোগ দেওয়া উচিত ছিল। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান অবশ্য নূর জাহানের জন্মদিনে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

কিউএনবি/অনিমা/১৯ মার্চ ২০২৩,/রাত ৮:৩২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit