এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের যস খেঁজুরের রস এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে খেঁজুর গুড়ের মেলার এক ব্যতিক্রমি আয়োজন করেছে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা। এ অঞ্চলে যস ধরে রাখতেই এ খেঁজুর গুড়ের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ১৬ ও ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ উপজেলা পরিষদের মাঠের বৈশাখী মঞ্চে এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।এ উপজেলার গাছিরা হাজার বছর ধরে বিপুল পরিমান খেঁজুর গুড় উৎপাদন করে আসলেও এই প্রথম এমনমেলার আয়োজন করা হয়েছে। চৌগাছা উপজেলার বর্তমান দক্ষ ও সৃজনশীল নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা এ উপজেলায় যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে রীতিমত সকলের মনজয় করে নিয়েছেন। তিনি সাধারণমানুষকে কাছে টেনে নেন অতি সহজেই। তার সেই সব উদ্যোগের সাথে আরো একটি নতুন উদ্যোগ যোগ হলো খেঁজুর গুড়ের মেলা।
খেঁজুর গুড়ের মেলার মত একটি নতুন আইডিয়া স¤র্পকে নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ১৬ জানুয়ারী প্রথম দিন সকালে মেলার উদ্বোধন করা হবে। দ্বিতীয় দিন আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ করা হবে। মেলায় প্রধান অতিথি থাকবেন যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি থাকবেন চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সাধারন মানুষের সাথে বেড়ে উঠার কারনে আমি রস গুড় স¤র্পকে অবহিত ছিলাম। কিন্তু যখন আমি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করি তখন আমার মনে হয়েছে যশোরের এ ঐতিহ্যকে যদি আমরা জাতীয় আর্ন্তজাতিকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে এ গুড় একটি অর্থনৈতিক স¤পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। চলতি মৌসুমের শুরুতেই আমি গাছিদেরকেডেকেছিলাম মতবিনিময় করতে। সে সময় এতো বিপুল সংখ্যক গাছি যোগদান করেন যে, আমি বিস্মিত হয়ে যাই। সেখান থেকেই মূলত আমি এ মেলা করার প্রেরণা লাভ করি। সেই চিন্তা থেকেই গুড়ের এই মেলা। আমি আশাকরি আমাদের এই মেলার আয়োজন যশোরের ঐতিহ্য রস গুড়কে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান বলেন, গুড়ের মেলার আয়োজন আমার কাছে খুব চমকপ্রদ মনে হয়েছে। কেননা আমরা ছোট বেলায় এ অঞ্চলে রস গুড়ের যে বিপুল উৎপাদন দেখেছি এখন তা প্রায় হারাতে বসেছে। এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারী পৃষ্টপোষকতা দরকার যার ফলে বর্তমান সরকার নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। আমাদের এই মেলাও সেই উদ্যোগের একটি অংশ।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস খেঁজুর গুড়ের মেলা স¤র্পকে বলেন, খেঁজুর গুড় আমাদের দেশের একটি অর্থকরী সম্পদ। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে বর্তমানে এর উৎপাদন নিন্মমুখি। কিন্তু আমরা যদি খেঁজুর গুড় উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি তাহলে এর উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে আবার গাছিরাও লাভবান হবেন। সেই ক্ষেত্রে এই মেলা আমার মনে হয় একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।মেলার ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সিংহঝুলি গ্রামের গাছি তবিবর রহমান খান বলেন, গুড়ের মেলা হবে শুনে খুব ভাল লাগছে, আমার মনে হচ্ছে আমাদের খবর অনেকে রাখে। একই গ্রামের গাছি আব্দুল জব্বার মেলার কথা শুনে হাসতে হাসতে বলেন, গুড়ের মেলা হবে শুনে খুব আনন্দ লাগছে। রামকৃঞ্চপুর গ্রামের গাছি লাভলু মিয়া বলেন, বহু মেলার নাম শুনেছি কিন্তু কোনদিন গুড়ের মেলার নাম শুনিনি। শুনে খুব ভালো লাগলো যে,আমাদের নিয়েও ভাবনা চিন্তা হচ্ছে।
চৌগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু জাফর ও সাধারণ স¤পাদক জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন, যশোর অঞ্চলের ঐতিহ্য খেজুরের রস গুড় ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেজন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাই।ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড চৌগাছা শাখার ব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, গুড় একটি অর্থকারী ফসল এটাকে টিকিয়ে আমদের দায়িত্ব এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে আমরা স্বল্পমেয়াদী ঋণের ব্যবস্থাও করতে পারি, তবে উপজেলা প্রশাসনের মেলা আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই।খেঁজুর গুড়ের মেলার কথা শুনে খুবই ভাল লেগেছে। এ গুড়ের উৎপাদন বাড়াতে নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। এ ব্যাপারে গাছিদেরকে বিনিয়োগ দিতে আমি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাবো।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্মকর্তা ডাক্তার লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন, খেঁজুর গুড় একটি অত্যান্ত পুষ্টিকর খাবার, চিনিতে যে ক্ষতিকর উপাদান থাকে সেটা গুড়ে থাকে না যার ফলে গুড় খাওয়া অনেক নিরাপদ। সেকারণে উপজেলা প্রশাসন এ গুড়ের বাজারকে বিস্তৃত করতে যে মেলার উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে আমি একটি অত্যান্ত মূল্যবান প্রচেষ্টা মনে করছি।জানা যায়, এ উপজেলায় বেশি গুড় উৎপাদন হয় জগদীশপুর, মির্জাপুর, পাতিবিলা, দুলালপুর, পেটভরা,স্বরুপদহ, নারায়ণপুর, ফতেপুর ও ধুলিয়ানী।হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন, আমার ইউনিয়নে বর্তমানেও প্রচুর পরিমানে গুড় উৎপাদন হয়।আমাদের নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা গুড়ের মেলার যে আয়োজন করেছেন তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি। এটা একটি চমৎকার উদ্যোগ। এলাকার গাছিরা মেলার কথা শুনে খুব আনন্দিত।
ধুলিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মমিনুর রহমান বলেন, নির্বাহী কর্মকর্তার এ মেলার আয়োজনে আমার ইউনিয়নের গাছিরা খুব খুশি হয়েছেন।খেঁজুর গুড় নিয়ে যে মেলা হতে পারে এ আমি কল্পনাও করিনি। আমার এলাকার গাছিরা খুব খুশি। নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।সব মিলিয়ে এ গুড় মেলা নিয়ে উপজেলার সকল পর্যায়ের মানুষের মধ্যে একটা নতুন আগ্রহ উদ্দীপনা তৈরী হয়েছে। সবার একই কথা এটি একটি ব্যাতিক্রমী মেলা।
কিউএনবি/অনিমা/১৪ জানুয়ারী ২০২৩/বিকাল ৪:৩২