রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন

শেরপুরে ২ শতাধিক দেশি মুরগির খামার বন্ধ!

আবু জাহের, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি ।
  • Update Time : রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২
  • ১১৭ Time View

আবু জাহের, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়ার শেরপুরে লোকসানের মুখে প্রায় ২ শতাধিক দেশি মুরগির খামর বন্ধ হয়ে গেছে। বড় ধরনের লোকসানের মুখে পরেছে দেশি মুরগি উদ্যোক্তারা! জানা যায় এ উপজেলা প্রায় ৩ শতাধিকের উপরে দেশি মুরগির খামার থাকলেও লোকসানের মুখে বন্ধ হয়েছে ঐ সকল খামারগুলো। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক চাকরি না পেয়ে দেশি মুরগি পালনে নিজের সম্বলটুকু দিয়ে শুরু করেছিল মুরগি পালন। কিন্তু যথাযথ উপকরনের দামবৃদ্ধি, খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে নিজের সহায় সম্বলটুকু হারিয়ে পথে বসেছে এসব দেশি মুরগির খামারিরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শেরপুর উপজেলার হামছায়াপুর এলাকার মুরগির খামারি আব্দুল আজিজ জানান, নিজের গচ্ছিত টাকা ও অন্যের থেকে ধার নিয়ে দুই লক্ষ টাকা দিয়ে মুরগির খামার করি। দুএকটি সেডে মোটামুটি লাভ করে দেশি মুগির দিকে ধাবিত হয়ে প্রথম সেডেই ভালো লাভের সম্ভাবনা তৈরি হলেও হঠাৎ কিছু মুরগি অসুস্থ্য হয়। পরে চিকিৎসা সেবা নিতে শেরপুর উপজেলা ভেটেরিনারী কর্মকর্তার স্বরনাপন্য হলেও তিনি খামার পরির্দন না করেই কিছু ঔসধ লিখে দেন। যা খাওয়ানোর পরেও মুরগির অসুখ কমানো যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে মুরগি মরা শুরু হলে আবারো ডাঃ এর সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন সঠিক কোন দিক নির্দেশনা পাইনি। অনেক ধরনা দিয়েও তাকে খামারে নিয়ে আসা সম্ভব না হওয়ায় খামারের প্রায় অর্ধেক মুরগি এক রাতেই মারা যায়। যার ফলে লাভ তো দুরের কথা নিজের জমানো সম্ভবটুকু হারিয়ে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই।

সুঘাট ইউনিয়নের আরেক খামারি, আমানুল্লাহ দেশি মুরগি লালনপালন করতে গিয়ে উপজেলা প্রানীসম্পদ অফিসের স্মরনাপন্য হলে শুধু প্রেসকিপশনের মাধ্যমে সেবা পেয়েছেন। খামারে পরিদর্শনের কথা জানানো হলে আমাকে জানানো হয়, বাইকের তৈল খরচ বাবদ ৫শ টাকা আজ দিয়ে যান, কালকে গিয়ে দেখে আসবো। কিন্তু ভুক্তভোগী সেই ৫শ টাকা না দেয়ায় তার আর সেবা পাওয়া হয়নি। ফলে খামারে মুরগী মরে বড় ধরনের লোকসানের মুখে দেশি মুরগি লালন পালন বাদ দেন। আরেক খামারি আফরোজা খাতুন জানান, প্রায় ৩ বছর দেশি মুরগির খামার করেছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথম সেডে লাভের মুখ দেখলেও পরে আর লাভ করা সম্ভব হয়নি।

তিনি জানান, দেশি মুরগি মাংসের জন্য লালন পালণ করলে লাভের হার বেশি থাকে। এতে লোকসানের মুখে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু যখন ডিম দিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করার জন্য দেশি মুরগি লালনপালন করা হয় তখন দীর্ঘদিন পালনের মাধ্যমে মুরগির অসুখের সম্ভাবনা বেশি হয়। ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। তিনি তিন বছর মুরগি পালনে লক্ষাধীক টাকার লোকসান গুনে দেশি মুরগি খামার বন্ধ করতে বাধ্য হন। তিনি বলেন খাদ্যের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে লাভ করার কোন উপায় নাই। খামার আপাতত বন্ধ। কারেন্ট বিল, লেবার খরচ, ভ্যাকসিনের দাম সব মিলিয়ে মুরগি পালন করে এক টাকা লাভ নাই। ডিলাররা বর্তমানে ফিড ও বাচ্চা বাঁকিতে দিতে চাইলেও অনেক খামারি নিচ্ছেন না। মুরগি তুলে গলার কাঁটা করে কোন লাভ নাই।

শেরপুরে প্রায় প্রায় তিন শধাধিক দেশি মুরগির খামার থাকলেও বর্তমানে লোকসানের মুখে ও পাইকারিতে যে দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে তাতে কেজিতে খামারিদের লোকসান হচ্ছে এবং উৎপাদন খরচ তুলতে না পারায় ব্যবসা গোটাচ্ছেন খামারিরা। বর্তমানে ৪০ থেকে ৫০ জন খামারি দেশি মুরগি লালন পালন করছেন। কিন্ত এই প্রতিবেদককে জানান, খাদ্যের দাম, ওষুধের দাম সহ প্রয়োজনীয় সকল পন্যের দাম যেভাবে লাগামহীন ভাবে বেড়ে যাচ্ছে তাতে আগােিমত খামার চালু রাখতে পারবো কিনা আল্লাহই ভাল জানেন।

বর্তমানে ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ খামার বন্ধ। অনেক খামারি পুুঁজি সংকটে বাচ্চা না কিনে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু এখন নিয়মিত খাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি ও সেই সাথে দামে ধস নেমেছে এসময় খামারিরা বাঁচবে কিভাবে এটাই বড় প্রশ্ন। এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আবু রায়হান পিএএ জানান, লোকসানের মুখে অনেকেই খামার বন্ধ করেছেন আবার অনেকেই অন্য কিছুর দিকে ঝুকে পরেছেন। তবে আমরা চেষ্টা করবো যেন খামারিরা বর্তমান বাজার দরে তাদের পালিত মুরগী বিক্রি করে কিভাবে লাভবান হতে পারেন সেই টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিতে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৩ নভেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:৫২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit