ডেস্কনিউজঃ বিএনপির সংসদীয় দলের নেতা মো. হারুনুর রশীদ সংসদে ‘খেলা’ বন্ধের দাবি তুললে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘খেলা’ চালু রাখার কথা বলেছেন। বিএনপির শাসনামলে জিরো উন্নতি এবং তাদের অগ্নিসন্ত্রাস ও খুনের বিরুদ্ধে ‘খেলা’ হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর আগে জনদুর্ভোগ জন-অসন্তোষে রূপ নিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে সরকারকে সতর্ক করেন হারুন।
আজ বুধবার রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
অধিবেশনের শেষ পর্যায়ে হারুনুর রশীদকে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর দেন স্পিকার। এ সময় তিনি ‘জন-অসন্তোষ’ ও জনদুর্ভোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশ এখন জনদুর্ভোগের দেশে পরিণত হয়েছে। এই জন-অসন্তোষকে লাঘব করতে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে বলে মনে হয় না। ’সরকারের ‘খেলা’কে জনদুর্ভোগের সঙ্গে তুলনা করে তিনি ‘খেলা’ বন্ধের দাবি করেন।
বিমানবন্দর সড়কে যানজটের প্রসঙ্গ টেনে হারুনুর রশীদ বলেন, যানজটের কারণে গত ২৬ অক্টোবর সকালে কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে নেমে বিমানবন্দর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়েছে। বিমানের নির্ধারিত সময়ের আধাঘণ্টা পর পৌঁছাই। পথে শত শত বিমানযাত্রী বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে হেঁটে গেছেন। আর সরকারকে গালিগালাজ করেছেন। এটা এক দিনের সমস্যা নয়। ঢাকা-গাজীপুর সড়কে প্রতিনিয়ত জনদুর্ভোগ হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক বিমানযাত্রীদের জন্য যথাযথ ট্র্যাফিক ব্যবস্থাসহ আলাদা প্যাসেজ তৈরির দাবি করেন তিনি। বিমানবন্দরে তল্লাশির নামে যাত্রীদের হয়রানি করা হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
সড়ক পরিবহনমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপির সংসদ সদস্য বলেন, “যোগাযোগমন্ত্রী প্রায়ই বলছেন, খেলা হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর খেলা হবে। আমরা এমন খেলা দেখতে চাচ্ছি না যে, জনদুর্ভোগে মানুষ পড়েন। এ দেশে দ্রব্যমূল্য, বিদ্যুৎ―এগুলো নিয়ে গত কয়েক মাস যাবৎ মানুষ সভা-সমাবেশ করছে। আপনি কেন পরিবহন বন্ধ করছেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে বলেন, ‘কী কারণে পরিবহন বন্ধ হয়েছে বলতে পারব না। ’ দেশ চালাচ্ছেন কেন আপনারা? একটা নয়, দুটো নয়, একের পর এক। আগামী ৫ তারিখে বরিশালে সমাবেশ হবে। লঞ্চ বন্ধ, বাস বন্ধ, থ্রি হুইলার বন্ধ। ট্রেন বন্ধ। সব কিছু বন্ধ। এর ফলশ্রুতিতে যে জন-অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে, তা কল্পনা করা যায় না। যোগাযোগমন্ত্রী আছেন, দয়া করে দুর্ভোগ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেন। জনদুর্ভোগ আর বাড়িয়েন না। জনদুর্ভোগে যে জন-অন্তোষ তৈরি হচ্ছে, তাতে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হবে। ”
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারকে বলব, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিতে ফিরে আসুন। খেলা বন্ধ করুন। খেলা বন্ধ করে সত্যিকার অর্থে দেশকে একটি গণতান্ত্রিক পথে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। ’
জবাবে কাদের ‘খেলা’ অব্যাহত থাকবে বলে কড়া জবাব দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিরোধী দল হলেই বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করা কালচারে পরিণত হয়েছে। গাজীপুরের যে প্রকল্প—পদ্মা সেতু হয়ে গেছে, মেট্রো রেল সামনে হচ্ছে। এলিভেটেড এগিয়ে গেছে। কর্ণফুলী টনেল রেডি। কী চান আর? একটা সরকার এতগুলো প্রজেক্ট—যেদিকে তাকান ফ্লাইওভার, আন্ডার পাস ওভার পাস। আপনাদের সময় কী ছিল? জিরো। ওই জিরোর বিরুদ্ধে খেলা হবে। ওই জিরো যে করছেন! ভোগান্তিতে রাখছেন—লাখো কোটি মানুষকে। সেটিই খেলা হবে। ’
ঢাকা-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্পের প্রসঙ্গ টেনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, “গাজীপুরে পানির লাইন খুবই খারাপ। আমি নিজেও ভোগান্তিতে আছি। ‘গলার কাঁটা’ও বলেছি। স্বীকার করেছি। এসব স্বীকার করার কালচার আপনাদের মধ্যে নেই। প্রকাশ্যে বলেছি, প্রকল্পটা ডিজাইনে একটু ত্রুটি ছিল। সে কারণে প্রবলেম হয়েছে। কিন্তু আজকে যান। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ”
বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে হারুনের অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বাস ধর্মঘট কেন হয়েছে, শিমুল বিশ্বাসকে (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান) জিজ্ঞেস করুন। কেন মন্ত্রী বলবে? সে পরিবহনের নেতা। (সড়ক পরিবহন সমিতির) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি বাসদ, প্রেসিডেন্ট আওয়ামী লীগ (শাজাহান খান)। আর মালিক সমিতির প্রেসিডেন্ট রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির। সেক্রেটারি আওয়ামী লীগের এনায়েত। ভাইস প্রেসিডেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের শিমুল বিশ্বাস। সে আপনাদের দলের নেতা। তাকে জিজ্ঞেস করেন। হাসেন কেন? আগুনে বাস পুড়িয়েছে তো? আগুনে বাস পোড়ালে ভালো লাগে! বাসওয়ালারা এখন আর বিশ্বাস করে না। এরা বিএনপিকে দেখলেই মনে করে, আগুন নিয়ে আসছে। বিএনপিকে দেখলেই মনে করে পেট্রলবোমা। বিএনপিকে দেখলেই মনে করে ককটেল। এখন আবার পতাকা! লাঠিসোঁটার সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। ’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খেলা হবে। এর বিরুদ্ধেই খেলা হবে। খেলা হবে। আমি বলছি, খেলা হবে খুনের রাজনীতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। খেলা হবে আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে লুটপাটের বিরুদ্ধে। ’
কিউএনবি/বিপুল/০২.১১.২০২২/রাত ১১.৩০