সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:২০ পূর্বাহ্ন

জোড়া মাথার সেই যমজ শিশু রাবেয়া যায় স্কুলে, রোকাইয়ার পৃথিবী স্তব্ধ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ২৬৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : পাবনার চাটমোহরের জোড়া মাথার রাবেয়া স্কুলে গেলেও রোকাইয়া ভালো নেই। দেশ-বিদেশে আলোচিত সেই জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জোড়া মাথা আলাদা হবার পর হাসিখুশি আর পড়াশোনায় সময় কাটছে রাবেয়ার। তাকে স্কুলে পেয়ে খুশি তার সহপাঠি-শিক্ষকরা। 

রাবেয়ার মাথায় খুলি না থাকায় ব্রেন ঢাকা রয়েছে শুধু চামড়ায়। তবে যমজ বোন রোকাইয়ার পৃথিবী স্তব্ধ। কথা বলা, খাওয়া, গোসল, চলাফেরা কোনোটাই করতে পারে না সে। তাই জটিল অপারেশন শেষে বাড়ি ফেরার দেড় বছর পর দুই মেয়েকে নিয়ে নানা সংকট আর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন স্কুলশিক্ষক বাবা-মা। 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ জুন সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেয় জোড়া মাথার জমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তাদের নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এরপর বিষয়টি নজরে আসার পর তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয় রাবেয়া-রোকাইয়াকে। দেশি-বিদেশি শতাধিক অভিজ্ঞ চিকিৎসদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চলে তাদের চিকিৎসা ও জটিল অপারেশন। 

চিকিৎসা শেষে জোড়া মাথা আলাদা হয়ে সাড়ে তিন বছর পর ২০২১ সালের ১৫ মার্চ বাড়িতে ফেরে আলোচিত যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। সেদিন তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন স্বজন-প্রতিবেশি আর প্রশাসনের কর্মকর্তারা। 

এরপর কেটে গেছে প্রায় দেড় বছর। যমজ দুই বোন এখন অনেকটাই সুস্থ্য। তাদের বয়স এখন ছয় বছর পার করে সাত বছরে। হাসিখুশি আর খেলাধূলায় সময় কাটছে রাবেয়ার, যাচ্ছে স্কুলেও। আটলংকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর ছাত্রী সে। সহপাঠিদের সাথে পড়াশোনা, খেলাধূলা, গানে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা যায় তাকে। রাবেয়াকে পেয়ে খুশি তার সহপাঠি ও শিক্ষকরাও।

তবে খুব একটা ভাল নেই যমজ আরেক বোন রোকাইয়া। প্রতিবন্ধকতায় বেড়ে ওঠা রোকাইয়ার পুরো পৃথিবী এখন স্তব্ধ। কথা বলা, খাওয়া, গোসল, চলাফেরা কোনোটাই করতে পারে না সে। হুইল চেয়ারে কাটে দিনের বেশিরভাগ সময়। আবার রাবেয়ার মাথায় খুলি না থাকায় চামড়া দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে তার ব্রেণ। তাকে নিয়েও খুব সতর্ক থাকতে হয়। 

এমন পরিস্থিতিতে দুই মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্কুলশিক্ষক দম্পতি বাবা-মা। 

রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা অমৃতকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, রাবেয়া পুরোপুরি সুস্থ্য বলা চলে। তাকে স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। সে স্কুলে যাচ্ছে, সবার সাথে হাসিখুশিতে পড়ছে, খেলাধূলা করছে। কখনও চিন্তা করিনি আমার যমজ শিশু আলাদা হবে, স্কুলে যাবে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালবাসা আর মাতৃসুলভ মমতায় তারা নতুন জীবন পেয়েছে।

রাবেয়া-রোকাইয়ার মা আটলংকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা তাসলিমা খাতুন বলেন, “রোকাইয়াকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ও প্রতিবন্ধী হিসেবে বেড়ে উঠছে। কথা বলা, খাওয়া, গোসল, চলাফেরা কোনোটাই করতে পারে না। খাবার খেতে গেলে গলায় আটকে নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। মনে হয়, এই বুঝি ও চলে গেলো। আর রাবেয়াকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াতেও ভয়ে থাকতে হয়। কারণ ওর মাথার খুলি নেই। ব্রেনটা ঢাকা রয়েছে শুধু চামড়া দিয়ে। হঠাৎ পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেলে ওকে বাঁচানো যাবে না।”

দুইজন দুই স্কুলে শিক্ষকতা করতে গিয়ে শিশুদের দেখাশুনা বা যত্ন নেয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে উল্লেখ করে এই দম্পতি বলেন, যদি তাদের শহরের কাছাকাছি একই স্কুলে বদলী করা হয়, তাহলে ভাল হয়। এতে স্কুলের পাশে বাসা ভাড়া নিয়ে দুই মেয়েকে ভালভাবে যত্ন ও দেখাশুনা করা যাবে। 

অন্যদিকে, অর্থাভাবে রাবেয়া-রোকাইয়াকে ঠিকমতো থেরাপীও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান। বলেন, দু’জনকে থেরাপী দেয়া বেশ ব্যয়বহুল।

রাবেয়া জানায়, সে স্কুলে ভর্তি হয়ে খুব খুশি। নিয়মিত স্কুলে যায় সে। স্যার ও ম্যাডাম তাকে খুব ভালবাসে। বন্ধুদের সাথে পড়াশোনা, খেলাধূলা, ছবি আঁকা, গান সবকিছু করতে পেরে আনন্দের শেষ নেই তার।

আটলংকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা আমেনা খাতুন ও প্রধান শিক্ষিকা সাবিনা খাতুন বলেন, রাবেয়ার ব্রেন খুব তীক্ষ্ণ। ও পড়াশোনা, আচরণে ভাল।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ মহল বলেন, তারা সবসময় পরিবারটির খোঁজ খবর রাখছেন। রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা-মাকে একই স্কুলে বদলীর বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে শহরের কাছাকাছি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল এমন কোনো স্কুলে তাদের বদলী করার চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খন্দকার মনছুর রহমান বলেন, “তাদের একই স্কুলে বদলীর বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যেখানে তারা যেতে চান সেখানে পদ আপাতত খালি নেই। তারপরও বর্তমানে বদলী কার্যক্রম বন্ধ আছে। শুরু হলে এবং পদ থাকা সাপেক্ষে তাদের একই স্কুলে বদলী করার ব্যবস্থা করা হবে।”

কিউএনবি/অনিমা/০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:২২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit