ডেস্কনিউজঃ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দু’দিনের বিরতির পর ফের আন্দোলনে নেমেছেন চা-শ্রমিকরা। একইসাথে কর্মবিরতি শুরু করেছেন তারা।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দেশের আড়াই শ‘ চা বাগানে শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
জীবনমান উন্নয়ন ও মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামে চা-শ্রমিকরা। সকালে তারাপুর চা বাগান, খাদিম চা বাগান, লাক্কাতুরা, মালনীছড়াসহ সিলেট ভ্যালির ২৬ বাগানে একযোগে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। কর্মসূচি চলাকালে সব চা বাগানই শ্রমিকবিহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
চা-শ্রমিক নেতারা জানান, দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমিকরা। বার বার কর্তৃপক্ষের কাছে মজুরি বাড়ানোর দাবি জানালেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে গত শনিবার থেকে আন্দোলনে নামে চা-শ্রমিকরা। প্রথমে চার দিন দু’ঘন্টা করে কর্মবিরতি পালন ও পরে ধর্মঘট করে তারা।
এদিকে সঙ্কট নিরসনে মঙ্গলবার সাড়ে ১১টায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে চা-শ্রমিক নেতাদের সাথে শ্রম অধিদফতর কর্তৃপক্ষের দু’দফা বৈঠক হয়। এ সময় আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানান শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী এনডিসি। কিন্তু বৈঠকে কোনো বাগানের মালিকপক্ষ উপস্থিত না হওয়ায় মহাপরিচালকের কথা রাখেননি চা-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। কর্মসূচি স্থগিত করবেন না বলে জানিয়ে দেয় তারা।
শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে গত আট দিন ধরে সারাদেশের বাগান থেকে চা পাতা উত্তোলন, কারখানায় প্রক্রিয়াজাত ও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের চা শিল্প। মজুরি ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলনে নেমেছে।
জানা গেছে, চা শিল্পের অচলাবস্থা কাটাতে মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে শ্রম অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয়ে চা-শ্রমিক নেতাদের সাথে দু’দফা বৈঠক করেন শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী এনডিসি। দুপুরে হওয়া প্রথম দফা বৈঠকে চা-শ্রমিক নেতাদের আগামী ২৩ আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানান তিনি। তবে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চা-শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মহাপরিচালকের এ আহ্বানে সাড়া দেননি।
ফের বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে ১ ঘণ্টা সময় দিয়ে প্রাথমিকভাবে বৈঠক শেষ করেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। কিন্তু বিকেলে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা বৈঠকেও চা-শ্রমিক নেতারা তাদের কর্মবিরতে চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেয়। এ অবস্থায় সমাধান ছাড়াই শেষ হয় শ্রম অধিদফতর ও চা-শ্রমিকদের বৈঠক।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। গত কয়েক দিনে গাছে গাছে সবুজ পাতা আর কুঁড়ি অঙ্কুরিত হয়েছে। ফ্যাক্টরিতে নিয়ে এসব পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণের ঠিক এই সময়ে স্থবির হয়ে পড়েছে চা শিল্পের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ। এতে কোটি কোটি টাকা লোকসান হতে পারে সরকারের।
গত ৯ আগস্ট থেকে ন্যূনতম ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে প্রতিদিন দু’ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে চা-শ্রমিকরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসার চেষ্টা করে বিভাগীয় শ্রম অধিদফতর। কিন্তু মালিকপক্ষের কেউ ওই বৈঠকে আসেনি। এ অবস্থায় গত শনিবার থেকে পূর্ণ কর্মবিরতি পালন শুরু করে তারা।
মঙ্গলবার বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে শ্রমিক অধিদফতরের সাথে ফের বৈঠক হয়। তবে এতেও কোনো বাগানের মালিকপক্ষ উপস্থিত না হওয়া এ বৈঠকও ফলপ্রসূ হয়নি। তাই শ্রমিকরা ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
জানা যায়, দেশে নিবন্ধিত ১৬৭টি চা বাগানের মাঝে বৃহত্তর সিলেটেই ১৩৫টি। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯১, হবিগঞ্জে ২৫ ও সিলেটে ১৯টি। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২২, পঞ্চগড় জেলায় ৭, রাঙামাটিতে ২ এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি চা বাগান রয়েছে। চলতি মৌসুমে ৯ কোটি ৭০ লাখ কেজি চা পাতা উৎপাদনের টার্গেট রয়েছে। তবে শ্রমিক ধর্মঘটে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শ্রম অধিদফতর ও মালিকপক্ষের সাথে বৈঠকে বিষয়টির সমাধান হওয়া উভয়পক্ষের জন্য ভালো ছিল। বাগানে উত্তোলন না হওয়ায় গত এক সপ্তাহে চা গাছের পাতা ও কুঁড়ি লম্বা হয়ে গেছে। আরো দু-চার দিন চলে গেলে এসব পাতার পূর্ণ গুণগত মান আর পাওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের একটাই দাবি ছিলো দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা। কিন্তু আজকের বৈঠকেও মালিকপক্ষ কেউ ছিল না। আমাদের দাবিও মানা হয়নি। তাই আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব।
তিনি বলেন, এই দাবিতে আমরা গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছি। বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি দাওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবারও চা বাগানের মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে বসে বিভাগীয় শ্রম অধিদফতর। কিন্তু মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে আসেননি। এতে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। এরপর আমরা গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে দেশের সবগুলো চা বাগানে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়। ফলপ্রসূ বৈঠক না হওয়ায় এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এ সময় নেতারা বুধবার থেকে বিক্ষোভ-মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন।
কিউএনবি/বিপুল /১৬.০৮.২০২২/ রাত ১০.৫০