ডেস্ক নিউজ : দুর্ভোগ-ভোগান্তিতে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ‘আনন্দ’ নেই বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হয়রত আলী নামের এক ট্রেন যাত্রী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গে নিজের বাড়িতে পৌঁছতে পারেননি―ফেসবুকে তার দেওয়া পোস্টের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গতকাল সকালে শেরেবাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘যাতায়াত ব্যবস্থা, বিশেষ করে ট্রেনের কথা আপনি বলছেন, এগুলোর কোনো অথরিটি আছে, কোনো কর্তৃত্ব আছে―সেটাই মনে হয় না। রাস্তাঘাটে আপনারা দেখেছেন প্রতিদিন কিভাবে দুর্ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। রেলের সময়সূচির বিপর্যয়, দেরি করে ছাড়া, দেরি করে যাওয়া―আসলে মূল কথাটা হচ্ছে, এই সরকারের কোথাও কোনো কর্তৃত্ব নেই। মানুষের এই যে দুর্ভোগ-ভোগান্তি, তাদের কোনো আনন্দ নেই। ’
‘এই সরকার বলতে আমরা যেটা মনে করি, কোনো সুশাসন নেই, কোনো গভর্ন্যান্স নেই। শুধু একটা দিকে তাদের লক্ষ্য―দুর্নীতি করা এবং প্রকৃতপক্ষে দেশকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করছে। ’সকাল সাড়ে ১১টায় বিএনপি মহাসচিব দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানসহ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন। পরে দলের প্রতিষ্ঠাতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন তারা।
এই সময়ে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ, আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, ডা. রফিকুল ইসলাম, মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, যুব দলের মামুন হাসান, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, গোলাম সারোয়ার, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক দলের মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, জাসাসের জাকির হোসেন জাকির, জাহেদুল আলম হিটো, ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের শায়রুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যুতে লোড শেডিং সরকারের দুর্নীতি
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিদ্যুতের অবস্থা আপনারা দেখেছেন, বিদ্যুৎ নিয়ে এত বড়াই করেছেন সেই বিদ্যুতে আজকে লোড শেডিং করতে হচ্ছে তিন ঘণ্ট-চার ঘণ্টা করে। এর মূল কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। কারণ পাওয়ার প্লান্ট যেগুলো নিয়ে আসা হয়েছে এটা সম্পূর্ণভাবে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে আনা হয়েছে। এসব প্রকল্প স্থাপনে কোনো আন্তর্জাতিক টেন্ডার পর্যন্ত হয়নি এবং এমন আইন করা হয়েছে যে, এখানে যদি কোনো অভিযোগ ওঠে তাহলে কোনো রকমের মামলা করা যাবে না―অর্থাৎ ইন্ডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। কোনো সভ্য দেশে কোনো প্রকিউরমেন্টের ক্ষেত্রে এটা কোনোভাবে হতে পারে না। ’
তিনি বলেন, ‘কোনো পরিকল্পনাই সরকারের নেই। গ্যাসের কথা বলছে। আজকে এলএনজি নেওয়ার জন্যে এই সরকার গ্যাস উত্তোলনের কোনো ব্যবস্থা করেনি। তারা পুরোপুরিভাবে বিদেশে থেকে এলএনজি আমদানি করে এক/দুটি কম্পানিকে সহযোগিতা করার জন্য তারা এই সমস্ত দুর্নীতি করছে। গোটা ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশকে লুট করার জন্য সমস্ত পরিকল্পনা করে। প্রকৃতপক্ষে এই সরকার একটা লুটেরা সরকারে পরিণত হয়েছে, আওয়ামী লীগ একটা লুটেরা দলের পরিণত হয়েছে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের উন্নয়নের যে মিথ, যে ধুয়া তারা তোলেন―এটা সম্পূর্ণভাবে তাদের দুই লক্ষ্য আছে। একটি হচ্ছে দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের পকেট ভারী করা এবং আরেকটি হচ্ছে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যে তারা উন্নয়ন করছে। প্রকৃতপক্ষে এ দেশে কোনো উন্নয়ন হয়নি। আজকে এখন এ দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে গেছে। শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। ’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সব সময় দলীয় কর্মসূচি শেষ করে জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করতেন। ২০১৮ সালে দুর্নীতি মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের স্থায়ী কমিটি সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রতি ঈদে দলের প্রতিষ্ঠাতার কবর জিয়ারত করে আসছেন।
কিউএনবি/আয়শা/১০ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:০৪