ডেস্কনিউজঃ শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন এখন হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতার দখলে। বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রামাসিংহের সরকারি বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
এর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বিছানা এবং অন্যান্য আসবাবের ওপর বসে অনেক বিক্ষোভকারী সেলফি তুলছেন। বাইরে সেসময় জাতীয় পতাকা হাতে শত শত মানুষ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে। তাদের দাবির প্রেক্ষাপটে শনিবার প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী উভয়েই পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন।
শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলগুলো বেশ কিছুদিন ধরেই একটি সর্বদলীয় সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শনিবার রাজধানীতে নজিরবিহীন যে জনরোষ দেখা যাচ্ছে তাতে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্টের সামনে এখন কোনো বিকল্প ছিল না।
প্রেসিডেন্টের দেশ ছেড়ে পালানোর গুজব
কলম্বো থেকে বিবিসির একজন সংবাদদাতা বলছেন, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এখন কোথায় আছেন তা নিয়ে কেউই কিছু জানে না।
সংবাদদাতা বলেন, গুজব শোনা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট এখন কলম্বোর বিমানবন্দরে এবং তিনি যত দ্রুত সম্ভব দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন।
এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়েছে যে প্রেসিডেন্ট কলম্বো বন্দরের কাছে কোথাও আছেন এবং হয়তো সমুদ্রপথে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে বন্দরের কাছে নোঙর করা দুটি জাহাজে প্রচুর লাগেজ ওঠাতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভকারীদের দখলে কলম্বো
এর আগে, হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা জোর করে কলম্বোতে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকশার বাসভবনে ঢুকে পড়ে।
বিক্ষোভকারীদের নিরস্ত করতে কাঁদানে গ্যাসের পাশাপাশি পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে, কিন্তু তাদের ঠেকানো সম্ভব হয়নি।
প্রেসিডেট এখন কোথায় আছেন জানা যায়নি তবে প্রতিরক্ষা দফতর থেকে জানানো হয়েছে, তাকে অজ্ঞাত কোন নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
‘প্রেসিডেন্টকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,’ – প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তাতে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। ‘তিনি এখনো দেশের প্রেসিডেন্ট এবং সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট তাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে।’
শ্রীলঙ্কায় নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের কারণে খাবার সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে প্রচণ্ড টান পড়ায় জ্বালানি তেল, খাদ্য এবং ওষুধ পর্যন্ত আমদানি করতে পারছে না সরকার।
পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখ্যান করলেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোটাভায়া রাজাপাকশা
এরই প্রেক্ষাপটে, সরকারের বিরুদ্ধে ‘আর্থিক অব্যবস্থাপনার’ অভিযোগে গত কয়েক মাস ধরে শ্রীলংকার সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভ করছে।
কিন্তু শনিবার পরিস্থিতি চরম আকার নেয় যখন সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ কলম্বোতে এসে শহরের যে এলাকায় সরকারি অফিস-আদালত এবং মন্ত্রী কর্মকর্তাদের বাসভবন রয়েছে সেখানে ঢুকে পড়ে।
এক পর্যায়ে, ‘গোটা গো হোম’ (গোটা বাড়িতে চলে যাও) স্লোগান দিতে দিতে অনেক মানুষ জোর করে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে পড়ে।
প্রেসিডেন্টের ঘর-ছাদ-সুইমিং পুল মানুষের দখলে
প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া যায়নি, তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সহ আহত ৩৩ জনকে কলম্বোর ন্যাশনাল হসপিটাল অব শ্রীলঙ্কায় নেয়া হয়েছে বলে বিবিসি সিনহলা সার্ভিসকে জানিয়েছেন হাসপাতালের একজন মুখপাত্র।
ফেসবুকে বিভিন্ন লাইভস্ট্রিমে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট বাসভবনের ভেতর বিভিন্ন কক্ষে এবং করিডোরে শত শত মানুষ। বাইরের উদ্যানে এবং ভবনের ছাদেও বহু বিক্ষোভকারী অবস্থান করছে। তাদের অনেকের হাতে শ্রীলঙ্কার পতাকা।
একটি ফুটেজে দেখা গেছে বেশ কজন বিক্ষোভকারি ভবনের চত্বরের সুইমিং পুলে নেমে সাঁতার কাটছে, ঝাপাঝাপি করছে।
জানা গেছে, কিছুটা দূরে প্রেসিডেন্টের অফিস ভবনের মধ্যেও একদল বিক্ষোভকারী ঢুকে পড়ে।
শনিবার কলম্বোতে নির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি ঠেকাতে শুক্রবার রাতেই সরকার রাজধানীতে কারফিউ জারি করে। কিন্তু বিরোধী দল এবং নাগরিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদের মুখে কারফিউ তুলে নেওয়া হয়।
সংকট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রামাসিংহে দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি জরুরী বৈঠকে ডেকেছেন। তিনি স্পিকারকে পার্লামেন্টের অধিবেশন ডাকতে বলেছেন।
সূত্র : বিবিসি
কিউএনবি/বিপুল/১০.০৭.২০২২/সকাল ১০.৪০