বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে থানা পুলিশের হেফাজতে ব্যবসায়ী নজির আহমেদ সাপুর মৃত্যুর ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে দায়েরকৃত মামলাটিতে আমলে নিয়ে আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ শারমিন সুলতানা নিগার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।এর আগে গত রোববার দুপুরে নিহত ব্যবসায়ী নজির আহমেদ সাপুর স্ত্রী শিরীন সুলতানা রিমা বাদী হয়ে সরাইল থানার এস.আই সাইফুল এবং এ.এস.আই সাইফুলসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনকে আসামি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগের পাশাপাশি উল্লেখিত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধ নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন (২০১৩ ) এই অভিযোগ আনয়ন করা হয়েছে।গত রোববার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ শারমিন সুলতানা নিগার বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে মামলাটি আদেশের জন্য রেখে দেন। মঙ্গলবার তিনি মামলাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন। উল্লেখ্য, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের জুম্মান নামের এক আসামি গত ২১ এপ্রিল রাতে ব্যবসায়ী নজির আহমেদ সাপুর ঘরে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলে তাকে আটক করলে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামি জুম্মান ও ব্যবসায়ী নজিরকে থানায় নিয়ে আসার পর রাত আনুমানিক সাড়ে ১০ টায় পুলিশ হেফাজতে ব্যবসায়ী নজিরের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ব্যবসায়ী নজিরের মরদেহ হাসপাতালে রেখেই পুলিশ তড়িঘড়ি করে নিজেরাই থানার কম্পিউটারে এজাহার লিখিয়ে নজিরের বড় ভাই জাফর আহমেদকে বাদী করে একটি এফআইআর গ্রহণ করে।আদালতে দায়েরকৃত মামলায় সরাইল থানার এস.আই সাইফুল এবং এ.এস.আই সাইফুলসহ আগের মামলার ১৩ আসামিকে আসামি করা হয়েছে।মামলার বাদিনী শিরীন সুলতানা রিমা এজাহারে অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন দুপুরে মামলার আসামি মাহফুজ মিয়া, দানু মিয়া,শাহাবুদ্দিনসহ অপরাপর আসামিরা পাড়ার একটি ফার্নিচারের দোকানে উপস্থিত লোকজনকে জানিয়ে আসেন তারা নজির আহমেদ সাপুর বসত বাড়ির পাওয়ার অব এ্যাটনি পেয়েছে। পরে তারা নজিরকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসেন।একই দিন বিকেলে মামলার আসামি জুম্মানসহ আরো কয়েকজন আসামি নজির ও তার স্ত্রীকে হুমকি দেন যে নালিশা বাড়িতে বসবাস করতে হলে তাদের ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে না হলে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে। এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টায় আসামি জুম্মান ব্যবসায়ী নজির আহমেদ এর ঘরে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রবেশ করলে টের পেয়ে নজির তাকে আটক করলে খবর পেয়ে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়।
এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন জুম্মানকে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য নজিরের বাড়িতে হামলা করে।এ সময় তাৎক্ষনিক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ব্যবসায়ী নজিরের কাছে জানতে চান কেন জুম্মানকে আটকে রাখা হয়েছে। মামলার বাদিনী দাবি করেন পুলিশ নজিরের কোন কথা না শুনেই তাকে জুম্মানের সাথে টেনে হিঁচড়ে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে নজিরের স্বজনরা থানায় গিয়ে জানতে পারেন নজিরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গিয়ে তারা নজিরকে মৃত দেখতে পান। ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক মন্তব্য করেন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই নজিরের মৃত্যু হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন থানায় পুলিশ ও অপরাপর আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে নির্যাতন করে তার স্বামীকে হত্যা করেছে ।
বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মোঃ নাছির মিয়া। তাকে সহায়তা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানবীর ভূইয়া, সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ জামাল, সিনিয়র অ্যাডভোকেট আখতার হোসেন সাঈদ, অ্যাডভোকেট অসীম কুমার বর্দ্ধন, অ্যাডভোকেট আবদুন নূর প্রমুখ।এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মোঃ নাছির জানান, বিজ্ঞ আদালতে দ্বিতীয়বার এফআইআর গ্রহণ করার পক্ষে আমরা উচ্চ আদালতের রেফারেন্সসহ আমাদের যুক্তি তুলে ধরেছি। আদালত বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করেছেন। মঙ্গলবার তিনি মামলাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দেন।
কিউএনবি/অনিমা/১২.০৫.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১০:০৮