বায়তুল্লাহ দৃষ্টিগোচর হলে
মহান আল্লাহর পবিত্র ঘর বায়তুল্লাহ দৃষ্টিগোচর হলে যেকোনো মুমিনই আপ্লুত হয়ে পড়ে। হাদিসে এসেছে কাবাঘর দেখামাত্রই যে দোয়া করবে, তা-ই কবুল হবে। উমামা থেকে বর্ণিত; রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হয়, দোয়া কবুল করা হয় চারটি স্থানে, ১. কাতার সোজা করার সময়, ২. বৃষ্টির সময়, ৩. ইকামতের সময়, ৪. বায়তুল্লাহ দৃষ্টিগোচর হলে। (সুনানু বায়হাকি: ৭২৪০; তাবারানি: ১৬৯)
মুলতাজাম
মুলতাজাম হলো কাবার একটি বিশেষ স্থান। হাজরে আসওয়াদ থেকে কাবা দরজা পর্যন্ত যে অংশটি রয়েছে, তাকে মুলতাজাম বলা হয়। এটি কাবাঘরের সবচেয়ে বরকতময় স্থানগুলোর একটি। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম এখানে বুক, মুখ ও হাত লাগিয়ে দোয়া করতেন।
ইবনু আব্বাস রা. বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে দেখেছি, তিনি মুলতাজিমে বুক ও গাল লাগিয়ে দোয়া করেছেন। (সুনানুল কুবরা, আল-বাইহাকি: ৯৬০৫) এই স্থানকে দোয়া কবুলের স্থান বলা হয়, কারণ এটি কাবার দরজার ঠিক পাশে,রহমতের প্রবেশদ্বার।
মিজাবে রহমত
এটি কাবাঘরের ছাদের ওপর একটি স্বর্ণনল, যেখান থেকে বৃষ্টির পানি পড়ে। সাহাবিরা এখানে দাঁড়িয়ে দোয়া করতেন। ইসলামি ঐতিহ্যে এটি এমন স্থান হিসেবে পরিচিত, যেখানে দোয়া প্রত্যাখ্যাত হয় না। ইমাম শাওকানি রহ. বলেন, হিজরে ইসমাঈল ও মিজাবে রহমতের নিচে দোয়া কবুল হয়। (নাইলুল আওতার: ৫/১০৭)
রুকনে শামি ও ইয়ামানি অংশের মাঝে
তাওয়াফের সময় রুকনে শামি থেকে রুকনে ইয়ামানি পর্যন্ত চলার পথে দোয়া করা সুন্নাহ। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ স্থানে বিশেষ দোয়া পাঠ করতেন,
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখিরাতে কল্যাণ দান করুন, আর আমাদের জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। (সহিহ বুখারি: ৬৩৭১; সহিহ মুসলিম: ১২৬৬)
রুকনে ইয়ামিনি
তাওয়াফের সময় রুকনে ইয়ামিনিকে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পর্শ করতেন, ইবনু উমর রা. বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে রুকনে ইয়ামিনি স্পর্শ করতে দেখেছি। (সহিহ বুখারি:১৬০৯) ইমাম ইবনুল জাওজি রহ. বলেন, এ স্থানে দোয়া করা বরকতময়, কারণ এটি কাবার মূল ভিত্তির অংশ।
সাফা ও মারওয়া পাহাড়
হজ ও ওমরার অংশ হিসেবে সাফা-মারওয়ায় সায়ি করার সময় দোয়া করা সুন্নাহ। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত।
(সুরা বাকারা:১৫৮) অতঃপর নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফায় দাঁড়িয়ে কিবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে তিনবার দোয়া করতেন। (সহিহ মুসলিম: ১২১৮)
মসজিদে কুবা
মাদিনার এই প্রথম মসজিদে নামাজ ও দোয়া করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। রলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মসজিদে কুবায় এসে দুই রাকআত নামাজ আদায় করে, তার জন্য একটি ওমরার সওয়াব রয়েছে। (ইবনু মাজাহ: ১৪১২) এ মসজিদে দোয়া করা বরকতময়, কারণ এখানে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়মিত আসতেন।
মুজদালিফা ও মিনা
হজের অংশ হিসেবে এই দুটি স্থানে অবস্থান করে দোয়া করা সুন্নাহ। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ যখন তোমরা আরাফা থেকে ফিরে আসবে, তখন মাশআরুল হারামে (মজদালিফায়) আল্লাহকে স্মরণ করো। (সুরা বাকারা: ১৯৮) মুজদালিফা ও মিনায় আল্লাহর স্মরণ ও দোয়া অত্যন্ত প্রশংসনীয় ইবাদত।
আরাফার ময়দান (হজের দিন)
এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বরকতময় স্থানগুলোর একটি। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম দোয়া হলো আরাফার দিনের দোয়া। (সুনানুত তিরমিজি:৩৫৮৫) এই দিনে বান্দা ও রবের মাঝে কোনো পর্দা থাকে না; আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেন।
মসজিদে নববী (মাদিনার রওজা মুবারক)
রওজাহ মুবারক নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর মিম্বর ও কবরের মধ্যবর্তী স্থান, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার ঘর ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান। (সহিহ বুখারি: ১১৯৫ এ স্থানে দোয়া করলে তা কবুল হয়ে থাকে, কেননা এটি জান্নাতের টুকরো।
দোয়া কবুলের স্থানগুলোর এই তালিকা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ইসলামে কেবল স্থান নয়,আন্তরিকতা, বিনয়, ও খোদাভীতিই দোয়া কবুলের আসল রহস্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ তোমাদের রব বলেন, আমাকে ডাকো,আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। (সুরা গাফির: ৬০)