মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৪:৫১ অপরাহ্ন

ফিরে দেখা অভ্যুত্থানের দিনগুলো, কী বলছেন জুলাই যোদ্ধারা?

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০২৫
  • ৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : রাজুভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়েছিল যে ন্যায্যতার লড়াই তার আজ ১ বছর পূর্ণ হলো। যে স্বপ্ন আর সম্ভাবনায় রচিত হয়েছিলো ৩৬ জুলাই, ১ বছরে সে পথে কতটা এগুলো বাংলাদেশ? বন্ধ হয়েছে কি বৈষম্য? মুক্তি পেয়েছে কি কথা বলার স্বাধীনতা? গন্ত্রতন্ত্রই বা কতটুকু পুঃনপ্রতিষ্ঠিত হলো? সে প্রশ্ন সবার। ১৮’র কোটা আন্দোলন ফিরে আসে ২৪’র পহেলা জুলাইতে। তপ্ত রোদে একদল শিক্ষার্থী ন্যায্যতার দাবি নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়ায়। স্লোগানে বারুদ কন্ঠ— ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’।

শুরু নতুন ইতিহাস নির্মাণের লড়াই। কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের জন্য সরকারকে দেয়া হয় আল্টিমেটাম। এর ফাঁকে চলে যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে অনলাইন-অফলাইনে জনমত তৈরির কাজ। ৭ জুলাই পালিত হয় বাংলা ব্লকেড। ধারাবাহিকভাবে চলে বিক্ষোভ-অবরোধ। আন্দোলনে নামে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। শুরু হয় তাদের অপবাদ দেয়ার অপচেষ্টা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কটূক্তি করে বসেন স্বয়ং শেখ হাসিনা। এতে তীব্র ক্ষোভে ফেঁটে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কোটার বিষয়ে শেখ হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?

সেই ক্ষোভ স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে যায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বন্দুকের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে শহীদ হোন রংপুরের আবু সাঈদ। রাষ্ট্রযন্ত্রের সীমাহীন দমন-নিপীড়নের সাথে পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলে পড়ে ছাত্রলীগ। বন্ধ হয় ক্যাম্পাস। আসে হল ছাড়ার নির্দেশ। তবুও কিছু তরুণ চালিয়ে যান আন্দোলন। প্রতিবাদে যোগ দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

তীব্র আন্দোলনের মুখে আদালত থেকে ২১ জুলাই রায় আসে কোটা সংস্কারের। কিন্তু তখনো থামেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি, হামলা আর গ্রেফতার। সরকারের চাপেও তাই আন্দোলন স্থগিতে রাজি হননি সমন্বয়করা। তুলে নেয়া হয় তাদের ছয়জনকে। বাকিরা ঘোষণা করেন ৯ দফা। আন্দোলনে যোগ দিতে শুরু করে রাজনৈতিক দল থেকে সাধারণ মানুষ। পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার সব প্রবেশপথ। অনলাইন-অফলাইনে চলতে থাকে অভিনব নানা কর্মসূচি। বাড়তে থাকে পুলিশ আর বন্দুকধারীদের গুলিতে প্রাণ হারানো বিপ্লবী বন্ধুদের সংখ্যাও। রেমিট্যান্স বন্ধ করে প্রতিবাদে শামিল হোন প্রবাসীরা।

৩ আগস্ট শুক্রবার। ডাক আসে শহীদ মিনারে। সেদিন ঢাকার সব সড়ক মেশে স্মৃতির মিনারে। লাখো মানুষের জমায়েত থেকে ঘোষণা এলো এক দফার। শেখ হাসিনাকে আর চায় না বাংলাদেশ। এক দফার ঘোষণায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্বৈরাচারের রেজিম। বাড়তে থাকে হত্যাযজ্ঞ। পুড়িয়ে ফেলা হয় মরদেহ। এর মাঝেই প্রথমে ৬ আগস্ট, পরে ৫ তারিখেই লংমার্চের কর্মসূচি দেন জুলাই যোদ্ধারা। রচিত হয় নতুন ইতিহাস। দেশ ছেড়ে পালান শেখ হাসিনা। শৃঙ্খল ভাঙার আনন্দে মেতে ওঠে গোটা দেশ।

সেই আনন্দ আর ত্যাগের এক বছরের মাথায় স্বপ্নদেখা তরুণদের কাছে প্রশ্ন ছিল কেমন আছে বাংলাদেশ?

জবাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলকে আমরা উৎখাত করতে পেরেছি। ফলে আমাদের একটা ধাপ অর্জিত হয়েছে। কিন্তু দেশটাকে নতুনভাবে গঠন করার কাজটা এখনও বাকি। সেই জায়গায় অপ্রাপ্তি, সেই জায়গায় হতাশা। তবে এখনও সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। জুলাইয়ের ওপর দাঁড়িয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলেও উল্লেখ করেন এনসিপির এ নেতা। অপরদিকে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘যেই চাওয়ার জায়গা থেকে এতগুলো মানুষ প্রাণ দিলো, সেই জায়গায় যদি কম্প্রোমাইজড হন, তাহলে মানুষ প্রত্যাখ্যান করবে।’

কথা ছিল পরিবারতন্ত্র, স্বজনপ্রীতির ঊর্ধ্বে উঠে হবে সংস্কার। উন্নয়ন হবে সাধারণের জীবনমানের। সে প্রত্যাশা কতটা মিটেছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিপ্লবের পরে যে প্রত্যাশা থাকে, মানুষের মধ্যে সেই প্রত্যাশা ছিল। ১৭ বছরের যে ক্ষোভ, বঞ্চনা, বৈষম্য সেটার দ্রুত সমাধান চেয়েছিল সবাই। সেই প্রত্যাশা আসলে পূরণ হয়নি। আর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা বলেছিলাম, শুধু হাসিনার পতনের কথা বলিনি। আমরা ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পতনের কথা বলেছিলাম।’

যদিও আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল যে ছাত্ররা, তারাই এখন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে। চোখে তাদের এক আকাশ সমান স্বপ্ন। গড়বে নতুন সোনার বাংলা। আর তাতে সমর্থন দিচ্ছে দেশের আপামর জনতা। আশায় বুক বেঁধে আছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। ধারণা তাদের, পরিবর্তন আসবেই এ দেশে। তারই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা।

 

কিউএনবি/আয়শা//০১ জুলাই ২০২৫,/বিকাল ৪:৩৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit