বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : নোয়াখালী জেলার উপকূলীয় দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া থেকে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সংগঠন “ঢাকাস্থ হাতিয়া ফোরাম” আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২৭ জুন(২০২৫) শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় আয়োজিত এ আয়োজনে মিলিত হন ঢাকাস্থ হাতিয়ার সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, ছাত্র-ছাত্রী, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিরা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট আমিমুল এহসান ও ঢাবি শিক্ষার্থী আনিছ মাহমুদ ছাকিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী-৬ আসনের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ মাহফুজুল হক চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্ব আবু সাদিক কায়েম।
এতে আরো উপস্থিত ছিলেন হাতিয়া জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাস্টার মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন, হাতিয়া দ্বীপ সমিতি, ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন যতন, যুব ফোরাম, ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাবিব, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও হাতিয়া পৌরসভা জামায়াত ইসলামি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী সাব্বির আহমেদ তাফসির ও হাতিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি নুরুদ্দিন মেশকাত প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সাবেক ও বর্তমান নেতারা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমরা প্রত্যাশা করব ঢাকাস্থ হাতিয়া ফোরাম গতানুগতিক সংগঠনগুলোর মতো শুধুমাত্র ইফতার মাহফিল ও ঈদ পুনর্মিলনীতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। সংগঠনটি এখন থেকে দ্বীপবাসীর প্রকৃত উন্নয়নে গরীব-দুস্থদের চিকিৎসা সহায়তা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা ও ঢাকায় আগত হাতিয়ার জনগণের মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। বক্তারা আরও বলেন, আমরা একটি বৈষম্যহীন, সুশৃঙ্খল ও উন্নত হাতিয়ার স্বপ্ন দেখি। এজন্য প্রয়োজন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস।
হাতিয়া পৌর মেয়র পদপ্রার্থী সাব্বির আহমেদ তাফসির বলেন, হাতিয়ার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমরা কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমরা এ কাজে খুব একটা সফলতা দেখতে পাইনি। ঢাকাস্থ হাতিয়া ফোরামের প্রতি আহ্বান থাকবে হাতিয়ার মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধানে হাতিয়ার জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করে নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের পৌরসভা নানান সমস্যায় জর্জরিত রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে একটা মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে পৌরসভার সকল নাগরিকের একান্ত সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হাতিয়া শাখার আমির মাস্টার বোরহান উদ্দিন বলেন, হাতিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি। এর প্রধান কারণ সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। এখন সময় এসেছে পৌরসভা থেকে শুরু করে প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, একসময় শিবির করার অপরাধে আমাকে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হতে দেওয়া হয়নি। আজ এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আমরা মুক্ত বাতাসে অনুষ্ঠান করছি—এ এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। আমাদের সেই সোনালী সংগ্রামের দিনগুলোর প্রতিফলন আজকের এই মুক্ত স্বাধীন পরিবেশ।
শাহ মাহফুজুল হক বলেন, ‘২৪ এর এই আন্দোলন জালিমের কারাগার ভেঙে মজলুমদের মুক্তি দিয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে এ জাতি একটি সুষ্ঠু সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই স্বপ্নের অগ্রযাত্রায় আমাদের দীর্ঘদিনের অবহেলিত দ্বীপ, আমাদের মাতৃভূমি হাতিয়াকে নিয়েও আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই।
হাতিয়ার দীর্ঘদিনের চিকিৎসা সংকট, ফেরি সমস্যা, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, নদী ভাঙন ইত্যাদি সমস্যার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, হাতিয়াতে হাসপাতাল থাকলেও ডাক্তার নেই। কিছু হলেই রোগিকে নিয়ে ছুটতে হয় নোয়াখালী সদর কিংবা ঢাকার পথে। আর যাওয়ার পথেই প্রাণ হারায় বহু রোগী, অসুস্থ হয়ে পড়ে রোগীর স্বজনরাও।
তিনি বলেন, আমাদের এ সমস্যাগুলো দীর্ঘ ১৭ বছরেও সমাধান হয়নি। কারণ দুর্নীতিগ্রস্ত একটি পরিবার এই দ্বীপবাসীকে জিম্মি করে রেখেছে। তারা কেবল তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা ও নিজের পকেট ভারী করার প্রতিই মনোযোগী ছিল। হাতিয়ার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। অথচ আমাদের হাতিয়াতে রয়েছে অফার সম্ভাবনাময় পর্যটন এরিয়া নিঝুম দ্বীপ, রয়েছে মৎস সম্পদ, রয়েছে প্রাণী সম্পদ, আমাদের রয়েছে বিশালাকার বনজ সম্পদ। এত এত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ থাকা সত্ত্বেও হাতিয়ার মানুষের আজ দুর্ভোগ আর দুর্ভোগ! কারণ একটাই- আমাদের সৎ যোগ্য নেতৃত্বের বড়ই অভাব।
মাহফুজুল হক বলেন, মালদ্বীপ ও সিঙ্গাপুরের মতো ছোট আয়তনের দেশগুলো আজ পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল হতে পেরেছে কেবল তাদের সৎ ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। সুতরাং আসুন- আজ সময় এসেছে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে সকল শ্রেণির মানুষকে নিয়ে একটি সুখী সমৃদ্ধ হাতিয়া গড়ার। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মশিউর রহমান এবং কাসিদা ব্যান্ডের লিড ভোকালিস্ট আহমেদ আতাউল্লাহ বুখারী সালমান। নাট্যভিনয় করেছেন আব্দুল গণি বিদ্যান,ফারুক খান এবং তাফহিম ইলিয়াস।
কিউএনবি/আয়শা//৩০ জুন ২০২৫, /সন্ধ্যা ৭:৪০