লুৎফুন্নাহার রুমা, ব্যুরো চিফ ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ ত্রিশালে সাংবাদিক হেনস্তার জেরে নজরুল জন্মবার্ষিকী অনুষ্ঠান বয়কট করে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে চরম অপেশাদারিত্ব ও হয়রানির শিকার হয়ে অনুষ্ঠান বয়কট করেছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালের সাংবাদিকরা। ময়মনসিংহ ত্রিশালের স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে স্বেচ্ছাসেবকদের বাধায় ক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা সম্মিলিতভাবে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন, যা নজরুল জয়ন্তীর মতো অনুষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে মঙ্গলবার ২৭ মে যখন বিকেল তিনটায় নজরুল জন্মজয়ন্তীর সমাপনী দিনের আলোচনা শুরু হয়। আমন্ত্রিত অতিথিরা কবি নজরুলের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করছিলেন। সাংবাদিকরা ছবি তোলা এবং ভিডিও করতে গেলে অনুষ্ঠানে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের বাধা দেন। সাংবাদিকরা এ হেতুর কারণ জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, এটি প্রশাসনের নির্দেশ।
এ মত অবস্থায়, ইত্তেফাকের ফারুক আহমেদ এবং আজকের পত্রিকার সাইফুল আলম তুহিন, সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব করে মঞ্চে উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারীর কাছে বিষয়টি জানতে চান। ইউএনও তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “কাছে গিয়ে ছবি তুললে ভিআইপিদের সমস্যা হয়। দূর থেকে ছবি তুললে ভালো হয়।” ইউএনও’র এমন বক্তব্যে সাংবাদিক মহলে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় সাংবাদিকরা সর্বসম্মতিক্রমে অনুষ্ঠান বয়কট করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। যদিও পরবর্তীতে ইউএনও আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী তার বক্তব্য অস্বীকার করেন, ততক্ষণে বিষয়টি হাতের বাইরে চলে গেছে।
তবে, এ ঘটনা নতুন নয়। গত ২৫ মে রবিবার, তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনী দিনেও একই ঘটনার শিকার হন যমুনা টিভির ময়মনসিংহ ব্যুরোর ক্যামেরা পারসন দেলোয়ার হোসেন। আজকের পত্রিকার ত্রিশাল প্রতিনিধি সাইফুল আলম তুহিন ইউএনও’র উক্তি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “ইউএনও বলেছেন, কাছে গিয়ে ছবি তুললে ভিআইপিদের সমস্যা হয়। দূর থেকে ছবি তুললে ভালো হয়।” স্থানীয় সাংবাদিক ইমরান হাসান বুলবুলও তার নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “অনুষ্ঠানের প্রথমদিন আমিও হেনস্তার শিকার হয়েছি।
আমি ছবি তুলতে গেলে বাঁধা দিয়ে বলেন এখান থেকে ছবি নেয়া যাবে না। দূর থেকে ছবি তুলেন। আমি সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও ইউএনও’র নিয়োগকৃত স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ধাক্কা দিয়ে খারাপ আচরণ করে।” ত্রিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নোমান এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “পেশাদার সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে বাঁধার সম্মুখীন হওয়া দুঃখজনক। এর আগে সবসময় জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নজরুল জন্মজয়ন্তীতে সাংবাদিকরা নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করেছে।
এবারের স্থানীয় পর্যায়ে পালিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে না পারা স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা।” অন্যদিকে, দায়িত্বপ্রাপ্ত রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির টিম লিডার হাসান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “উর্ধতন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের ছবি তুলতে নিষেধ করেন নি। তবে ভিআইপিদের অসুবিধার্থে জানিয়ে তাদের দুইজন দুইজন করে কাছে যেয়ে ছবি তুলতে বলা হয়েছে।” ত্রিশাল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার-উক্তিতে বলেন, “স্বেচ্ছাসেবকরা বুঝতে পারে নাই, চিনতে পারে নাই তাই কাকে যেনো বাঁধা দিয়েছিল।
সাংবাদিকরা ফুটেজ নিতে পারে কোনো সমস্যা নাই।” তবে, সাংবাদিকদের ওপর এমন আচরণ এবং পরবর্তীতে তা অস্বীকার করার ঘটনা জনমনে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া এবং তাদের প্রতি এমন আচরণ কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। এ ঘটনা স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর একটি স্পষ্ট আঘাত এবং স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা ও অপেশাদারিত্বেরই প্রমাণ দেখিয়েছেন।
কিউএনবি/আয়শা/২৯ মে ২০২৫, /রাত ১২:৩২