 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    ডেস্ক নিউজ : হজ আর্থিকভাবে সচ্ছল মুমিনদের জন্য একটি অবশ্যপালনীয় ইবাদত। জীবনে একবারের জন্য হলেও বাইতুল্লাহ অর্থাৎ পবিত্র কাবাঘর জিয়ারতের স্বপ্ন প্রতিটি মুমিন পোষণ করেন। যে বাইতুল্লাহকে কিবলা বানিয়ে প্রতিদিন সালাত বা নামাজ আদায় করেন মুসলমানরা, তা নিজ চোখে দেখা যাদের পক্ষে সম্ভব হয় তারা নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবান।
হজ অর্থ সংকল্প করা। সংকল্পবদ্ধ মুমিনরাই কেবল আল্লাহর মেহমান হিসেবে হজ পালনের সুযোগ পান। ইসলামি পরিভাষায়, মিকাত থেকে জিয়ারতের উদ্দেশে ইহরাম বেঁধে নির্দিষ্ট দিনে বাইতুল্লাহ, মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফা ও সাফা মারওয়া পরিভ্রমণ করাই হজ। রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করবে, কোনো অশ্লীলতা বা গুনাহের কাজে লিপ্ত হবে না, সে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে (সহি বুখারি : ১৫২১)। রসুল (সা.)।’ আরও বলেন, ‘হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া কিছুই নয় (সহি বুখারি : ১৭৭৩)।’
হজের সময় হজরত ইব্রাহিম (আ.), হজরত ইসমাইল (আ.) এবং হজরত হাজেরা (আ.)-এর আল্লাহপ্রেমের স্মৃতিবিজড়িত মিনা, মুজদালিফা, আরাফা, সাফা-মারওয়াকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেন হাজিরা। অনুভব করেন মুসলিম জাতির আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আল্লাহপ্রেমের কথা। মহান আল্লাহর মেহমান হিসেবে অতীতের ভুলত্রুটি ক্ষমা করিয়ে নেওয়ার বাসনা প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে সদাজাগ্রত থাকে। হজের মাধ্যমে গুনাহ মুক্তজীবন গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ফিরে আসেন অতিথি হাজি নিজের আস্তানায়।
হজের উদ্দেশ্যে যাত্রার আগে শিরক ও কুফরির অপবিত্রতা থেকে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে মুক্ত করতে হবে। হজের সফরে যাবতীয় হারামের স্পর্শ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখাও জরুরি। এ বিষয়ে অবলম্বন করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতা। হারাম খাদ্য-পানীয় থেকে দূরে থাকতে হবে সচেতনভাবে। কোনো হারাম উপার্জন যেন তাতে না মেশে, সে বিষয়ে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারও কাছে কোনো অন্যায় করলে, তার কাছ থেকে নিজেকে দায়মুক্ত করে নেওয়া জরুরি। সামর্থ্যবান মুসলিমদের ওপর জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। একের অধিক যে হজ তা নফল ইবাদত হিসেবে বিবেচিত হয়। কোনো ব্যক্তি যে বছর হজের সামর্থ্য লাভ করেন, সে বছরেই তার ওপর হজ আবশ্যক। তবে ছুটে না যাওয়ার শর্তে তা বিলম্বে আদায় করা জায়েজ (আবু দাউদ : ১৭৩২)। পবিত্র বাইতুল্লাহসহ হজের আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানসমূহে যাতায়াত, সেগুলোতে অবস্থানকালীন ব্যয় এবং হজ সম্পন্ন করে ফিরে আসা পর্যন্ত নিজ পরিবার-পরিজনের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ-সক্ষম স্বাধীন মুসলিমের ওপর হজ ফরজ।
হজ তিন প্রকার- ইফরাদ হজ : মিকাত হতে শুধু হজের জন্য ইহরাম বাঁধা। কিরান হজ : মিকাত হতে একই সঙ্গে ওমরা ও হজের জন্য ইহরাম বাঁধা। তামাত্তু হজ : মিকাত থেকে শুধু ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধা। ওমরা পালন শেষে হালাল হয়ে মক্কায় অবস্থান করা এবং জিলহজের ৮ তারিখে হারামের সীমানা থেকে হজের জন্য ইহরাম বেঁধে হজ সম্পন্ন ইহরাম হজের ফরজ তিনটি- ইহরাম বাঁধা, আরাফার ময়দানে অবস্থান ও তাওয়াফ। হজের ওয়াজিব ছয়টি- মুজদালিফায় অবস্থান, জামারাতে শয়তানের উদ্দেশ্যে কঙ্কর নিক্ষেপ, দমে শোকর বা কোরবানি করা (কিরান এবং তামাত্তু হাজিদের জন্য), মাথা মুন্ডানো অথবা চুল ছোট করা, সাফা-মারওয়ায় সাঈ করা, বিদায়ি তাওয়াফ (মিকাতের বাইরে থেকে আগতদের জন্য)। হজের সুন্নতের মধ্যে রয়েছে ইহরামের আগে গোসল করা, পুরুষদের ইহরামের চাদর সাদা হওয়া, অধিক পরিমাণে তালবিয়া পাঠ করা, ইফরাদ হাজিগণ তাওয়াফে কুদুম করা, ৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করা, ৮, ১০ ও ১১ জিলহজ দিবাগত রাতে মিনায় অবস্থান করা, ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া, উকূফে আরাফার উদ্দেশ্যে গোসল করা, ৯ জিলহজ দিবাগত রাতে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করা, ১১ ও ১২ জিলহজ ছোট ও মধ্য জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপের পর দোয়া করা, তাওয়াফের শুরুতে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ ও চুম্বন করা, সম্ভব না হলে ইশারা করা, যে তাওয়াফের পর সাঈ আছে সে তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে পুরুষরা রমল ও পূর্ণ সাত চক্করে ইজতেবা করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে হক পালনের তওফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক
কিউএনবি/অনিমা/২০ মে ২০২৫, /সকাল ৬:০০