মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০০ পূর্বাহ্ন

কোলন ক্যান্সার: ভালো থাকার আছে যে উপায়

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৪৯ Time View

স্বাস্থ্য ডেস্ক : বশির সাহেব (আসল নাম, ছদ্মনাম নয়) পুরনো ঢাকার বাসিন্দা। একদিন চেম্বারে এলেন, বললেন ডাক্তার সাহেব পেটে মাঝে মধ্যে ব্যথা করে, আর শরীরটাও ভালো লাগে না। কি সমস্যা কি একটু ভালো করে দেখবেন?

শারীরিক পরীক্ষা করে দেখলাম পেটের উপরিভাগে একটি চাকার মতো (Mass) মনে হয়। আমার কাছে সেটি কোলন এ টিউমারের মতো মনে হলো, Transverse Colon এ। বিলম্ব না করে তাকে বেরিয়াম এনেমা নামক একটি এক্স-রে করতে বললাম, যার মাধ্যমে সে টিউমারটি দেখা দেতে পারে।

পরীক্ষা করার পর তাই পাওয়া গেল, পরবর্তীতে কোলোনোস্কোপি নামক পরীক্ষার সাহায্যে ক্যান্সার কনফার্ম হলো। রোগী তেমন সম্পন্ন না হওয়ায় অন্যান্য পরীক্ষা যেমন সিটিস্ক্যান করাতে রাজি হলেন না। যাই হোক এরপর বশির সাহেবের অপারেশন করা হল।

Transverse Colon অর্থাৎ বৃহদন্ত্রের মাঝামাঝি স্থানে টিউমারটি মোটামুটি বড়ই, তবে সৌভাগ্যের কথা হচ্ছে চারপাশে ছড়ায়নি, যদিও T3 অর্থাৎ ক্যান্সার তৃতীয় স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল। অপারেশন ভালোভাবে সম্পন্ন করলাম। সব টিউমার কোষ বের করে আনতে পারলাম। অপারেশন পরবর্তী সময়ে রোগী চমৎকারভাবে সেরে উঠলেন। এরপর বশির সাহেবকে বললাম কেমোথেরাপি নিতে। তিনি একটু ইতিউতি করলেন, কারণ অর্থনৈতিক।

বলা হলো কেমোথেরাপি নিতে হবে, যেহেতু টিউমারটি বেশ বড় ছিল। যাই হোক শেষ পর্যন্ত একটি সরকারি হাসপাতালে তিনি একটি কেমোথেরাপি নিলেন। ঘটনাটি ১০ বছর আগের। বশির সাহেবের সঙ্গে এখনো প্রায় দেখা হয়। তিনি কিছু গঠনমূলক কাজও করেন। অন্য রোগীদের নিয়ে আসেন চিকিৎসার জন্য। ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। তাকে দেখলে আমার ভালো লাগে।

বশির সাহেবের মতো এরূপ অনেক রোগী আছেন যারা কোলন ক্যান্সার হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ভালো আছেন। এর কারণ হচ্ছে এরা সচেতন রোগী। যথাযথ চিকিৎসা আমরা করছি ঠিক, কিন্তু তার আগে এরা সামান্য সমস্যা দেখা দেওয়া মাত্র উপযুক্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছেন এবং চিকিৎসক যা বলেছিলেন তা করেছিলেন। কিন্তু কিছু কিছু রোগী ক্যান্সার শোনার পর এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করেন, এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করেন, কেউ কবিরাজি, তাবিজ, আবার কেউ দেশে বিদেশে যাওয়ার জন্য দৌড়াদৌড়ি করেন, এতে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়।
রোগ দেহে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে চিকিৎসায় কোলন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় করা গেলে কোলন ক্যান্সারের পরিপূর্ণ চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যে চিকিৎসা সেই চিকিৎসাই এখানে দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে যদি ক্যান্সার ছড়িয়ে যায় তাহলে তার চিকিৎসা পৃথিবীর কোথাও নেই। তাই ভালো থাকার প্রথম শর্ত হচ্ছে সচেতনতা।

একজন সচেতন ব্যক্তিই নিজের সুস্থতার ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাই বলি সচেতন হোন ভালো থাকুন । আসলে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক: কোলোরেক্টাল সার্জন, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী।

কিউএনবি/অনিমা/১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫,/বিকাল ৩:০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit