মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৫ অপরাহ্ন

ঝিনাইদহে ড্রাগন চাষে সফল আরিফুল

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৯৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : শিক্ষিত যুবক মো. আরিফুল ইসলাম। শুধু পড়াশুনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। ড্রাগন ফল চাষ করে বদলেছেন নিজের ভাগ্য। বুদ্ধি আর কর্মদক্ষতায় সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। নিজের চেষ্টায় হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা। 

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের বিদ্যাধরপুর গ্রামের আরিফুল ইসলাম। ২০২০ সালে হঠাৎই করোনা ভাইরাস শুরু হয়। করোনা ভাইরাসের আগে একটি বায়িং হাউজে ভাল বেতনে চাকুরি নিয়েছিলেন তিনি। এরপর সেখান থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে আসতে হয় আরিফুলের।
সংসারের হাল ধরতে পিতা ওহিদুল ইসলামের কাছ থেকে জমি আর কিছু টাকা নিয়ে ২বিঘা ৫কাটা জমিতে শুরু করেন ড্রাগন চাষ। প্রথম বছরেই সাড়ে ৯ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করে দেখেন লাভের মুখ। এবার ৩ বিঘা জমি থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি করবেন। ৪ লাখ খরচ বাদ দিয়ে সাড়ে ৮লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি। একবার খরচ করে এই ড্রাগন ফল চাষ করলে ৫ থেকে ১০বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। বছরে একবার ফল দেয়, তবে পরিচর্যা করতে হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে ৮ থেকে ১০বার গাছ থেকে ফল কেটে বাজারে বিক্রি করা যায়। এই ড্রাগন চাষ করে সে নিজেই স্বাবলম্বী হননি, কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে এলাকার অনেক শ্রমিকের। তার দেখাদেখি অনেক শিক্ষিত যুবক উদ্ধুদ্ধ হচ্ছেন এই ড্রাগন চাষে। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি আরিফুল। পাশাপাশি শুরু করেছেন গবাদী পশু পালন। তাই কঠোর পরিশ্রমই আরিফুলকে শিক্ষিত যুবক থেকে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। 
বিদ্যাধরপুর গ্রামের শিক্ষিত যুবক মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, নরসিংদী সরকারি পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা এবং কম্পিউটার বিভাগে পড়শুনা শেষ করি। এরপর একটি বেসরকারি কোম্পানীতে ভাল বেতনে চাকুরি একটি বায়িং হাউজে পেয়েছিলাম। দুই বছর চাকুরি করার পর চলে আসলো করোনা ভাইরাস। এরপর বাড়িতে এসে পিতার সাথে চাষ শুরু করে ভাল সাড়া পায়। কয়েকমাস পর কোম্পানীতে ফিরে আসার জন্য আমাকে ফোনে অনরোধ করা হয়। কিন্তু পিতার সাথে গ্রামের মাঠে চাষ করছি। চাষে ভাল সাড়া পেয়ে গেছি এবং এলাকার অনেক শ্রমিক আমার ক্ষেতে কাজ করে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন। সেই সাথে স্বাধীন ভাবে চলতেও পারছি। পিতা-মাতাসহ পরিবারকে সময় দিতে পারছি। সেকারণে চাকুরিতে ফিরে যায়নি। তিনি বলেন আমার মতো কৃষি কাজকে ছোট করে না দেখে শিক্ষিত যুবকেরা চাকুরির পিছনে না ছুটে এবং অযথা ঘুরে না বেড়িয়ে চাষে মনোযোগী হলে স্বল্প সময়ের সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তবে ইচ্ছা শক্তিই বড়। ইচ্ছা শক্তি না থাকলে কোন কিছুতেই সফলতা আসবে না। তিনি আরো বলেন আমার স্বপ্ন অনেক বড়। কিন্তু টাকার অভাবে সেই স্বপ্ন পুরণ করতে পারছি না। তাই সরকার যদি আমার দিকে একটি নজর দেয় এবং সহজ শর্তে লোনের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আমি আধুনিক পদদ্ধিতে আরো বড় আকারে চাষ শুরু করতে পারতাম। এতে করে দেশে ফলের চাহিদা মোটানোসহ এলাকার অনেক বেকার সমস্যার সমাধান হতো। কৃষক বাবা ওহিদুল ইসলাম জানান, পড়াশুনা শেষ করে করে চাকুরি করছিল। আমার সাথে কৃষি কাজ করছে। ক্ষেতে কাজ করার সময় দুই বাপ-বেটার গল্প করতে করতে কখন সময় চলে যায় ঝুঝতে পারি না। এখন চাষে ভাল লাভও দেখতে পারছি। আর ছেলেকে সাথে পেয়ে আমিও খুব খুশি। সেজন্য কোনো চাকুরিতে যেতে দিতে চাচ্ছি না। কারণ এক সময় আমার ছেলে এই চাষ থেকে ভাল উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে। আমাদের বাপ-বেটার চাষ দেখে এলাকার অনেকেই চাষের প্রতি মনোযোগী হয়েছেন। এটাই আমার কাছে বড় সফলতা।

শিক্ষিত যুবকদের কর্মস্পৃহার প্রশংসা করে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার কথা জানালেন ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, এবার জেলার ৬টি উপজেলায় ১হাজার ১২শত হেক্টর জমিতে অনেক শিক্ষিক যুবকসহ কৃষকেরা ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন। তাদেরকে কারিগরি সহায়তাসহ বিভিন্ন রকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষিত যুবকেরা চাকুরির পিছনে না ছুটে স্বল্প সময়ের মধ্যে কৃষিতেই নিজেদের সফল উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব।

কিউএনবি/অনিমা/১৩ নভেম্বর ২০২৪,/দুপুর ২:৩৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit