সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

ধর্মীয় মেরূকরণ, জাতিগত ভেদাভেদ এনেছে ‘কা’

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৩ মার্চ, ২০২৪
  • ৮৩ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘কা আমরা মানব না’ আসামের রাজপথে আবার সেই পুরনো স্লোগান। ফের জ্বলছে সেই প্রতিবাদের আগুন। ধরনা, বিক্ষোভে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি, রাজ্য মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হচ্ছে, পোড়ানো হচ্ছে সিএএ (কা)-এর বিধি। 

তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সংসদে গৃহীত হয় ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী (সিএএ)। আইন অনুযায়ী, ধর্মীয় নিপীড়নের ফলে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বেৌদ্ধ, জৈন, খ্রষ্টিান ও পার্সিরা নাগরিকত্ব পেতে পারেন। আইন প্রণয়নের পর চার বছর ধরে সবকিছু স্থবির ছিল, তবে সাধারণ নির্বাচনের ঠিক প্রাক্কালে আইনের বিধি জারি করে সরকারি উদ্যোগেই সমাজে ধর্মীয় মেরূকরণের প্রচষ্টো চালানো হচ্ছে। হিন্দু ভোটে ফায়দা তোলাই শাসক বিজেপির মূল লক্ষ্য। 

আসলে সিএএ-কে ঘিরে একশ্রেণির লোকের মধ্যে নাগরিকত্ব লাভের মিথ্যা আশা জাগানো হচ্ছে। অন্যদিকে আসামের মূল বাসিন্দা অসমিয়াদের মধ্যে ছড়ানো হচ্ছে ভাষা-সংস্কৃতি বিপন্ন হওয়ার ভুল আতঙ্ক। ফলে আসামের সমাজে হিন্দু-মুসলিম, অসমিয়া-বাঙালিদের মধ্যে প্রবল মেরূকরণ ঘটেছে। অসমিয়া জাতীয়তাবাদীদের বদ্ধমূল ধারণা, সিএএ-এর ফলে আসামে বসবাসকারী প্রচুরসংখ্যক অবৈধ’ বাংলাদেশি হিন্দুরা যেমন নাগরিকত্ব পাবেন, তেমনই ভারতীয় নাগরিকত্বের আশায় বাংলাদেশ থেকেও চলে আসবেন লাখ লাখ হিন্দু। এর ফলে বাংলাভাষীদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে অসমিয়া ভাষার বিলোপ ঘটবে অচিরেই। 

কিন্তু ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর আসামে আগত বাঙালি হিন্দু, মুসলমান সবাই বিদেশি। নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসিও প্রস্তুত করা হয়েছে এরই ভিত্তিতে। অথচ দেশের অন্য কোনো রাজ্যে নেই বিদেশি শনাক্তকরণের এই প্রক্রিয়া। ১৯৭১ সালের পর আগত বলে কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশ নোটিশ ধরায়, ‘ডি’ (ডাউটফুল) চিহ্ন সেঁটে দেওয়া হয় ভোটার তালিকায়, বিদেশি ট্রাইবু্যনালে বিচার হয় নাগরিকত্বের।  

আশির দশকে ছাত্র সংস্থা আসু’র ( অল আসাম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ,এএএসইউ) নেতৃত্বে সংঘটিত বিদেশি খেদা, আড়ালে Èবঙাল খেদা’ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বিদেশি শনাক্তকরণের এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে আসামে। 

কিন্তু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর আগত ছয়টি ধর্মীয় গোষ্ঠীর নাগরিকত্ব দেওয়াই এখন মোদি সরকারের লক্ষ্য। এতে লঙ্ঘিত হচ্ছে আসাম চুক্তিও। আন্দোলনকারীদের দাবি, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর আসামে আগত বাঙালি হিন্দু, মুসলমান সবাই বিদেশি। সেখানে ধর্মের ভিত্তিতে একশ্রেণির লোককে কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হবে, ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সংবিধানও যার অনুমতি দেয় না। কিন্তু আইনকানুন, প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে আরএসএস, বিজেপি নেতাদের একই সুর বিশ্বের যেখানেই হিন্দুরা নির্যাতিত হবেন, ভারতে তাদের আশ্রয় দিতেই হবে। 

সিএএ কার্যকরী হওয়ায় আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন অসুরক্ষিত আসামের মুসলমানরাও। কারণ, মুসলিম-বিরোধিতার পথ নেওয়া বিজেপি সরকার এবার বহিষ্কারের খঁাড়া নামিয়ে আনতে পারে তাদের ওপর। 

নাগরিকপঞ্জির প্রক্রিয়ায় হেনস্তা হওয়ার মতো ফের নাগরিকত্বের পরীক্ষার মুখে ঠেলে দেওয়া হতে পারে মুসলমানদের। ফলে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো বিকল্প খোলা নেই। 

অবশ্য ভোটের ময়দানে বিজেপিকে বেকায়দায় ফেলতে আন্দোলনে উসকানি রয়েছে কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীদেরও। ফলে হিংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের পূর্ণ আশঙ্কা রয়েছে আসামে।

লেখক পরিচিত: বীরেশ্বর দাস । আসামের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দৈনিক যুগশঙ্খ’র চীফ রিপোর্টার ।

 

কিউএনবি/আয়শা/১৩ মার্চ ২০২৪,/সন্ধ্যা ৭:৩০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit