রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৪৪ অপরাহ্ন

নদী ভাঙ্গনে ফসলি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তাপারের মানুষ

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
  • Update Time : রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০২২
  • ১৩৮ Time View
জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : তিস্তার ভারত অংশে নির্মিত গজলডোবায় বাঁধের মাধ্যমে ভারত সরকার এক তরফা এর পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীতের আগেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের ফলে বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাট।তিস্তা নদীর পানি কমে যাওয়ার ভাঙন তীব্রতা বেড়েছে তিস্তাপাড়ে। নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। তিস্তা তীরবর্তী লোকজনের চোখের সামনেই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি। ভাঙ্গনে ফসলি জমি ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া এসব মানুষ এখন মাথা গোঁজা ঠাঁই খুঁজতে দিশেহারা।
এবারে বর্ষার ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভাঙন আতঙ্কে পড়ে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। গেল সপ্তাহে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে নদীপাড়ের মানুষ। এক একটি পরিবার ৮/১০ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সরিয়ে নিয়েছেন বসতভিটা। কেউ কেউ রাস্তার ধারে বা বাঁধের পাশে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।গত এক সপ্তাহে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের খামারটারী ও পূর্ব কালমাটি গ্রামের প্রায় ১০/১৫টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, খুনিয়াগাছ উচ্চ বিদ্যালয়সহ নানা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। নদীর কিনারায় পড়েছে নির্মাণাধীন চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা বিশিষ্ট ভবনসহ তিনশতাধিক বসতবাড়ি।গেল সপ্তাহে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে কিছুটা রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। নয়তো এসব স্থাপনা বিলীন হয়ে যেত বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।
সদর উপজেলার পূর্ব কালমাটি গ্রামের মৃত খোরশেদের স্ত্রী মিনু বেওয়া তিনবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যের জমি ৩০ হাজার টাকায় বন্দক নিয়ে তিনটি ঘর করে দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন। সেই বসতভিটাও নদীর মুখে পড়েছে। বন্দকি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় বন্দকের ৩০ হাজার টাকাও দিচ্ছেন না জমির মালিক। টাকার অভাবে মাথা গোজার ঠাঁই করতে পারছেন না। স্থানীয়দের সহায়তায় ও নিকট আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে শুক্রবার ঘর তিনটি সরিয়ে পাশের একজনের জমিতে রেখেছেন। নতুনভাবে বাড়ি করার কোনো উপায় না পেয়ে দিশেহারা মিনু বেওয়া।মিনু বেওয়া বলেন, চারবার ঘর বাড়ি সরাতে গিয়ে সম্বল শেষ করেছি। এখন ঘর খুলে অন্যের জমিতে রেখেছি। রাতে কোথায় থাকব জানি না। এক সময় নিজের অনেক জমি ছিল। এখন দাঁড়িয়ে থাকার মত কোনো জমি নেই। টাকা ছাড়া মিলে না জমি। সেই টাকাও নেই।
পাশের গ্রাম খামারটারীর আছিবি, সোনাবি, আকলিমা বলেন, রাতে ঘুমাতে পারি না। কখন যে ঘর বাড়ি নদীতে ভেঙে যায়। সেই আতঙ্কে ঘুম নেই। কয়েকদিন আগে উপজেলা চেয়ারম্যান কিছু জিও ব্যাগ দিয়ে কোনো রকম ভাঙনটা রক্ষা করেছেন। নয়তো এতদিনে এ গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হত। রিলিফ নয়, তারা দ্রুত নদী খনন করে স্থায়ী সমাধান দাবি করেন।শুধু খামারটারী আর পূর্ব কালমাটি নয়। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে তিস্তা নদীর বাম তীর ঘেঁষা প্রতিটি গ্রামের মানুষ। এসব মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তা নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের। যাতে অনাবাদি থাকা তিস্তার বুকের হাজার হাজার বিঘা জমি চাষাবাদের আওতায় আসে। এসব জমি চাষাবাদ করে সংসার চালাবেন তারা।লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ৫টি উপজেলা নদীবেষ্টিত হলেও এবারে তিস্তার ভাঙনটা সদর উপজেলায় কিছুটা বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলমান রয়েছে। কিছু কিছু স্থানে রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বাকিগুলোও কয়েকদিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

কিউএনবি/অনিমা/০৭ অগাস্ট ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১১:০৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit