ডেস্কনিউজঃ চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই ’২১-মার্চ ’২২) বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি বাড়লেও কমেছে রাজস্ব আয়। এ সময় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০৭ কোটি ৫ লাখ টাকা কম রাজস্ব এসেছে। অর্থবছর শেষেও রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন্দরসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে অনেক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত মাত্রায় শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমিয়েছেন আমদানিকারকরা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বন্দরের রাজস্ব আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রয়েছে রাজস্ব হারে বৈষম্যের অভিযোগও। এছাড়া ধারণক্ষমতার অভাবে পণ্য খালাসে জটিলতা ও পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বেনাপোল কাস্টমস অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের নয় মাসে বন্দর দিয়ে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৮১৫ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৩১ হাজার টন পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছর বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ৩২ হাজার ১০১ টন।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৬০৭ কোটি ৫ লাখ টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। এ সময় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় করা হয়েছে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি ৫ লাখ টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৪৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ওই বছর ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৯৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, দিন দিন আমদানি পণ্যের ওপর অযৌক্তিক হারে শুল্ক বাড়ছে। শুল্কহার স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা হলে বৈধপথে আমদানি বাড়বে। এতে রাজস্ব আয়ও বেশি আসবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, সব বন্দরে আমদানি পণ্যের ওপর রাজস্ব পরিশোধের নিয়ম এক হতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যে পণ্যের ওপর রাজস্ব ৪ ডলার, বেনাপোল বন্দরে একই পণ্যের ওপর সাড়ে ৪ ডলার শুল্ক আদায় করা হচ্ছে। বন্দরের ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার টন। কিন্তু এখানে সব সময় পণ্য থাকে কমপক্ষে দেড় লাখ টন। জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে মূল্যবান পণ্য পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, বেনাপোল বৃহৎ বন্দর হলেও এর কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না। সপ্তাহে সাতদিন বাণিজ্য সেবা চালু থাকলেও তা শুধু কাগজে-কলমেই আছে। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।
বেনাপোল বন্দর উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ ও আমদানি পণ্যের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। এসব কার্যক্রম চালু হলে এ বন্দর দিয়ে আমদানির পাশাপাশি রাজস্বও বাড়বে।
বেনাপোল কাস্টমসের কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, চলতি অর্থবছর কম শুল্কযুক্ত অথবা শুল্কমুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের বড় প্রকল্পের কাজে ব্যবহূত পণ্য বেশি এসেছে। এতে আমদানির পরিমাণ বাড়লেও আমরা রাজস্ব পাইনি। এছাড়া শুল্কমুক্ত চালও এসেছে। আশা করছি ঈদের পর আমদানি ও রাজস্ব বেড়ে যাবে।
কিউএনবি/বিপুল/০৩ মে ২০২২খ্রিস্টাব্দ/ রাত ৮.২০