বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন

করোনার টিকা দেয়ার আগের টার্গেট থেকে সরে এসেছে সরকার

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৮২ Time View

 

ডেস্কনিউজঃ করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার আগের টার্গেট থেকে সরে এসেছে সরকার। এখন আগের টার্গেটের চেয়ে ১০ শতাংশ কম টিকা দেয়া হবে।

এর আগে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায়, পর্যায়ক্রমে ৮০ শতাংশ মানুষকে করোনার টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।

এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক নিজেও সংসদকে বলেন, দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। কিন্তু আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই টিকা দেয়া হবে মোট জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশ মানুষকে।

টিকা দেয়ার এই লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ কমিয়ে আনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের টার্গেট ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া। সাড়ে ১২ কোটি জনগণ, সেটাই মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ।’

‘এরমধ্যে কোটিখানেক লোক দেশের বাইরে আছে। তারা কিছু টিকা আমাদের এখান থেকে নিয়ে যায় আবার কিছু টিকা বিদেশে নিয়ে থাকে। কাজেই সব মিলিয়ে হিসেব করলে দেখবেন যে সংখ্যা আমরা বলেছি সেটা ঠিক আছে,’ বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

পরিকল্পনার বাইরে পাঁচ কোটি মানুষ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি।

সেই হিসাবে এই জনসংখ্যা ৭০ ভাগ হলো প্রায় ১২ কোটির মতো। সরকার এই ১২ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার কথা বলছে।

বাকি ৫ কোটি জনগোষ্ঠীকে টিকার পরিকল্পনার বাইরে রাখার কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেছেন, এর মধ্যে একটি বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠীর বয়স ১২ বছরের কম। এবং করোনাভাইরাসের টিকা এখন পর্যন্ত ১২ বছরের নিচে শিশুদের দেয়া হচ্ছে না।

তার মতে, ‘৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১২ বছরের বেশ বয়সী মানুষ কভার হবে। বাকি থাকবে শিশুরা, তাদের তো এই টিকা দেয়া হচ্ছে না।’

হার্ড ইমিউনিটি

এছাড়া শুরুতে যে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার কথা বলা হয়েছিল সেটিকে ‘ইন্ডিভিজুয়াল স্টেটমেন্ট’ বা ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে অভিহিত করেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে আসছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে হলে একটি দেশের জনগোষ্ঠীর কমপক্ষে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ড ইমিউনিটির এই শতাংশের হিসাব নির্ভর করে ওই ভাইরাসটির সংক্রমণের সক্ষমতার ওপর। যেমন হামের হার্ড ইমিউনিটির জন্য ৯৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে এবং পোলিওর ক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় আনলেই হয়।

কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে বলছে সেটা অনেকটাই প্রাথমিক কিছু গবেষণার ওপর ভিত্তি করে বলেছে। এটা এখনো শতভাগ নিশ্চিত কোনো হিসাব নয়।

‘আপনাকে চিন্তা করতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে কেউ কিছু বলেছেন কিনা। জনস্বাস্থ্যের দিক বিবেচনায় এই শতাংশের হিসাব অনুমান করে বলা হয়েছে যে ৭০ শতাংশ টিকা দিলে হার্ড ইমিউনিটি হবে। এটা শতভাগ নিশ্চিত করে কেউ বলবে না। কারণ বিষয়টা গবেষণাধীন,’ বলেন রোবেদ আমিন।

যথেষ্ট টিকা আছে?

লক্ষ্যমাত্রার ১২ কোটি মানুষের জন্য দুই ডোজ করে ২৪ কোটি ডোজ টিকা দেয়ার কথা বলা হয়ে আসছে।

কিন্তু এ পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়েছে ১৫ কোটি ডোজের মতো। বাকি ৯ কোটি ডোজ টিকা মজুদ আছে এবং সামনে আরো টিকা আসছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

সে হিসেবে, ৭০ শতাংশ টিকা দেয়ার লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট টিকা সরকারের কাছে আছে।

কিন্তু এই টিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে না দিলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, করোনাভাইরাস প্রতিনিয়ত মিউটেট হচ্ছে অর্থাৎ এর গতিপ্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে একের পর এক ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হচ্ছে।

এমন অবস্থায় হার্ড ইমিউনিটি অর্জনে ওই ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে কোনো ভ্যারিয়েন্ট আসার আগেই দুই ডোজ টিকা দেয়ার কথা বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সানিয়া তাহমিনা বলেছেন।

কিন্তু বাংলাদেশে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত দুই ডোজ টিকার আওতায় আনা হয়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষকে।

এ ব্যাপারে মিসেস তাহমিনা বলেন, ‘ভাইরাস যখন টের পেয়ে যায় যে তাকে টিকা দিয়ে প্রতিহত করা হচ্ছে, এবং সেটা যদি অল্প মানুষের মধ্যে আস্তে আস্তে দেয়া হয়। তখন ভাইরাসটা টিকা থাকতে দ্রুত নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলে।’

‘তখন আগের টিকা মেকানিজম তার ভিতরে আর কাজ করে না। ঠিক অ্যান্টিবায়োটিকের মতো। তাই অনেক মানুষকে এক সাথে টিকা দিলে ভাইরাস আর এই পরিবর্তন হওয়ার সময় পাবে না,’ বলেন তিনি।

এক্ষেত্রে দ্রুত সময়ের মধ্যে বেশি বেশি মানুষকে টিকা দেয়ার পাশাপাশি, মানুষের মধ্যে টিকা দেয়ার ব্যাপারে সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, টিকা নেয়ার পরও যে কেউ করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারেন। কিন্তু টিকার কারণে রোগের প্রবণতা কম থাকে।

সংক্রমণের ঝুঁকি যেহেতু সব সময়ই থাকছে তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।

সূত্র : বিবিসি

কিউএনবি/বিপুল/২১শে জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ |রাত ৮:০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit