আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুদ্ধবিরতির পর সেই পরমাণু ইস্যুতেই আবার ইরানকে আলোচনার টেবিলে আনতে মরিয়ে হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই লক্ষ্যে চালিয়ে যাচ্ছে গোপন কূটনৈতিকক প্রচেষ্টা। এমনকি তেহরানকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সম্ভাব্য সহায়তার এক লোভনীয় প্রস্তাবও দিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
পরমাণু সম্পর্কিত পরোক্ষ আলোচনায় ইরানের কাছে ‘জিরো এনরিচমেন্ট’র দাবি জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এর মানে হল পারমাণবিক চুল্লীর জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা। অর্থাৎ ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে, তা আর করবে না। কিন্তু তেহরান আলোচনায় বরাবরই ওয়াশিংটনের এই দাবি নাকচ করে এসেছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, তেহরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টার অংশ হিসেবে বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য জ্বালানি উৎপাদন করতে পারে, এমন একটি পরমাণু প্রকল্প তৈরির জন্য ইরানকে ৩০ বিলিয়ন ডলার দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ডলারের পাশাপাশি আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা ও বিভিন্ন দেশে জব্দ করা ইরানের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তহবিল মুক্ত করে দেয়ার মতো প্রস্তাবও এর সঙ্গে যোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদন মতে, গত দুই সপ্তাহজুড়ে ইরান ও ইসরাইলের সংঘাতের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ইরানের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই আলোচনা যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও অব্যাহত রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে এবং প্রায় সার্বক্ষণিকভাবে এগুলোতে পরিবর্তন আসছে। তবে একটি শর্ত নিয়ে কোনো ধরনের দরকষাকষির সুযোগ নেই, সেটা হলো- ইরান আর কখনোই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ করতে পারবে না।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবে ইরানের জন্য বেশ কয়েক ধরনের প্রণোদনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ ও দেশটির উপসাগরীয় অংশীদারদের প্রতিনিধিরা গত সপ্তাহে (২০ জুন) হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন। সেখানে গোপনীয়তা বজায় রেখে ওই চুক্তির খুঁটিনাটি নির্ধারণ করা হয়। তবে একদিন পরেই ইরানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
প্রস্তাবের সবচেয়ে লোভনীয় বিষয় হল ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। এই অর্থ ব্যয় করে ইরানে একটি নতুন পরমাণু প্রকল্প স্থাপন করা হবে, যার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সক্ষমতা থাকবে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য জ্বালানি উৎপাদন করা হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, এই অর্থ সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসবে না। ওয়াশিংটন চায় মধ্যপ্রাচ্যে তাদের অংশীদাররা এর যোগান দিক। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সম্ভাব্য পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইরানের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। এসব আলোচনাতেও পরমাণু কর্মসূচিতে বিনিয়োগ নিয়ে আলাপ হয়েছিল বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
ট্রাম্প প্রশাসনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের আলোচনায় নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র। তবে কাউকে এই পরমাণু কর্মসূচি স্থাপনের খরচ বহন করতে হবে। আমরা ওই অঙ্গীকারে যাব না।’ অন্যান্য প্রণোদনার মধ্যে আছে বিদেশি ব্যাংকে জব্দ থাকা ইরানের প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের ওপর থেকে বিধিনিষেধ সরানো এবং এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরোপ করা অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ শিথিল বা বাতিল করা।
প্রতিবেদন মতে, গত সপ্তাহের ওই বৈঠক ফরদো পরমাণু স্থাপনা সরিয়ে একই অবস্থানে নতুন পরমাণু প্রকল্প স্থাপনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাঙ্কার বাস্টার বোমার আঘাতে ওই স্থাপনার উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে নতুন স্থাপনার কার্যক্রম ইরান পরিচালনা করবে কি না, সেটা স্পষ্ট করা হয়নি। এমনকি এটা চূড়ান্ত কোনো প্রস্তাব কি না, সেটাও নিশ্চিত নয়।
গত বুধবার (২৫ জুন) ট্রাম্প বলেন, আগামী সপ্তাহে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠকে বসবে। প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই জানান, এ ধরনের কোনো আলোচনার বিষয়ে তেহরান অবগত নয়। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, পারমাণবিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরুর কোনো পরিকল্পনা নেই তেহরানের।
কিউএনবি/আয়শা//২৭ জুন ২০২৫, /বিকাল ৫:৪৫