জালাল আহমদ : বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে কোটা বেশী ছিল।৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা সহ ৫৬% কোটা ব্যবস্থা মেধাবী শিক্ষার্থীদের অভিশাপ ।সংবিধান অনুযায়ী চরম বৈষম্য।এই বৈষম্য দূর করার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১৯৯৭ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছে।কোটার ফাঁদে আটকে যেত শত শত মেধাবী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার।ফলে কোটার বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনের ‘ক্ষোভ’ তুষের আগুনের মতো জ্বলতে থাকে।
২০১৮ সালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছিলাম ।কিন্তু সরকার প্রধান শেখ হাসিনা কোটা সংস্কার না করে রাগে ও ক্ষোভে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন।পরে ৪ অক্টোবর কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিলেন।তখন ই আমি আমার সহযোদ্ধাদের বলেছিলাম -শেখ হাসিনার চাল বোঝা অনেক কঠিন। তিনি আমাদের কে কোটা বাতিল করে খুশি করবে।
অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটা ফিরিয়ে আনার জন্য উচ্চ আদালতে পাঠাবে। কিন্তু আমাদের সহযোদ্ধাদের অনেকেই টের না পেলেও আমি ঠিকই টের পেয়েছিলাম । আমার কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে ৫ বছর ৮ মাস ১ দিন পর । কোটা পুনর্বহাল করার রায় শুনে আমার সহযোদ্ধারা হতাশ হলেও আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম।কেন সেদিন খুশি হয়েছিলাম, তার ইতিহাস আজকে পাঠকদের কাছে তুলে ধরছি।
১)
রাজনীতিতে বিজয়ী হতে হলে রাজপথ দখলে রাখতে হয়।রাজপথ যার,ক্ষমতা তার।রাজপথ একবার হাতছাড়া হয়ে গেলে তা দখলে নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগে।যার উদাহরণ হিসেবে বিএনপি- জামায়াতের কথা বলা যায়।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট লগি-বৈঠা দিয়ে মিছিল করে বিএনপি- জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে হত্যা করে ঢাকার রাজপথ দখল করে। কিন্তু সেদিন কক্সবাজারে আমরাই বিএনপি সরকারের তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী এবং কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সালাহউদ্দিন আহমেদ এমপি’র নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে রাজপথ দখলে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম।
তাই কক্সবাজার জেলার রাজপথ দখলে রাখার ফসল উঠেছিল বিএনপি- জামায়াতের ঘরে ।সেবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের চরম ভরাডুবির মধ্যেও কক্সবাজার জেলার ৪টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনে বিএনপি -জামায়াতের প্রার্থীরা বিজয় লাভ করেন।১/১১ এর সময় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সালাহউদ্দিন আহমেদ কে সাজা দিলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ১ লাখ ৫৬ হাজারের অধিক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপির সাথে ভোটের ব্যবধান ছিল ৩৬ হাজার। দক্ষিণ চট্টগ্রামে তিনি ই প্রথম নির্বাচিত মহিলা এমপি ছিলেন।
আশেপাশের নির্বাচনী এলাকাতেও বিএনপি এবং জামায়াতের প্রার্থীরা জয় লাভ করেন। সেবার জামায়াত সারাদেশে মাত্র দুটি আসন জিতেছিল। দুইটাই আমার এলাকার পাশে। একটি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া লোহাগাড়া এবং অপরটি কক্সবাজার-২(মহেশখালী ও কুতুবদিয়া)।
তাই তো আমি বলি-
রাজপথ যার দখলে,
ক্ষমতার চেয়ার তার অনুকূলে!২)
শুরুতে টের পাওয়া গিয়েছিল বাকশালের দিকে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ:
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- Morning Shows the Day অর্থাৎ প্রত্যুষেই বোঝা যায় দিনটি কেমন যাবে। এই প্রবাদের আলোকেই ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের কে অসহিষ্ণু এবং স্বৈরাচার বলে মনে হচ্ছিল। রাজনীতিতে সম্পূর্ণ নতুন ডাক্তার দীপু মনির মতো নবনির্বাচিত এমপি কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বানানো, অনভিজ্ঞ নবনির্বাচিত এমপি সাহারা খাতুন কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা, আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করা রাস্তার গায়িকা মমতাজকে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি মনোনীত করা , মাহবুবুল আলম হানিফ কে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বানানো ইত্যাদি ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হচ্ছিল শেখ হাসিনা তার পিতা শেখ মুজিবের মত বাকশাল তৈরি করতে যাচ্ছে। দিনবদলের শ্লোগান দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যাশা জাগিয়ে যারা নজিরবিহীন (!) ভোট পেয়ে সরকার গঠন করল, তারা ‘দিন কে রাত’ করতে শুরু করল।ফলে তারা শুরু থেকেই বাকশালের দিকে যাচ্ছিল।রাজপথ কাঁপানো বিএনপি এবং জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাদের গ্রেফতারের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো ছিল নিত্য দিনের ঘটনা! ২০১০ সালের জুন মাসে বিএনপির হরতাল কর্মসূচির প্রাক্কালে ঢাকা মহানগর বিএনপির জনপ্রিয় নেতা এবং সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলম কে গুম করা,কথিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্র, বেগম খালেদা জিয়া কে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে সিলেটে আন্দোলন গড়ে তোলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী কে ঢাকা থেকে গুম করা, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ না হওয়ার কারণে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ স্থাপন, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের ওপর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের সাহস দুর্দান্ত গতিতে বেড়ে গিয়েছিল।
সেই পরিস্থিতিতে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে ৩৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কোটাধারী প্রার্থীদের অতিরিক্ত অগ্রাধিকার দেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে “কোটা সংস্কার আন্দোলন” আওয়ামী লীগের জন্য একটি চপেটাঘাত।কিন্তু আওয়ামী লীগ মামলা- হামলার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে সেই আন্দোলন দমন করে।তবে পিএসসি থেকে জানানো হয় যে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতো কোটাধারী শিক্ষার্থীরা প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভাইভা থেকে কোটার প্রয়োগ করা হবে।কিন্তু সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতির“ফিগার”আগের মতোই বহাল রাখা হয়।সেই আন্দোলনে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের
রাজপথের একজন সহযোদ্ধা ছিলাম।
এদিকে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে, আওয়ামীলীগ সরকার কে ক্ষমতা থেকে হটানো তাদের পক্ষে কঠিন হবে।তাই আমি চিন্তা করলাম যে, যদি এ বছর বিএনপি- জামায়াতের আন্দোলন ব্যর্থ হয় , তাহলে আমি আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকবো না ।আমি যে কোন মূল্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো।সেখানে আন্দোলন গড়ে তুলব।সেজন্য আমি ২০১৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করলাম।আল্লাহর রহমতে সেই বছর ১ নভেম্বর ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম ।অথচ আমি কোথাও কোনো কোচিং করি নাই!
আমি নিজেও ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিএনপির ঐতিহাসিক মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য চট্টগ্রাম শহর থেকে নানা পুলিশি বাধা উপেক্ষা ঢাকা শহরে এসেছিলাম।পুলিশ ২৭ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড তৈরি বিএনপির নেতাকর্মীদের আটক করে! বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যাতে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থান করতে না পারেন সেজন্য গুলশান তাঁর বাসভবনের সামনে বালির ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছিল!
সেদিন বিএনপির সিনিয়র নেতারা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলে আওয়ামী লীগের পতন তরান্বিত হতো!
সেই আন্দোলনে গুম এবং ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিএনপি এবং জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছিল।
সেই বছর ডিসেম্বর ও ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি সহ বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলন ব্যর্থ হয়।ফলে বিএনপি- জামায়াতের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়ে।কিন্তু আমি মনোবল হারায় নি! কারণ আমি ২০১১ সাল থেকে তত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করে আসছি। আমার মনে হয়েছে বিএনপি পুরনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মডেল বাদ দিয়ে নতুন মডেল জাতির সামনে উপস্থাপন করলে আওয়ামী লীগ বেকায়দায় পড়তো! আন্দোলন সফল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
৩)
রহস্যজনক কারণে আমাকে ঢাবির ভর্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়: ২০১৩ সালের ১ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে ১৬৩৭ তম মেধাতালিকায় অবস্থান করেছিলাম।ঘ ইউনিটে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যা প্রায় ১ হাজারের মত।তবে আস্থা এবং বিশ্বাস ছিল যে, বাংলা এবং ইংরেজিতে ভালো Condition mark থাকায় ভালো একটা সাবজেক্ট পাব।১ম দফা এবং ২য় দফা ভাইভাতে আমার রোল না আসায় আমার সন্দেহ হয়, নিশ্চয়ই পর্দার আড়ালে কেউ বা কারা ষড়যন্ত্র করছে? এর আগে মেডিকেল/চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।আমার আশঙ্কা ছিল যে, মেডিকেল কলেজ/চবিতে যা ঘটেছে তা ঢাবিতেও ঘটতে পারে বলে! কী আশ্চর্য আমার সন্দেহ সত্য হয়ে গেল।
সেই সময়কার সোশ্যাল সায়েন্স ফ্যাকাল্টীর ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন স্যার আমাকে বাদ দিয়ে ১৭৭২সিরিয়ালে থাকা এক মেয়ে কে ভর্তি করালেন।পরে ডিনের বিরুদ্ধে ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মহোদয়ের কাছে অভিযোগ করার পরেও ডিন কোন পদক্ষেপ নেন নি। ফলে মানবাধিকার আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ এর সম্পাদক এডভোকেট আদিলুর রহমান খানের(বর্তমান উপদেষ্টা) মাধ্যমে হাইকোর্টে রিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।তাই অধিকারের চট্টগ্রাম শাখার অফিসার সাংবাদিক ওসমান জাহাঙ্গীরের সাথে আলাপ করলাম আগে এই বিষয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় মিজানুর রহমান খানের মাধ্যমে একটি নিউজ করি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ইসলামের মাধ্যমে মিজান ভাইয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক। নিউজ সহ রিট করলে আদালতে রায় পেতে সুবিধা হবে।
তিনি বললেন, “মিজানুর রহমান খানের সাথে আদিল ভাইয়ের ভালো সম্পর্ক ।এই নিউজ কাজে আসবে।” পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র নিয়ে রাজধানীর কারওয়ানবাজারস্থ প্রথম আলোর যুগ্ন সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের কাছে হাজির হই। মিজান ভাই আমার কাছে বিস্তারিত শুনে প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি আসিফ ভাই কে ঘটনা তদন্ত করে রিপোর্ট করার জন্য আদেশ দিলেন। অনেক জটিলতার পর ডিন অনেকটা চাপের মুখেই আমাকে ভর্তি করাতে বাধ্য হলেন।ভর্তি হলাম টেলিভিশন এন্ড ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগে ।
৪)
ভর্তি সম্পন্ন করেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এর সাথে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে দেখা করলাম।ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমি ঢাকা শহর রেকি করতে শুরু করলাম।ঢাকা শহরের তখন ৪৯ টি থানা, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকা শহরে ঢোকার প্রবেশপথ, প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং ভবন সবকিছুই রেকি করলাম।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়ে দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বিগত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণ জানতে চাইতাম! ক্লাস শেষ হলেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চলে যেতাম! তখন আমার মনের অবস্থা ছিল বাংলা সিনেমার গানের মতোই—
মন বসে না পড়ার টেবিলে,
মন ছুটে যায় নয়াপল্টনে !
বিএনপির বাইরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাইতাম যে বিএনপির আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণ কী?
মোটামুটি সবার সাথে কথা বলে তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল রাজপথে আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আক্রমণাত্মক ভূমিকা ই দায়ী।বিএনপির আন্দোলন সফল করার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন দরকার, যেটা আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের মার্চে করেছিল। ঢাকার মেয়র হানিফের নেতৃত্বে “জনতার মঞ্চ”
বিএনপির ক্ষমতা কে কেড়ে নিতে সহায়তা করেছিল।
আমার মনে হয়েছে বিএনপি সফল আন্দোলনের জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা ভিত্তিক “রূপরেখা” প্রণয়ন করে নি!
২০১৩ সালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তীতে বিএনপি জোটের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর ‘অহিংস’ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি আদায় করার জন্য “আন্দোলনের মাস্টার প্ল্যান” তৈরির সিদ্ধান্ত নিলাম।কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার দিন দিন শক্ত অবস্থানে চলে গিয়েছিল। কাজেই তাদের কে সরাতে হলে অবশ্যই দীর্ঘ মেয়াদী অহিংস আন্দোলন এবং স্বল্প মেয়াদী সহিংস আন্দোলন করতে হবে।
এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করার জন্য আমি আল্লাহ প্রেরিত এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহম্মদ( স:) এর নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়া বদরের যুদ্ধ, উহুদের যুদ্ধ, খন্দকের যুদ্ধ এবং মক্কা বিজয়ের ইতিহাস ও যুদ্ধের কৌশলগত দিক সম্পর্কে পড়াশোনা করেছি। পৃথিবীর ঐতিহাসিক ফরাসি বিপ্লব এবং রুশ বিপ্লব সম্পর্কে পড়াশোনা করেছি।
ভারতীয় উপমহাদেশের সিপাহি বিদ্রোহ, বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন,ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান,একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কৌশলগত দিক সম্পর্কে পড়াশোনা করেছি।
আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক এবং অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করার জন্য শিক্ষাবান্ধব কর্মসূচি প্রণয়ন করেছিলাম। কলেজে মেধা তালিকার ভিত্তিতে ভর্তি, সরকারী চাকরিতে মেধা ভিত্তিক নিয়োগ,কোটা পদ্ধতির সংস্কার—- ইত্যাদি।
তখন ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ সহ সারাদেশে বিভিন্ন সরকারি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে কলেজের তালিকা ছিঁড়ে ছাত্রলীগ নিজেদের মতো করে তালিকা টাঙিয়ে দিয়েছিল।প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সমর্থক বুদ্ধিজীবী ডক্টর জাফর ইকবাল পর্যন্ত প্রতিবাদ জানিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আমি সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য আন্দোলনের “বিশাল মাস্টারপ্ল্যান” তৈরি করেছিলাম।
আমি এই মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া তৈরির সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপিপন্থী সাংবাদিক এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ এর সঙ্গে কথা বলি।আমি তাঁকে কিভাবে আন্দোলন করলো ‘আওয়ামী লীগের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব’ সেই পরিকল্পনা শেয়ার করলাম।
আমি তাকে বললাম, আওয়ামী লীগ ঈদের পর আন্দোলন করে ক্ষমতা দখল করেছে বার বার।আমি সর্বশেষ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সফলতার কথা স্মরণ করিয়ে দিলাম।
আমি তাঁকে বলেছিলাম,বিগত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আক্রমণাত্মক ভূমিকা ই দায়ী।বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা রাজপথে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছে। কিন্তু তারা সফল হয় নি।আমি তাঁকে বললাম, এমন সময়ে আন্দোলন করতে হবে যে সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে আন্দোলন সামাল দেয়া কঠিন ।
বছরে ৫ টি সময়ে আন্দোলন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে আন্দোলন সামাল দেয়া কঠিন হবে।ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার পর আন্দোলন করলে সবচেয়ে কম পরিশ্রমে তাড়াতাড়ি আন্দোলনের ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।কারণ এই সময়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, সরকার ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঢাকার বাইরে অবস্থান করেন।
তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন,পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় কতজন নেতাকর্মী কে ঢাকায় ধরে রাখা সম্ভব? আমি বললাম, পার্টি চাইলে সম্ভব।তবে তিনি আমাকে বললেন যে তিনি চেষ্টা করবেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে আন্দোলনের ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা করার।
আসলে আমার কাছে শওকত মাহমুদ কে আদর্শিক বিএনপি মনে হয় নি!
পরে জানতে পারলাম তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রইউনিয়ন করতেন।পেশাগত জীবনে এসে বিএনপির সান্নিধ্যে আসেন।ক্ষমতার হালুয়ারুটি ভোগ করার জন্য ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরে বিএনপিপন্থী সাংবাদিক ইউনিয়নে সম্পৃক্ত হন।ইদানীং বিএনপি থেকে বেরিয়ে চলচ্চিত্র জগতের তারকা ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন!
আমি পড়াশোনার পাশাপাশি রাজনীতি ও আন্দোলন নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি।হঠাৎ করেই ২০১৪ সালের ১২ জুন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের মতবিনিময় সভায় বলেন, আমরা ঈদের পর আন্দোলন করবো। আমি জানি না শওকত মাহমুদ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমার ঈদের পর আন্দোলনের ফর্মুলা টি শেয়ার করেছিলেন কিনা? তবে আন্দোলন শুরুর আগেই আন্দোলনের ডেডলাইন ঘোষণা করায় আমি হতাশ হয়েছিলাম। আমার কৌশলগত অবস্থান ছিল ডেডলাইন ঘোষণা না করেই আন্দোলন।তবে আমি পর্যবেক্ষণ করেছিলাম বিএনপি কিভাবে ঈদের পর গড়ে তোলে।
৫)
ছোট্টবেলা থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং তাঁর প্রেস সচিব সাংবাদিক ছফুওয়ানুল করিম ভাইয়ের সঙ্গে
কথাবার্তা হতো বিভিন্ন বিষয়ে।মূলত “পাক্ষিক পেকুয়া” পত্রিকায় লেখালেখির কারণে তাঁদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।আমি ঈদুল ফিতরের সময় গ্রামে গেলে ছফওয়ান ভাইয়ের আন্দোলনের মাস্টারপ্ল্যান শেয়ার করি।
তিনি সালাহউদ্দিন আহমেদ স্যারের সাথে আন্দোলনের ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা করার জন্য পরামর্শ দেন।
সেই বছর ২৯ জুলাই ঈদুল ফিতরের আগের দিন সালাহউদ্দিন আহমেদ এর সাথে তাঁর পেকুয়া সদরের সিকদার পাড়ার নিজ বাড়ির ২য় তলার ছাদে বসে আন্দোলনের কৌশলগত দিকগুলো শেয়ার করতেছিলাম।
তিনি আমার ফর্মূলাটি শুনে আমাকে আওয়ামী লীগের ১৯৭৪-৭৫ সালের ভয়াবহ নির্যাতনের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন।
আমিও তাঁকে আরব বসন্তের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললাম, রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, আমরা করবো সামাজিক আন্দোলন।
আমাদের সঙ্গে থাকবেন প্রথম আলো পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান খান সহ একঝাঁক বিশিষ্ট নাগরিক।
তিনি মিজানুর রহমান খান সম্পর্কে বলেন , তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি বায়াস্ট(পক্ষপাতপুষ্ট)।আমি উত্তরে বলেছিলাম,তিনি লিয়াঁজো কমিটিতে থাকবেন ।
আন্দোলনের স্টিয়ারিং কমিটিতে তিনি থাকবেন না।
আন্দোলনের স্টিয়ারিং আমাদের ছাত্রদের হাতেই থাকবে।এই সময় আলোচনার মাঝে হঠাৎ সালাহউদ্দিন আহমেদ স্যারের স্ত্রী সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ ছাদে আসলে আমরা কথা বন্ধ রাখি। এ সময় তাদের বাড়ির এক সহকারী আমাকে বলেন, ম্যাডাম সাহেবের(সালাহউদ্দিন আহমেদ) সঙ্গে কথা বলবেন। আপনি একটু পরে আসেন। পরে উনার সহধর্মিণীর সঙ্গে কথা শেষে সালাহউদ্দিন আহমেদ আমাকে ঈদের জন্য ৫ হাজার টাকা সেলামী দিয়ে বলেন,নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়ছে। কথা বলার সুযোগ নেই। পরে কথা হবে।পরদিন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সারা জেলার মানুষ ভিড় জমান উনার বাড়িতে।ফলে আর কথা হয়নি।ঈদের পর সালাহউদ্দিন আহমেদ ঢাকায় ফিরে আসেন।আমি চিন্তা করলাম ঢাকায় ফিরে এসে মাস্টারপ্ল্যান সহ বিস্তারিত পরিকল্পনা শেয়ার করবো।
ঈদের পর বিএনপির আন্দোলনের কোন হাঁকডাক নেই!
তবে ১০ এবং ১১ আগস্ট বিএনপি আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের জন্য নিজ দলের এবং জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছে।
সেই বছর ঈদুল আজহার আগেই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন ছিল।কাজেই আন্দোলন সফল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বেশি।আমি চট্টগ্রাম শহরে আমার পরিচিত একটি কম্পিউটারের দোকানে ঈদুল ফিতরের পরিবর্তে ঈদুল আজহা কেন্দ্রিক আন্দোলনের খসড়া প্রস্তুত করি। লেখাটি আমার ইমেইল পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলে
আমি ঢাকায় চলে আসি।
৬)
পুলিশ আমাকে আটক করার কারণে সেই সময় আন্দোলন যেভাবে ভেস্তে যায়:
২০১৪ সালে জুলাই মাসে আমাদের পারিবারিক জায়গা-জমি সংক্রান্ত একটি মামলায় সামাজিক সমাধান না করে আমাদের প্রতিবেশী কথিত ডাক্তার দাঁত মুসা মিথ্যা তথ্য দিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ইন্দনে পেকুয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলে পরিবারের পক্ষ থেকে আমি সেই মামলা ‘ডিল’ করতে থাকি।
মামলায় মিথ্যা এবং সাজানো ‘মেডিকেল রিপোর্ট’ থানায় জমা দেওয়া হলে আমি পেকুয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের এই রিপোর্ট চ্যালেঞ্জ করি।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা প্রমাণ দেখতে চাইলে ২০১৩ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দলিল সংগ্রহ করি।কিন্তু ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রেজেন্টেশন থাকায় আমি ৬ ই আগস্ট সকালে ঢাকায় চলে আসি।
৭ আগস্ট ক্লাস শেষে নীলক্ষেতের একটি কম্পিউটার দোকানে গিয়ে ইমেইল আইডি ওপেন করে কম্পিউটারের দোকান থেকে আন্দোলনের মাস্টারপ্ল্যান প্রিন্ট করি।কিন্তু আমি দেখলাম পুরনো লেখাটি তিনি ইমেইলে পাঠিয়েছেন। পরে আমি তাকে বলেছিলাম, আপনি পুরনো লেখা কেন পাঠিয়েছেন? তাকে আরো বললাম, পুরনো লেখার পরিবর্তে নতুন লেখা ইমেইলে পাঠিয়ে দেন।
আমি ৯ আগস্ট শনিবার পেকুয়া থানায় মামলার বিষয়ে আলোচনা করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কে জানিয়েছিলাম।চিন্তা করছিলাম পেকুয়ায় গিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ স্যারের প্রেস সচিব সাংবাদিক ছফওয়ানুল করিমের মাধ্যমে অন্য ইমেইল থেকে ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে আন্দোলনের মাস্টারপ্ল্যান পাঠিয়ে দিবো।
৮ ই আগস্ট সকালে লেখাটি কিছুটা কাটাছেঁড়া করে
দুপুরে শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য বায়তুল মোকাররমের উত্তর পাশ দিয়ে গাড়ি থেকে নামলেই পুলিশ আমাকে মোবাইল ট্র্যাকিং করে আটক করে।ডিবি পুলিশ ব্যাগ তল্লাশি করলে আন্দোলনের ‘খসড়া মাস্টার প্ল্যান’ পেয়ে যায়।যেন কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ পেয়ে গেলো পুলিশ!
তবে মূলটা পায়নি। কারণ সেটা আরেকজনের একটি ল্যাপটপে জমা ছিল। পুলিশ “শিবির” আটক করেছে বলে টেলিভিশনের সামনে নিয়ে আসে আমাকে। জুমার নামাজ পর্যন্ত পড়তে দেয় নাই পুলিশ। পল্টন থানায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের পরও আমার কাছ থেকে কোনো তথ্য আদায় করতে পারেনি।পুলিশ আমার কাছে ইমেইল আইডি চাইলে আমি ইমেইল আইডি দিলেও পাসওয়ার্ড ভুল দিই, যাতে আইডি ওপেন করতেই না পারে।পল্টন থানার ওসি মোর্শেদ সহ পুলিশের টিম আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমি সমস্ত দায়ভার কথিত আশিক ভাইয়ের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করি। পুলিশ শত চেষ্টা করেও আমার কাছ থেকে কোনো তথ্য আদায় করতে না পারায় আমাকে ডিবিতে নিয়ে যায়।ডিবি পুলিশ আমাকে পল্টন থানা থেকে ডিবি অফিসে নেওয়ার সময় দোয়া-সূরা পড়তে থাকি। বিশেষ করে সূরা ইয়াসিন পড়ে মন শক্ত করছিলাম।ডিবি অফিসে যাওয়ার পর মামলার বাদী মুসা পুলিশকে কল দিলে আমি বুঝতে পারি মামলায় চ্যালেঞ্জ করার কারণে আমাকে শিবির বানিয়ে নাটক সাজিয়ে আটক করা হয়েছে।সবকিছু আগে থেকে পরিকল্পিত।
ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমি কথিত আশিক ভাইয়ের উপর দোষ চাপিয়ে দিতে থাকি।পরে পুলিশ ১০ দিন রিমান্ড চাইলে আদালত তিনদিন রিমান্ড মঞ্জুর করে। আমাকে নির্যাতন করলেও খসড়া প্লান সম্পর্কে বলি নাই। শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের
কথিত আশিক ভাইয়ের উপর সব দায় চাপিয়ে দিয়ে কোন প্রকার রক্ষা খেলাম। কিন্তু পুলিশ দুই মাস পর্যন্ত তদন্ত করে আশিক নামের কারো সন্ধান না হওয়ায় আবারও আমাকে দশ দিন রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তখন ভিন্ন একটি কৌশলে আবার রেহাই খেলাম।কিন্তু সরকার বিরোধী ছাত্র হিসেবে প্রমাণ হওয়ার কারণে রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে পুলিশ আমার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করে।
৭)
দীর্ঘ ২২ মাস ‘রাজবন্দী’ হিসেবে কারাবন্দি থাকার পর সেই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ২০১৬ সালের ১৩ই এপ্রিল কাশিমপুর-৪ কারাগার থেকে মুক্তি মুক্তি পাই।তখন অনেকেই আমাকে উন্নত রাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। আমি বললাম, বিদেশের মাটি থেকে সরকার পতন করা সম্ভব নয়।একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সরকার পতন করা সম্ভব।ফলে দেশের বাইরে যাই নি! পরে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সুপারিশে ভর্তি হলাম ২০১৬-১৭ সেশনে ।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রাক্কালে আমি আবারও সরকার পতন আন্দোলনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাছে সাক্ষাৎ করতে গেলে ছাত্রদল থেকে ছাত্রলীগে যোগদানকারী জামশেদুল কবির চবি ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনসুর আলম সহযোগিতায় পুলিশে দেন। ৩/৪ দিন চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করি। বিএনপি সরকারের আমলে সুবিধাভোগী জামশেদুল কবিরের পরিবার।গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব না দিয়ে ফ্যাসিবাদ কায়েমে ভূমিকা পালন করেন।
৮)২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকার পতনের চেষ্টা ছিলো:
২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে শুধুমাত্র ওই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হওয়ার কারণেই আমাকে সামনের সারিতে রাখা হয় নাই। তবু আমি হাল ছাড়ি নাই।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের বহুমুখী আক্রমণে কোটা আন্দোলন যখন নেতৃত্ব শূন্য হয়, তখন আমি সামনে চলে আসি। ওই সময় কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল নিউজ করেছিল ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি জালাল’। আমি এসব পাত্তাই দিই নাই।কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাঝখানে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরু হলে ঐ আন্দোলনেও তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম।
কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পতন ঘটানোর চেষ্টা করেছিলাম আমরা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা পাইনি।
ডিসেম্বরে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই’ আন্দোলন শুরু করেছিলাম।কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের কিছু সহযোদ্ধা সরকারের কাছে বিক্রি হয়ে গেলে ওই আন্দোলন সফলতার মুখ দেখে নাই। আর বিনিময়ে ডাকসুতে তাদের পুনর্বাসন করা হয়।
২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন কে সরকার পতনের আন্দোলন পরিণত করার চেষ্টা করেছিলাম।কিছু সহযোদ্ধা বিক্রি হয়ে যাওয়ার কারণে পারি নি।আন্দোলন থেমে গেলে ডাকসু নির্বাচন বাতিলের দাবিতে উচ্চ আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিই ।আমি কোটা বাতিলের পরিবর্তে কোটা সংস্কার, নিরাপদ ক্যাম্পাস ও নিরাপদ হলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদের অনুমিত নিই।
চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার প্রাক্কালে আমাকে ‘গুম’ করা হয়।কেন গুম করা হয়েছিল তা আজ পর্যন্ত জানতে পারলাম না। গুমের পর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করা হয়।
দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর সুস্থ হলে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সুপারিশে পুন:ভর্তি হই। ২০২৩ সালে অনার্সের শেষ পরীক্ষা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আবারো আন্দোলন শুরু করি।২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম আওয়ামী লীগ ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করলে সরকারের সানডে – মানডে ক্লোজ করে দিমু। সত্যি গত বছরের ৫ আগস্ট সোমবার (মানডে) আওয়ামী লীগের পতন হলো।
৯)আমি সাংবাদিকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির পাশাপাশি সুপ্রিমকার্টে আদালত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করি।বিশেষ করে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই নিয়মিত কোর্টে যাতায়াত করি। ২০২৪ সালের ১০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের বটতলায় মাহে রমজান স্বাগত জানিয়ে কোরআন তেলাওয়াত আসরের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় ১৬ মার্চ ঢাবিতে কোরআন পাঠের ঘটনায় আরবি বিভাগের চেয়ারম্যানকে শোকজ করে কলা অনুষদের তৎকালীন ডিন চিঠি দেন। ওই চিঠি প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর ২৪ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির উকিল নোটিশ প্রদান করেন। তাতে প্রশাসন কিছুটা নরম হয়। এই নোটিশের সূত্র ধরেই ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরের সাথে আমার দেখা হয়।যদিও আমি ব্যারিস্টার নওশাদ কে চিনি ১/১১ এর সময় থেকে। তিনি বেগম জিয়ার মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বলেই আমি পত্রিকায় দেখেছি কিন্তু সরাসরি কখনোই দেখা হয়নি।
তিনি আমাকে ডাকলে আমি ২৭ মে রাতে কলাবাগানে তাঁর চেম্বারে গিয়ে দেখা করি। তিনি আমাকে বলেন, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ ( ডাকসু নির্বাচন নিয়ে একটি রিট আবেদন করতে চান। আমি যেন রিট পিটিশনার হই । আমি তাঁকে বললাম আমি ডাকসু নির্বাচন নিয়ে রিট করতে রাজি। কিন্তু আওয়ামী লীগের অধীনে ডাকসু নির্বাচন অতীতেও সুষ্ঠু হয়নি এবং ভবিষ্যতেও সুষ্ঠু হবে না।আমি আদালতের রায়ের কারণে ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের কথা উনাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি বললাম যে, আদালতের রায়ের কারণে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে বাধ্য করলেও সেটা আওয়ামী লীগের অধীনে কখনোই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না! আমি নিজেও ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী ছিলাম বলে আমি নিজেই ভুক্তভোগী হয়েছি।
উনি জিজ্ঞেস করলেন তাহলে উপায় কী? আমি বললাম, একমাত্র উপায় হচ্ছে আওয়ামীলীগের পতন।
উনি জিজ্ঞেস করলেন সেটা কিভাবে সম্ভব?
আমি বললাম, আমি ২০১৪ সালে কোটা সংস্কার সহ কয়েকটি দাবিতে সামাজিক আন্দোলনে গড়ে তুলে অহিংস এবং সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের পতনের জন্য আমি একটা আন্দোলনের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছিলাম। কিন্তু অতীতে বিএনপি সহ রাজনৈতিক দলগুলোর অসহযোগিতার কারণে সম্ভব হয়নি!
যেহেতু ২০২৩-২৪ সালে বিএনপি সহ বিরোধী দল গুলোর আন্দোলন ব্যর্থ , সেহেতু এবার তাদের সমর্থন আদায় করা যাবে।
আমি জুনের প্রথম সপ্তাহে মাস্টার্সে ভর্তির পরপরই এই আন্দোলন শুরু করবো।
১০) গত বছর কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিলাম:
গত বছরের ৫ জুন বিকেলে আমি আমার ডিপার্টমেন্টের সেমিনার কক্ষে বসে মাস্টার্সের ভর্তির ফর্ম পূরণ করছিলাম।আমি একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে কিছুক্ষণ পরপরই ফেসবুক,মেসেঞ্জার,ইমেইল ও হোয়াটস অ্যাপ চেক করি।
ফরমপূরণ করার মাঝখানে আমি আমার ফেসবুক চেক করার সময় হঠাৎ করেই দেখি হাইকোর্ট কোটা পুনর্বহাল করেছে!
উচ্চ আদালত থেকে কোটা পুনর্বহালের খবর শুনে আমি খুশি হয়েছিলাম! কারণ আমার দীর্ঘদিনের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করার সুযোগ হাতে এসেছে।
আমি আমার সহপাঠী এবং বামপন্থী ছাত্রনেতা বিক্রম আদিত্য কে বললাম,আমরা ২০১৮ সালে এত ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করে কোটা বাতিল করতে সরকারকে বাধ্য করলাম।কিন্তু সরকার আমাদের ধোঁকা দিয়ে আদালত কে ব্যবহার করে কোটা পুনর্বহাল করেছে!
যেহেতু আমি ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ‘আইন ও আদালত’ সেলের প্রধান ছিলাম। তাই আজ আমার দায়িত্ব এই রায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানানোর।তবে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেই আমাকে মামলার রায় দেখতে হবে।তারপর আমি হাইকোর্টে ছুটে গেলাম মামলার নথিপত্র দেখে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য।আমি একজন আদালত প্রতিবেদক হিসেবে হাইকোর্ট ডিভিশনের ১০ নাম্বার কোর্টে গিয়ে মামলার নথিপত্র দেখে
তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা কোটা পুনর্বহালের ষড়যন্ত্র রাজপথে এবং আদালতে মোকাবেলা করব।এজন্য আমি কোটা পুনর্বহাল করার সংবাদটি আমাদের ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের রাজপথের সহযোদ্ধাদের সাথে শেয়ার করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
২০১৮ সালের সহযোদ্ধারা দুই গ্রুপে বিভক্ত। নুরুল হক নুরের গণ অধিকার পরিষদ এবং ফারুক হাসান গণ অধিকার পরিষদ। দুই গ্রুপের বাইরেও আমাদের কিছু নির্দলীয় সহযোদ্ধা রয়েছে।নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ, হাসনাত , সারজিস প্রমুখ তখনো কোটা সংস্কার আন্দোলনের স্টেইকহোল্ডার নয়! কারণ ২০১৮ সালে তাদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল না!
আমি এক গ্রুপের শীর্ষ গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি আমার বন্ধু নেতা নুরুল হক নুরের সাথে প্রথমে কথা বলেছি। পরে আরেক গ্রুপের সদস্য সচিব ফারুক হাসান এর সঙ্গে আলোচনা করে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে প্রথম কর্মসূচী ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম ।
আমি হাইকোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিং করতে গিয়ে দেখি সেখানে
দেশ টিভি স হ কয়েকটি গণমাধ্যম আছে।আমি প্রথম গণমাধ্যমে প্রেস ব্রিফিং করলাম। বললাম যে,কোটা পুনর্বহালের সমস্ত ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া হবে।কোটা পুনর্বহাল করার প্রতিবাদে আমরা আগামীকাল ৬ জুন সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবো।
কর্মসূচি ঘোষণার পর আমি
আমাদের আরেক সহযোদ্ধা বিন ইয়ামিনের সাথে কথা বলেছিলাম।সে তখন ঢাকার বাইরে সাতক্ষীরায় ছিল। তাকে বললাম,তারাতাড়ি ঢাকায় আসো।
আন্দোলনের বিষয়ে রাশেদ খানের সঙ্গে কথা হয়েছিল।
এরপর আমি শিবিরের তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্র কল্যাণ সম্পাদক কাউসার আল মামুন ভাই যার সাথে ২০১৫ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় পরিচয় হয়, তার সাথে কথা বললাম।তিনিও ঢাকার বাইরে ছিলেন।
তারপর কথা বললাম আমার এলাকার দীর্ঘদিনের ইসলামী আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মী এবং চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের শিবিরের সাবেক সভাপতি আ ন ম জোবায়ের( নোমান) চাচার সাথে।তাঁকে আমি কল দিয়ে বললাম, চাচা এটা শেষ সুযোগ।এই সুযোগ আর আসবে না
।এটা কে কাজে লাগাতে হবে ।তারপর তিনি বললেন,আমার সাথে আন্দোলনের নেতা শাহজাহান চৌধুরী ভাই আছেন, তার সাথে কথা বল।আমি সালাম দিয়ে শাহজাহান ভাইয়ের সাথে কথা বললাম।তিনি আমার সম্পর্কে জেনেছেন নোমান চাচার কাছে।
আমিও তাঁকে বললাম, “আমি আপনাকে ২০০১ সাল থেকে চিনি।আপনি তখন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া- লোহাগাড়া আসনের এমপি ছিলেন।”
পরিচয় পর্ব শেষে আমি তাঁকে বললাম, এটা আমাদের কাছে একটা নতুন সুযোগ এসেছে। এটা কে কাজে লাগাতে হবে।
এরপর কথা বললাম,বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং আমার রাজনৈতিক অভিভাবক ভারতে নির্বাসিত রাজনীতিবিদ সালাহউদ্দিন আহমেদ স্যারের সঙ্গে।তাঁকে আমি বললাম, আমি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলাম।আপনি সহযোগিতা করেছিলেন এবং পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।নেতাদের অনীহার কারণে আপনি হয়তো পারেননি! এবার সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না!
৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কোটা পুনর্বহাল করার প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন করেছিলাম।
শুধুমাত্র কোটা সংস্কার আন্দোলনের বৃহত্তর স্বার্থে ২০২৪ সালের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ‘সরকার বিরোধী মামলার আসামি ‘ হওয়ার
কারণে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনুরোধে পেছনে ফিরে আসতে বাধ্য হই।
পর্দার অন্তরালে কাজ করেছি ।তবে সহযোদ্ধাদের কথা দিয়েছিলাম ২০১৮ সালের মত চরম দুর্দিন নেমে আসলে,নেতৃত্ব শূন্য হলে আমি সামনের সারিতে চলে আসবো।
গত ৫ জুন উচ্চ আদালত থেকে কোটা পুনর্বহালের
রায়ের পর কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন না
সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন তা নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়।
আপা ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছে ।তাই বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করতে চায় ছাত্রলীগের সহমত ভাইয়েরা।
এজন্য আমরা পাল্টা কর্মসূচী পালন করেছি।পরে তাদের বোধোদয় হয়েছে।৫ % কোটা রাখার পক্ষে মত দিয়েছে তাদের ই একজন।তারা সংস্কারের পক্ষে আসার পর আমরা পাল্টা কোন কর্মসূচী দিই নাই।
১১)আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোটা সংস্কারের পক্ষে অটল ছিলাম।আদালত অবশেষে সংস্কারের পক্ষে রায় দিয়েছিল।
একসাথে ছিলাম রাজপথে।আন্দোলন করতে গিয়ে আখতার হোসেন,নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং রিফাত রশীদসহ অনেকে ভিক্টিম হয়েছিল।তাদের পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়েছি।১৯ জুলাই কারফিউ জারি করার পর বিএনপির সহায়তায় আমরা কারফিউ ভেঙে রাস্তায় আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি।ঐ সময় তিন সমন্বয়ক ৯ দফা থেকে সরে গিয়ে সরকারের সাথে আলোচনায় বসে ৮ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করলে আমি ৯ দফায় অটল ছিলাম।নাহিদ ইসলামের মায়ের মাধ্যমে কৌশলে হাসনাত, সারজিস এবং হাসিব কে আমি ডিবি অফিসে ডেকে গণমাধ্যমের সামনে ৮ দফার কবর দিয়েছি।এজন্য তাদের কে আটক করা হয়েছিল।
৯ দফা থেকে চার দফা।আবার ৯ দফা থেকে এক দফা সবকিছুতেই একমত ছিলাম।এক দফার বিপক্ষে অনেকেই উল্টে গেছে।আমি উল্টায় নি।কারণ ঐটাই তো আসল দফা।
৩৬ জুলাই ৩৬ দিনের আন্দোলনে আসে নি ।দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।আলহামদুলিল্লাহ।উপরের মহান আল্লাহ পাক ই এই আন্দোলনের মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে সমস্ত রহমত বর্ষণ করেছেন। কাজেই আল্লাহ পাক ই একমাত্র মাস্টারমাইন্ড!
লেখক: সংগঠক, কোটা সংস্কার আন্দোলন (২০১৩,২০০৮ এবং ২০২৪)।
প্রধান সমন্বয়ক: আইন ও আদালত সেল, কোটা সংস্কার আন্দোলন (২০১৮ এবং ২০২৪)।
কিউএনবি/অনিমা/০৮ জুন ২০২৫, /সন্ধ্যা ৭:২২