সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:১৩ অপরাহ্ন

উম্মতের প্রতি নবীজির ভালোবাসার নানা দিক

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২২
  • ১১৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : উম্মতের জন্য মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসা ছিল পিতৃসম। তিনি সন্তানের মতোই তাদের ভালোবাসতেন। সন্তানের আনন্দে মা-বাবা যেমন আনন্দিত হন, সন্তানের কষ্টে যেমন তাঁরা কষ্ট পান, তিনিও উম্মতের আনন্দে আনন্দিত, তাদের কষ্টে ব্যথিত হতেন। পবিত্র কোরআনে নবীজি (সা.)-এর ভালোবাসার বর্ণনা এভাবে তুলে ধরা হয়েছে—‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসুল এসেছেন।

তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তার জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৮) আল্লামা সাদি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়াশীল ও স্নেহপরায়ণ। এমনকি তাদের মা-বাবার চেয়েও বেশি। এ জন্য নবীজি (সা.)-এর অধিকার সব কিছুর ঊর্ধ্বে এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনা, তাঁকে সম্মান জানানো এবং তাঁকে ভালোবাসা আবশ্যক। ’ (তাফসিরে সাদি)

ভালোবাসার নানা দিক উম্মতের প্রতি মহানবী (সা.)-এর ভালোবাসা নানাভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এখানে কয়েকটি দিক তুলে ধরা হলো—

১. প্রতি নামাজে দোয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি নামাজে উম্মতের পাপমুক্তির দোয়া করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতের আগে ও পরের এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব গুনাহ ক্ষমা করে দিন। ’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৭১১১)

২. উম্মতের জন্য সুপারিশ : কিয়ামতের দিন মহানবী (সা.) উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন এবং তাঁর সুপারিশে বহু পাপী বান্দার মুক্তি মিলবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ বলেন, প্রত্যেক নবীর জন্য একটি বিশেষ দোয়া আছে, যা কবুল হবে। এর মধ্যে সবাই তাঁদের দোয়া পৃথিবীতেই করেছেন। আর আমার দোয়াটি কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের জন্য গোপন রেখে দিয়েছি। আমার উম্মতের যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে অথচ কোনো প্রকার শিরক করেনি সে ইনশাআল্লাহ আমার এই দোয়া পাবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৭৯)

৩. উম্মতের প্রতি মমতা : উম্মতের প্রতি প্রিয় নবী (সা.)-এর চূড়ান্ত কল্যাণকামিতা ও নিখাদ ভালোবাসা নিম্নোক্ত হাদিসে প্রকাশ পায়। তিনি বলেছেন, আমার ও লোকদের উদাহরণ এমন লোকের মতো, যে আগুন জ্বালাল আর যখন তার চারদিক আলোকিত হয়ে গেল, তখন পতঙ্গ ও ওই সব প্রাণী যেগুলো আগুনে পোড়ে, তারা তাতে পুড়তে লাগল। তখন সে সেগুলোকে আগুন থেকে ফেরানোর চেষ্টা করল। কিন্তু সেগুলোকে আগুন পরাজিত করল এবং আগুনে পতিত হলো। (তেমনি) আমিও তোমাদের কোমর ধরে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু তোমরা তাতেই পতিত হচ্ছ। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৮৩)

৪. উম্মতের পক্ষ থেকে কোরবানি : রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির ইচ্ছা করলে দুটি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধূসর বর্ণের ও খাসি করা মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মতের যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়তের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অন্যটি মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানি করতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২২)

৫. উম্মতের কষ্ট লাঘব : উবাই বিন কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বনু গিফারের কুয়ার কাছে ছিলেন। এমন সময় তাঁর কাছে জিবরাইল (আ.) আগমন করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে আদেশ করেছেন, আপনি যেন আপনার উম্মতকে এক উপভাষায় কোরআন পড়ান। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কাছে তাঁর ক্ষমা কামনা করি, আমার উম্মত এর ক্ষমতা রাখবে না। তিনি দ্বিতীয়বার এসে বললেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে আদেশ করেছেন, আপনি যেন আপনার উম্মতকে দুই উপভাষায় কোরআন পড়ান। তিনি বললেন, আমি আল্লাহর কাছে তাঁর ক্ষমা কামনা করি, আমার উম্মত এর ক্ষমতা রাখবে না। এভাবে তিনি একাধিকবার অক্ষমতা প্রকাশ করতে থাকেন, যতক্ষণ না আল্লাহর পক্ষ থেকে সাত উপভাষায় কোরআন তিলাওয়াতের অনুমতি দেওয়া হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯৩৯)

৬. পরবর্তী উম্মতকে দেখার আকাঙ্ক্ষা : আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার ইচ্ছা হয় আমি আমার ভাইদের দেখব। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি বললেন, তোমরা আমার সাহাবি। আমার ভাই তারাই, যারা আমার প্রতি ঈমান এনেছে এবং আমাকে দেখেনি। ’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২৭১৮)

৭. উম্মতের কষ্টে কষ্ট পাওয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতের কষ্টে ব্যথিত হতেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে একজন রাসুল এসেছেন। তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তার জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১২৮)

আল্লাহ সবাইকে নবীজি (সা.)-এর সত্যিকার উম্মত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৮ অক্টোবর ২০২২,খ্রিস্টাব্দ/বিকাল ৩:২৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit