শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কড়াকড়ি, সর্বনিম্ন শরণার্থী গ্রহণের সীমা ঘোষণা ট্রাম্পের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৫০৬ জন শেখ হাসিনাসহ ২৬১ পলাতক আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি সংস্কার কমিশন বয়কট করা উচিত ছিল বিএনপির : আব্দুল্লাহ তাহের শার্শা বিএনপি’র আয়োজনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত আশুলিয়ায় ধামসোনা ইউনিয়ন শ্রমিক দলের লিফলেট বিতরণ  মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ গ্রেপ্তার ৭৯০ বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগের বিরুদ্ধে ইসরাইলে ব্যাপক বিক্ষোভ গণভোট ও নির্বাচন নিয়ে যে বার্তা দিলেন প্রেস সচিব আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল থেকে ৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার : ডিএমপি

জাতীয় নির্বাচনের গলার কাঁটা জুলাই সনদ

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫
  • ১৮ Time View

ডেস্ক নিউজ : জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি দিয়ে তার আলোকে আগামী সংসদ নির্বাচন এবং অতি জরুরি সংস্কারগুলো নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন ইস্যুতে দলগুলোর পরস্পরবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে সনদ বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা কাটছেই না। ফলে জুলাই সনদ যেন জাতীয় নির্বাচনের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে।

গত ২৮ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায়–সম্পর্কিত সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রধান উপদেষ্টার হাতে এই সুপারিশ তুলে দেন। মুহাম্মদ ইউনূস ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় যে সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, কমিশনের দেওয়া সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে তার হুবহু প্রতিফলন নেই বলে অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।

সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া প্রতিবেদনে বিএনপির দেওয়া নোট অব ডিসেন্টগুলো লিপিবদ্ধ না থাকায় এর সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, অবাক হয়ে আমরা লক্ষ্য করলাম—কালকে যখন ঐকমত্য কমিশন প্রতিবেদন প্রকাশ করল, নোট অব ডিসেন্টগুলো নেই। পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে, ইগনোর করা হয়েছে। এটা তো ঐকমত্য হতে পারে না। তাহলে ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন? এটা আমি বলব, জনগণের সঙ্গে একটা প্রতারণা, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও এটা প্রতারণা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদও বুধবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা কিছু সত্য আবিষ্কার করতে পেরেছেন। এত দিন তারা মনে করতেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু তারা যে সুপারিশ দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে একজন দস্তখতকারী প্রধান উপদেষ্টাও আছেন, যিনি কমিশনের সভাপতি। ফলে এটি সরকারের পক্ষ থেকেও এক ধরনের অনুমোদন বা সমর্থন।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের এমন অভিযোগের কারণে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে আরও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তাবায়নে জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোটের দাবি তুলেছে জামায়াত। কিন্তু বিএনপি বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবি ‘অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত’। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন ছাড়া বিএনপি কোনোভাবেই গণভোটের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। এদিকে নভেম্বরেই গণভোটের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দল। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) তারা ইসিতে স্মারকলিপিও দিয়েছে।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ না রাখার পক্ষেই কথা বলছে নতুন দল এনসিপি। দলটির অভিযোগ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপিই প্রথম অনৈক্যের সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে অস্থায়ী কার্যালয়ে জাতীয় যুবশক্তির আয়োজনে ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং জাতীয় নির্বাচন কোন পথে?’ শীর্ষক সেমিনারে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি ঐকমত্য কমিশনে (এনসিসি) নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে ভাইয়াগিরি করার জন্য। নতুন বাংলাদেশে এমনটি করতে দেওয়া হবে না। ঐকমত্য কমিশনে বিএনপি কিছু করতে চাইলে তরুণরা প্রতিহত করবে।’

তবে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলেও আপত্তি নেই এনসিপির। সবকিছু মিলিয়ে সরকারের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দিয়েছে, যা ফুটে উঠেছে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্যে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক নিয়ে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তিগুলোর মধ্যে এই বিরোধ হতাশাব্যাঞ্জক। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় এবং গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ এত দৃঢ় এবং পরস্পরবিরোধী। কী বলব? যে উত্তেজিত ভূমিকা নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো, যারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ছিল, আপনারা যদি এরকম একটা ভূমিকা নেন তাহলে সরকার কী করবে? আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না। রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এতদিন আলোচনার পর যদি আপনাদের ঐকমত্য না আসে, এখন আমরা আসলে কীভাবে কী করব, এটা নিয়ে সত্যি আমাদের একটু চিন্তা করতে হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বলেছেন, ছোটখাট নয়, বরং বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে প্রস্তুত ও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে বড় শক্তি কাজ করবে এবং এই নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। ছোটখাট নয়, বরং বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হবে এবং ‘হঠাৎ করে আক্রমণ’ চলে আসতে পারে। তবে, যত ঝড়ঝাপ্টাই আসুক না কেন, তা অতিক্রম করে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো একটা নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য।

এদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন কোনো কারণে অনুষ্ঠিত না-ও হতে পারে, কিন্তু ‘জুলাই সনদ’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং এটি সবার আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। ডা. তাহের বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মনে করে যে, একটি সরকারি আদেশের মাধ্যমে এর আইনি ভিত্তি দেওয়া প্রয়োজন এবং পরবর্তীতে এর ওপর একটি গণভোট আয়োজন করা দরকার।

নানা জল্পনা-কল্পনা ও টানাপোড়েনের অবসান ঘটিয়ে শেষমেশ বহুল আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে গণভোটের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে। সেই ভোট কখন হবে, এ সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর যারা সনদে সই করেনি, তারা এই সময়ের মধ্যে সই করতে পারবে। জুলাই সনদ প্রণয়নের চেয়ে সনদ কার্যকরের পদ্ধতি নিয়েই জটিলতা বেশি। সেইসঙ্গে আইনগত ভিত্তি দিয়ে জুলাই সনদের আলোকে আগামী সংসদ নির্বাচন এবং অতি জরুরি সংস্কারগুলো নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন ইস্যুতে দলগুলোর পরস্পরবিরোধী কঠোর অবস্থানের কারণে সনদ বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা কাটছেই না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতে জুলাই সনদে সংস্কারের ৮৪টি সিদ্ধান্ত রয়েছে। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনসহ ৯টি মৌলিক সংস্কারে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) রয়েছে। দলটি বলেছে, নির্বাচনে জিতলে এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করা হবে কি না, তা সংসদই সিদ্ধান্ত নেবে। 

এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান হলো, সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোটের পর আগামী সংসদে বাস্তবায়ন হবে জুলাই সনদ। আর জামায়াতে ইসলামীর দাবি, সংবিধান আদেশে সনদ কার্যকর করে নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। গণভোটে নোট অব ডিসেন্ট রাখা যাবে না। গণভোটে অনুমোদিত সনদের পুরোটা বাস্তবায়ন করতে হবে আগামী সংসদে।

একই দাবি জানানো এনসিপির অবস্থান হলো, সংবিধান সংস্কারে আগামী সংসদের প্রথম অধিবেশনের কনস্টিটুয়েন্ট (গাঠনিক) ক্ষমতা থাকতে হবে। দলটির মতে, এসব ধাপ নিশ্চিত না করে স্বাক্ষরের নামে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা রয়েছে। মূলত জুলাই সনদের সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। একদিকে বিএনপিসহ তাদের সমমনা কিছু দল চায় প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন হবে জাতীয় নির্বাচনের পর নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচন। ফলে কমিশনের লক্ষ্য কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।

সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মোটাদাগে ছয়টি সুপারিশ পেয়েছিল কমিশন। সেগুলো হচ্ছে—পূর্ণাঙ্গ সনদ বা তার কিছু অংশ নিয়ে গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়ন, গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, ত্রয়োদশ সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সনদের বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এই মর্মে মতামত চাওয়া যে, অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও সই করেছেন এই সনদে। গত ১৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সনদে সই করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৪টি দল ও জোটের নেতারা। বাকি দলগুলো চাইলে পরেও সনদে সই করতে পারবে। তবে কীভাবে সনদ বাস্তবায়ন করা হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। ফলে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা থেকেই গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এদিকে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের শীর্ষ দুই নেতা যোগ দিলেও সেদিন সনদে স্বাক্ষর করেননি তারা। পরে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে গণফোরাম। জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ২৪টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও এর আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা না পাওয়া এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি ঠিক না করায় সই করেনি এনসিপি। একই দাবি করে আসা জামায়াতে ইসলামী আগের দিন পর্যন্ত সনদে সই করার বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট না করলেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে। এরপর দলটি বলেছে, বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে তা হবে জাতির সঙ্গে গাদ্দারি।

এনসিপি ছাড়াও ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া পাঁচটি দল জুলাই সনদে সই করেনি। অন্যদিকে, সনদ স্বাক্ষরকে বড় অগ্রগতি আখ্যা দিয়ে বিএনপি বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি তারা।

তিন ভাগে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ

জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে সরকারকে তিনটি ভাগে সুপারিশ করেছে ঐকমত্য কমিশন। 

যেসব বিষয় সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয়, তা সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে এবং সুপারিশের অনেক বিষয় আছে, যা অফিসের আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের কোনো মতভিন্নতাও নেই। তাই এ দুটি বিষয় অধ্যাদেশ এবং অফিস আদেশের মাধ্যমে অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করেছে কমিশন। সংবিধান সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে আইনি ভিত্তি প্রদান এবং বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করার জন্যে সংবিধান সংশ্লিষ্ট ৪৮টি বিষয়ের ব্যাপারে দুটি বিকল্প প্রস্তাব সুপারিশ করেছে ঐকমত্য কমিশন।

প্রস্তাব দুটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সরকার জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এ সন্নিবেশিত সংবিধান সংশোধনের বিষয়গুলো কার্যকর করার জন্য ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ জারি করবে। আদেশ এবং এর তফসিলে উল্লিখিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহ গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। আদেশ জারির পর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে, যা সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। যেখানে একটি প্রস্তাবে জাতীয় সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পাশাপাশি একইসঙ্গে একটি সংবিধান সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক একটি পূণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। গণভোটে অনুমোদন পাওয়া সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদের সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে।

অন্য প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে এবং সংস্কার কার্যক্রম শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম সমাপ্ত হবে। জানতে চাইলে ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে, তা সুপারিশ করা হয়েছে। শিগগিরই একাধিক বিকল্প দেওয়া হবে। সেখান থেকে সরকার ঠিক করবে কীভাবে সনদ বাস্তবায়ন করা হবে।

এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি। এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমার জানা মতে, এনসিপি ও তিন-চারটি বাম দল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি। আমি বলব না যে স্বাক্ষর করেনি। স্বাক্ষর করার সুযোগ আছে। আশা করি, ভবিষ্যতে তারা স্বাক্ষর করবে। তাতে করে আগামী নির্বাচনে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না।

স্বাক্ষর না করা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, হতে পারে তাদের কিছু দাবিদাওয়া আছে, সেগুলো সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। একপর্যায়ে তারা স্বাক্ষর করবে বলে বিশ্বাস করি। আর গণতন্ত্রে সবাই একমত হবে এমন তো নয়। ভিন্নমত থাকতেই পারে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশ একটা ইতিবাচক অবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছি। একটা স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, নির্বাচনের মধ্যদিয়ে নতুন করে নির্বাচিত কোনো শাসক যাতে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী না হয়ে ওঠে, সেভাবে জনপ্রশাসন, মাঠপর্যায়ের প্রশাসন, জুডিশিয়ালি ব্যবস্থা, ইলেক্টোরাল সিস্টেম, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারের ছয়টি অরগানকে সাজানো হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও অনৈক্য দেখা দেওয়ার কারণে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার দিকে গেলে এই সংশয় কেটে যাবে।

 

 

 

কিউএনবি/আয়শা/৩১ অক্টোবর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৬:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

November 2025
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit