শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৭ অপরাহ্ন

ব্রহ্মপুত্র নদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ করছে চীনের

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫
  • ১ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  : তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের ইয়ারলুং জাংবো নদীটি ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নদ নামে পরিচিত। দুই দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই নদের ওপর নির্ভরশীল। হিমালয়ের পাদদেশের সেই নদীর ওপর ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেছে এশিয়ার অন্যতম পরাশক্তি চীন।

জানা গেছে, শনিবার (১৯ জুলাই) এই বাঁধ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তিব্বত ও ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীতে ইয়ারলুং জাংবো নদীতে মেগা-বাঁধের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছে চীন। মেগা-বাঁধের এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং উপস্থিত ছিলেন।

২০২০ সালের নভেম্বরে ইয়ারলুং জাংবো নদীতে ওই জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানায় চীন। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে তিব্বতের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় বেইজিং।

২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে তিব্বতে এই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজের গতি দ্বিগুণ করেছে বেইজিং। যদিও পরিবেশবাদী এবং তিব্বতের মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইয়ারলুং জাংবো নদীর উৎসমুখে এই বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে।

তিব্বতের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় নিংচি এলাকায় এই বাঁধের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিব্বতের স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যান্য অঞ্চলেও সরবরাহ করা হবে।

ইয়ারলুং জাংবো নদীতে এই বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হলে তা চীনের মধ্যাঞ্চলের ইয়াংসি নদীতে নির্মিত রেকর্ড গড়া ‘থ্রি গর্জেস বাঁধকেও’ ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের ভাটি অঞ্চলের প্রবাহে কোটি কোটি মানুষের ওপর ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে।

চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া বলেছে, এই প্রকল্পে পাঁচটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মোট ব্যয় প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৭.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) হতে পারে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত বলেছিল, তিব্বতের এই প্রকল্প নিয়ে চীনের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত বলেছে, তারা তিব্বতে চীনা বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

ওই সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, উজানে কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রের নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর স্বার্থ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা চীনকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

পরে ডিসেম্বরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই প্রকল্পের কারণে নিম্নপ্রবাহে কোনও ‘নেতিবাচক প্রভাব’ পড়বে না এবং চীন নদীর নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে।

নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর উদ্বেগের পাশাপাশি পরিবেশবিদরাও চীনের এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। পরিবেশবিদরা বলেছেন, এমন মেগা প্রকল্প পরিবেশগত দিক থেকে সংবেদনশীল তিব্বত মালভূমিতে অপূরণীয় ক্ষতি করতে পারে।

থ্রি জর্জ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় চীন ১৪ লাখের বেশি মানুষকে জোরপূর্বক স্থানান্তরিত করেছিল। ইয়াংজি নদীর তীরবর্তী এলাকার চেয়ে ইয়ারলুং জাংবো নদী এলাকা কম ঘনবসতিপূর্ণ।

এর আগে, চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়ারলুং জাংবো বাঁধ তিব্বতের মিডগ কাউন্টিতে নির্মাণ করা হবে; যে শহরের জনসংখ্যা ১৪ হাজার। এই বাঁধ নির্মাণে কতসংখ্যক মানুষ স্থানান্তরিত হতে পারেন; সেবিষয়ে কোনও জবাব দেয়নি বাঁধটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না।

২৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের তিব্বত মালভূমি প্রাকৃতিক সম্পদের এক আধার এবং বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। হিমবাহ গলে এবং পাহাড়ের ঝর্ণা বয়ে নেমে আসা মিঠাপানির প্রবাহ ভারত, চীন ও ভুটানের প্রায় ১৮০ কোটি মানুষকে পানীয় জলের জোগান দেয় ইয়ারলুং জাংবো বা ব্রহ্মপুত্র।

সূত্র: এএফপি।

কিউএনবি/অনিমা/১৯ জুলাই ২০২৫,/রাত ৮:৩৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit