শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
হাসপাতাল থেকে মাকে বাসায় নিলেন তারেক রহমান ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে বড় চুক্তি বাংলাদেশের ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার দিনক্ষণ জানাল জাতিসংঘ মনিরামপুরের সমাজসেবক জামাল হোসেনের ইন্তিকাল মনিরামপুরে ৫১ কৃতি শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা চৌগাছায় বাওড় দখল নিয়ে বিএনপির দুগ্রুপের সংঘর্ষ আহত ১০, মোটরসাইকেল ও পিস্তল-গুলি উদ্ধার কোকোর ১০তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আশুলিয়ায় দোয়া ও মিলাদ নওগাঁর পত্নীতলায় যায়যায়দিন ফ্রেন্ডস ফোরামের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত দুর্গাপুরে সিপিবি‘র মানববন্ধন শিক্ষকদের পদযাত্রায় পুলিশের বাধা, শাহবাগে অবস্থান

‘অসময়ে’ হারিয়ে গেল প্রিয়তমা, খোঁজে ভ্যানে শহর চষছেন সবুজ

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০২৪
  • ১০৩ Time View

ডেস্ক নিউজ : উসকুকুসকু দাঁড়ি। অবিন্যস্ত পোশাক। আর রোদে পুড়ে যাওয়া ফ্যাকাশে মুখজুড়ে অজস্র চিন্তার ভাঁজ। চল্লিশোর্ধ্ব নুর করিম সবুজ শরীরের সব শক্তি একজোট করে ক্লান্তহীনভাবে টেনে নিয়ে চলেছেন একটি ভ্যান। সেই ভ্যানের হাতলের সামনে ঝুলে থাকা পলিথিনে মোড়ানো কাগজে আটকে যায় চোখ!

ওই কাগজের ওপরিভাগে এক চল্লিশ ছুঁইছুঁই নারীর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছবি। তারই দুপাশে ভূপেন হাজারিকার সেই অমর গানের প্রথম লাইন-‘মানুষ মানুষের জন্য’। নিচে বড় হরফে লেখা ‘হারানো বিজ্ঞপ্তি’। তারই তলায় ‘মহিলাটি একজন প্রতিবন্ধী ও পাগল’, সন্ধান পেলে যোগাযোগ করুন (০১৪০২৩২৩৮৯০)।’

হারিয়ে যাওয়া ছবির এই নারী সবুজেরই স্ত্রী-ইয়াসমিন আক্তার। গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) বিকেলে নগরীর চান্দগাঁওয়ের মৌলভি পুকুর পাড়ের বাসা থেকে আচমকা উধাও হয়ে যান এই নারী। মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারী আগেও বহুবার এভাবে ঘরত্যাগ করেছেন। কিন্তু তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় হয় পুলিশের ভূমিকায় না হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-ফেসবুকের সহায়তায় বারবার সবুজ ফিরে পেয়েছেন প্রিয়তমাকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সবকিছু যেন থমকে আছে। এখন ইন্টারনেট কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বেশ কয়েকদিন একেবারেই অকেজো ছিল। ফলে থানায় গিয়েও সবুজ করতে পারেননি সাধারণ ডায়েরি (জিডি)। নেটের আসা-যাওয়ার এই খেলায় ফেসবুকে স্ত্রী হারানোর দুঃখের গল্প তুলে ধরা তো ‘দিবাস্বপ্ন’

বৃহস্পতিবারের (২৫ জুলাই) দুপুরে নগরীর মুরাদপুর মোড়ে পাওয়া গেল সবুজকে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই কব্জিটা চেপে ধরে কেঁদে ফেললেন সবুজ। অনুরোধের সুরে বললেন, ‘আমার স্ত্রীর হারিয়ে যাওয়ার কথা একটু তুলে ধরুন। ও মানসিক প্রতিবন্ধী হলেও আমার সামনে থাকতো, ভালো লাগতো। জলজ্যান্ত একটা মানুষ সঙ্গেই ছিল, আর হঠাৎ কোথাও নেই। কষ্টে বুকটা ফাঁপা হয়ে আছে। আমি যেকোনোভাবেই তাঁকে ফিরে পেতে চাই।’

২০০০ সালে ইয়াসমিন আক্তারকে বিয়ে করেন সবুজ। শুরুর দিকে বেশ ভালোই ছিলেন ইয়াসমিন। কিন্তু বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাঁর মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এরপর বহু চিকিৎসকের শরণ আর অগুণিত ওষুধ খাইয়েও সুস্থ করা যায়নি ইয়াসমিনকে। এর মধ্যেই এই দম্পত্তির ঘর আলো করে ২০০৫ সালে জন্ম নেন মেয়ে জান্নাতুল নাইমা। শুরুর দিকে সবুজ গাড়ির গ্যারেজে কাজ করতেন। সেখানে ভালো বেতনও পেতেন। কিন্তু স্ত্রী বারবার হারিয়ে যান বলে তার কাছাকাছি থাকতে ভ্যান কিনে ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রি শুরু করেন। স্ত্রীকে চোখে চোখে রাখতে বাসার সামনেই সবজি বিক্রি করে আসছিলেন সবুজ।

কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যার কোনো এক সময়ে মেয়ে আর স্বামীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন ইয়াসমিন। তখন বাসার অদূরে বহদ্দারহাটে চলছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষ। ফলে পুরো এলাকাজুড়ে ছিল থমথমে পরিবেশ। এর মধ্যেই ভ্যান নিয়ে স্ত্রীর খোঁজে বেরিয়ে পড়েন সবুজ। রাতভর খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে যান চান্দগাঁও থানায়। তবে সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা সবুজকে নেট না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে নেট আসলে জিডি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিদেয় করে দেন। তারপর থেকে স্ত্রীর খোঁজে পুরো শহর চষে বেড়াচ্ছেন সবুজ। মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষজনকে বলছেন, তাঁর স্ত্রী দেখতে কেমন, সন্ধান পেলে যেন ফোন করেন।

সবুজ বলেন, ‘আমার মেয়ে ও স্ত্রীর আমি ছাড়া কেউই এই পৃথিবীতে নেই। তিন বছর আগে আমার শাশুড়ি মারা যাওয়ার পর থেকে আমি আরও বিপদে পড়েছি। কেননা মেয়ে স্কুলে যায়। শাশুড়িই ইয়াসমিনকে দেখে রাখতেন। কিন্তু এখন তিনি মারা যাওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে মা হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে মেয়েও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এখন আমিই ওর বাবা, আমিই ওর মা।’

সবুজের বিশ্বাস নেট পুরোদমে চালু হলে তাঁর স্ত্রীর খোঁজ পাবেন। বলেন, ‘আগেও বহুবার ইয়াসমিন হারিয়ে গিয়েছিল। তখন ফেসবুকের সহায়তায় অনেকবার পেয়েছি। এখন তো ছবি ফেসবুকে দিতে পারছি না। নেট চালু হয়ে গেলে পরিচিত সবাইকে বলব ফেসবুকে দিতে। আপনারাও প্লিজ তুলে ধরুন।’ বলার সময় সবুজের চোখে যেন লেপে ছিল অদ্ভুত শূন্যতা।

কথা শেষ হতেই আবার ভ্যানের প্যাডেলে পা রাখেন সবুজ! যাওয়ার আগে এক বুক হাহাকার নিয়ে ভেজা কণ্ঠে শুধু বললেন, ‘জানি না কোথায় অনাদরে পড়ে আছে আমার বড় আদরের ধন!’ সবুজের চোখের পানি সংক্রমিত হয় আশপাশের মানুষের চোখেও। তাঁরা বলতে শুরু করেন, ‘প্রিয়জনকে হারানোর বেদনা এমনই হয় হয়তো!’

 

কিউএনবি/আয়শা/২৬ জুলাই ২০২৪,/বিকাল ৪:৪৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

January 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit